গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
Grow With Nazmin ☑️
২৪ জুল, ২০২৫
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সর্তকতা সম্পর্কে প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলাদের জানা
জরুরী।আপনি যদি গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিক অবস্থায়
থাকেন তাহলে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল ।
এই সময় ভ্রুণ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মহিলাদের শরীর ও নানারকম হরমোনার পরিবর্তন
হয়। আজকের আর্টিকেলে গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের সতর্কতা এবং এই সময় খাদ্য
তালিকা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় আপনাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরবো।
পেইজ সূচিপত্র : গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সর্তকতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সর্তকতা প্রত্যেকটি নারীর জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ সময়ে আপনাকে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।প্রথমে ডাক্তার
নির্বাচন করুন।ডাক্তার নির্বাচন করার সময় মাথায় রাখবেন প্রয়োজনের ডাক্তারের
সাথে যোগাযোগ করা যাবে কিনা, আপনার বাসা থেকে ডাক্তারের চেম্বারের দূরত্ব কতটুকু
এ সকল বিষয়। যেহেতু আপনি অন্তসত্ত্বা তাই এসময় বেশি চলাচল করতে পারবেন
না। ডাক্তারের কাছে অল্প সময়ে যেন পৌঁছানো যায় সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন হয় বমি ভাব মাথা
ঘোরানো কিছু খেতে না পারা হতে পারে তবে সবাই যে একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাবে
বিষয়টি এমন নয়। কারো ক্ষেত্রে এ লক্ষণগুলো দেখা যায় না আবার কারো কারো
ক্ষেত্রে কখনো কখনো এ লক্ষণগুলো দেখা যায়। এমন কিছু হলে ভয় পাবেন না বা না হলেও
ভয়ের কোন কারণ নেই। বেশি বমি হলে দেব পানি খেতে পারেন। আর মাথা ঘুরালে শুয়ে
পড়ুন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
সন্তান গর্ভে ধারণ করার পর শরীরে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটে যেহেতু সন্তান
জরায়ুতে ধারণ করা হয় অবস্থান থাকে প্রসব নালীর উপরে তাই বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে
সাথে জরায়ু প্রসবের নালীর উপর কিছুটা চাপ ফেলে তাই প্রসারের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে
যাবে। সমস্যা প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাসে প্রবল থাকে। এ সময় অনেক
অন্তঃসত্তা নারীর রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে রক্ত চাপ কমেও
যেতে পারে। সেই সাথে দেখা দিতে পারে সুগারের সমস্যা। তাই গর্ভধারণের পরপর
ডাক্তারের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা করে দেখবেন সবকিছু স্বাভাবিক আছে কিনা। এমন কিছু
সমস্যা দেখা দিলে নিয়মিত চেকআপের মধ্যে থাকতে হবে।
জ্বালাপোড়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে মায়ের। মায়ের পেট খালি হতে এবং
খাবার হজম হতে অন্য নারীদের তুলনায় বেশি সময় লাগে। গর্ভস্থ বাচ্চার খাবার হতে
পুষ্টি গ্রহণ করতে সময় লাগে একটু বেশি। এই কারণটি গর্ভবতী নারীর জন্য হয়ে ওঠে
কষ্টের কারণ। এর ফলে গর্ভবতী নারী শিকার হতে পারেন বুক জ্বালাপোড়া কোষ্ঠকাঠিন্য।
তবে এ ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করলে সমস্যার সমাধান
হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে গর্ভপাত এর ঝুঁকি খুব বেশি থাকে তাই এই সময় ভারী কাজ
করতে যাবেন না।এমন কোন খাবার খাবেন না যা বাচ্চার জন্য ক্ষতি হয় এই সময় পেঁপে
আনারসের সাথে কাঁচা ও আধা সিদ্ধ প্রোটিন মাংস দিয়ে এসব পরিহার করে চলতে হবে।
প্রোটিন ভালো করে রান্না করে তবেই খেতে হবে। এই জাতীয় খাবারও পরিহার করতে হবে।
প্রথম তিন মাস অনেকে খেতে পারে না তবুও বাচ্চার কথা চিন্তা করে যতটা সম্ভব
স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চেষ্টা করবেন।ঘুমের সময় বাড়িয়ে দিন। দিনে ৮ থেকে ১০
ঘণ্টা করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।এছাড়া সারা দিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে হালকা
বিশ্রাম নিতে পারেন। নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন। উত্তেজিত হবেন না
উদ্বেগ হয় এমন কিছু করবেন না।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ান এন্ড গাইনোকোলজিস্ট এর ফলাফলে দেখা যায় গর্ব
অবস্থায় প্রথম তিন মাসে মা ও শিশু উভয়ের সুস্থতার জন্যই হলে ফোলেট আয়রন ওমেগা
3 ফ্যাটি অ্যাসিড ভিটামিন বি১২ এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত
প্রয়োজন।যেহেতু গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাত ও অন্যান্য গর্ভকালীন জটিলতার ঝুঁকি বেশি
থাকে তাই প্রথম ত্রৈমাসিক সময়ে মাকে সবথেকে বেশি যত্নবান হতে হবে নিজের
খাদ্যাভ্যাস ও বিশ্রামের প্রতি।
তবে শুধু গর্ভকালীন সময় নয় মা হওয়ার জার্নিটা শুরু হওয়া উচিত
গর্ভধারণের বা কনসিভ হওয়ার ৬ মাস আগে থেকে মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
উচিত।পরীক্ষা নিরীক্ষার পাশাপাশি ঠিক সেই সময় থেকে জিংক, আয়রন, ফলিক
অ্যাসিড এই তিনটি পুষ্টি উপাদান গর্ভবতী মায়ের খাদ্যাভাসে থাকতেই হবে।
এই সময় সন্তানের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই গর্ভবতী মায়ের
রোজকার খাদ্য তালিকায় থাকবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ডাল সয়াবিন বাদাম মিষ্টি
আলু গাজর মিষ্টি কুমড়া লাল শাক সামুদ্রিক মাছ, ডিম রেডমিট ড্রাই ফ্রুটস গাড়ো
সবুজ রঙের শাকসবজি গম অর্থাৎ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ও ফল।
প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানীয় তবে অবশ্যই এই সময়ে আনারস কাঁচা পেঁপে
টেস্টিং সল্ট অপ্রস্তরিত দুধ কাঁচা শাকসবজি আধা সিদ্ধ ডিম বা মাংস অ্যালকোহল
সোডা ওয়াটার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মনে রাখবেন মা হওয়ার পুরো জার্নিতে আপনার চাহিদার অতিরিক্ত কোন খাবার
খাওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র পুষ্টি জাতীয় খাবারের চাহিদা আপনি যদি
মিটিয়ে থাকেন তাহলে আপনি পারবেন অতিরিক্ত জন্য না বৃদ্ধি করেও গর্ভস্থ
শিশুকে ও আপনার নিজেকে সুস্থ রাখতে।
প্রকৃতপক্ষে মা হওয়ার জার্নিটা শুরু হওয়া উচিত গর্ভধারণের ৩ থেকে ৬ মাস পূর্বে
থেকেই। কনসিভ করার ৩ থেকে ৬ মাস আগে থেকে মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।তার
সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা বা কোন স্বাস্থ্যগত জটিলতা আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করে দেখে নেওয়া উচিত। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি ঠিক সেই সময় থেকেই
জিঙ্ক,আয়রন,ফলিক এসিড এই তিনটি পুষ্টি উপাদান গর্ভবতী মায়ের খাদ্যাভাসে
থাকতেই হবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের সর্তকতায় যা করণীয় তা হল
নিয়মিত ফলিক এসিড খেতে হবে
চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে
ভারী জিনিস বা ভারি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এই সময় গর্ভপাতের
ঝুঁকি বেশি থাকে।
প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানীয় পান করতে হবে।
ধূমপান বা অ্যালকোহলের অভ্যাস থাকলে পরিত্যাগ করতে হবে।
এই সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ দরকার। বেশি হাঁটাচলা নয়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ উদ্বেগ শারীরিক ক্ষতি কারণ হতে পারে তাই
মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।
এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া যাবেনা।
সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সব সময় নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
মাথা ঘুরানো,বমি ভাব,স্তনে ব্যথা অরুচি হতে পারে যাতে ঘাবড়ে যাওয়ার
কিছু নেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
এই সময় ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ তাই ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
এই সময় যেহেতু গর্ভপাতের ঝুঁকি তাই সহবাস এড়িয়ে চলুন।
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সর্তকতা প্রত্যেকটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্যই
গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখা
দিতে পারে। লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই যে আপনি গর্ভবতী বিষয়টা এমন না আবার না দিলেই
যে গর্ভবতী নন বিষয়টি এমন নয় সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রেগনেন্সি টেস্ট করা
খুবই জরুরী। যেহেতু প্রথম মাস গর্ভাবস্থার একদম শুরুর দিকে তাই নিশ্চিত হওয়ার
জন্য প্রেগনেন্সি টেস্ট করানো জরুরী।গর্ভাবস্থায় প্রথম সপ্তাহের দিকে যে লক্ষণ
গুলো দেখা দিতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলো।
এই সময় হজমে গন্ডগোল, পেটে অস্বস্তি পেট ফাঁপা সমস্যা দেখা দেয়।
স্তনে ব্যথা বা ভারী অনুভূতি হওয়া। গর্ভধারণ করলে শরীরের হরমোনের পরিবর্তন
হয় তাই স্তনে এই পরিবর্তন আসে।
এই সময় ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভূত হয়
অনেকের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকেই যোনিপথ দিয়ে হালকা
বাদামি রঙের রক্তপাত হয়।
মুড সুইং হাওয়া।
পেটে ক্রাম বা খিল ধরা।
বিশেষ কোনো খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা অনিহা সৃষ্টি হওয়া
গর্ভধারণের পর পরই ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বিশেষ
হরমোনের ওভাবে তলপেটে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় কিডনিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়
এবং প্রসাবের চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু এই ঘনঘন প্রস্তাবের সাথে যদি ব্যথা হয়
বা প্রসাবের জ্বালাপোড়া হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বমি করা ও বমি বমি ভাব। আগে ধারণা করা হতো প্রেগনেন্সিতে বমি করা ও বমি
ভাব কিছুটা দেরিতে আসে। কিন্তু ২০২১ সালে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ার্ক
এর করা এক গবেষণায় দেখা যায় এই লক্ষণটা একদম শুরুর দিকে দেখা দিতে পারে।
ডিম্বানু ফুটে বের হওয়ার ৮ দিনের মাথায় কারো কারো লক্ষণটা দেখা
দেয়।যাদের ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণটা একটু আগে দেখা দেয় আবার যাদের
বয়স বেশি তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ একটু পরে দেখা দেয়।
স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ক্লান্তি। এটা মাসিক মিস হওয়ার আগেই
গর্ভধারণের এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনি খেয়াল করতে পারেন।
গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে ঘ্রাণ শক্তি আগের চাইতে বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থার শুরু দিকে অনেকের খুব মাথা ব্যথা করে হরমোনের পরিমাণ
হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে তলপেটে ব্যথা হওয়ার কারণ
গর্ভধারণের প্রথম দিকে তলপেটে ব্যথার দুটো কারণ হতে পারে। এ দুটো উত্তরের
মধ্যে একটা উত্তর আপনাদের কাছে ইতিবাচক মনে হবে আরেকটি উত্তর নেতিবাচক মনে হতে
পারে। কারণটি হল ইউট্রাস এর ভিতরে ইউট্রাসের ভিতরে ইমপ্লান্টেশন হওয়ার পর যে
পরিবর্তনগুলা ঘটতে থাকে সেটাকে সাপোর্ট করার জন্য ইউ ট্রাস্ট নিজে নিজে সংকুচিত ও
প্রসারিত হয়। ইউ ট্রাস্ট বা জরায়ুর আশেপাশে যে মাসেলস বা লিগামেন্ট গুলো থাকে
নিজেকে শিথিল করে। কারণ এই সময় জরায়ুটা আস্তে আস্তে সেপ আকারে পরিবর্তন ঘটাতে
থাকে। এইরকম পরিবর্তন ঘটানোর জন্য জরায়ুটা যে অবস্থাতে তলপেটে সেখানে আকার
পরিবর্তন হওয়ার জন্য সেখানে অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ গুলো কিছুটা চাপ অনুভব করে তার
জন্য অল্প পরিমাণে তলপেটে ব্যথা বা ক্রাম হতে পারে।
তলপেটের এই ব্যথা খুব স্বাভাবিক অল্প পরিমাণের এবং ক্ষণস্থায়ী। দ্বিতীয়
যে কারণটা রয়েছে সেটা হল অনেক সময় হয় ফিটাস বা ভ্রূণ বা যে কনসেপশন আপনার
হয়েছে সেটার মধ্যে কোন সমস্যা আছে যেটা শরীর অটোমেটিক্যালি বের করে দিবে বা
প্রেগনেন্সি টাকে কন্টিনিউ করবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভধারণের ২০/২৪
সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে ক্রোমোজোমাল প্রবলেম। কিছু
ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রেগনেন্সি টা ঠিকঠাক নয় শরীর থেকে বের হয়ে যাবে
সেক্ষেত্রে এক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা টা অনেক তীক্ষ্ণ হয় অনেকটা জায়গা জুড়ে হয়
দীর্ঘস্থায়ী হয় যেই ব্যথাটা আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন সেটা স্বাভাবিক
নয়।
গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসের সর্তকতা
গর্ভাবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে কোন ঝুঁকি থাকতে পারে।গর্ভাবস্থায়
প্রথম তিন মাসের সতর্কতা যেমন প্রত্যেকটি মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শেষের
তিন মাসেও সতর্কতা অবলম্বন করা তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার ৩২ সপ্তাহ দিকে
চিকিৎসকরা আল্ট্রাসনো করে বাচ্চার ওজন ও বাচ্চার পানি সবকিছু দেখে থাকে। এই সময়
যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে একজন গর্ভবতী মহিলা তার স্বাভাবিক কাজকর্ম খাওয়া
দাওয়া যেভাবে চলছিল এভাবেই চালাবে।
তবে যদি দেখা যায় বাচ্চার ওজন কিছুটা কম আছে তখন মাকে আমিষ বা
প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বাচ্চার ওজন বাড়ানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ
নিতে হবে।
৩৭ সপ্তাহ থেকে মায়েদের কিছু ব্যায়াম ডাক্তাররা শিখিয়ে দিয়ে থাকে সেগুলোও
নিয়মিত বাসায় করতে হবে যেন তার ডেলিভারিটা নরমাল বা স্বাভাবিক হয়।
তৃতীয়তঃ এই সময়ে মায়েদের যেসব ঝুঁকি হতে পারে যেমন হঠাৎ করে পানি
ভাঙতে পারে হঠাৎ করে ব্লিডিং দেখা দিতে পারে অথবা বাচ্চার নড়াচড়া কম অনুভব
করতে পারে। করে মনে হতে পারে ব্যথা বা লেবার পেইন উঠে গেছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই
দ্রুত ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে।
কারো কারো ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা করে চোখে ঝাপসা দেখে বমি ভাব হয় এগুলো
এক একটি বিপদ সংকেত। এই সংকেত গুলো শেষ তিন মাসে যে কোন সময় হতে পারে।
এই সময় বাসা থেকে হসপিটালে যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতির দরকার এবং
হসপিটাল থেকে বাসার দূরত্ব অনুযায়ী আগেই যানবাহন ঠিক করে রাখতে হবে যেন কোন
ইমারজেন্সিতে দ্রুত হসপিটালে চলে আসা যায়।
কিছু কিছু মায়ের পুরো প্রেগনেন্সিতে রক্তশূন্যতা থাকে তাদের ক্ষেত্রে
ডেলিভারির সময় বা হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হলে ব্লাড লাগতে পারে তাই এই সময় আগে
থেকেই একজন বা দুজন ব্লাড ডোনার ঠিক করে রাখতে হবে।
এবং এই সময় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাচ্চার নড়াচড়া গণনা করা।১২
ঘন্টায় অন্তত দশবার নড়াচড়া করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা। এ সময় যদি
নড়াচড়া কম অনুভূত হয় বা ১০ বারের কম হয় ১২ ঘণ্টায় সেক্ষেত্রে
চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ওষুধ
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসে যেসব ওষুধ দেওয়া হয় তার মধ্যে অতি পরিচিত
একটি ওষুধ হচ্ছে ফলিক অ্যাসিড। ফলিক এসিড হচ্ছে একটা ভিটামিন। ফলিক এসিডের অনেক
গুরুত্ব রয়েছে। চিকিৎসকরা প্রি প্রেগনেন্সি পিরিয়ড থেকেই অর্থাৎ গর্ভধারণের
তিন মাস আগে থেকেই ফলিক এসিড ও জিংক সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এবং
ফলিক এসিড প্রেগনেন্সির প্রায় তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত নিয়মিত সেবন করতে
হয়। গর্ভকালীন সময়ে ফলিক এসিডের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
অনেক সময় দেখা যায় ফলিক এসিডের ঘাটতির জন্য বাচ্চাদের জন্মগত ত্রুটি
হয়ে থাকে। তাই বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি এড়াতে প্রি প্রেগনেন্সি সময় থেকে
গর্ভধারণের তিন মাস পর্যন্ত ফলিক এসিড সেবন করার পরামর্শ ডাক্তাররা দিয়ে
থাকে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আয়রন। আইরন মায়ের সুস্থতার জন্য একটা বেবির
গ্রোথের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকরা সাধারণত প্রেগনেন্সির তিন মাস
সময় থেকে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সেবন করতে পরামর্শ দিয়ে থাকে। আয়রন
যদি গর্ভবতী মা সেবন না করে তাহলে তার রক্তশূন্যতা হবে এবং এর থেকে নানা রকম
জটিলতা তৈরি হতে পারে।তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন
করুন।
তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন অসুবিধা গ্রহণ করা উচিত নয়।
গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখার উপায় গুলো কি কি
গর্ভধারণ একটি মহিলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দময় অধ্যায়। একটি
চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। গর্ভাবস্থায় শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে এবং একটি সুস্থ
প্রেগনেন্সি বজায় রাখতে মায়ের শরীরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ দেখা যায়।
লক্ষণ গুলো সঠিক বৃদ্ধি ও মায়ের সুস্বাস্থ্যের প্রতিফলন। গর্ভের শিশু সুস্থ
ভাবে জন্মাবে কিনা সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে মায়ের জীবন যাত্রার ওপর।
গর্ভাবস্থায় কোন কাজগুলো করা যাবে আর কোন কাজগুলো করা যাবে না সেটা নিচে
ব্যাখ্যা করা হলো।
খাবার
শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে একজন গর্ভবতী নারীকে প্রোটিন ভিটামিন মিনারেল
ক্যালসিয়াম আয়রন ও আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। মৌসুমী ফল টাটকা শাকসবজি ডাল
বাদাম মাছ মাংস ডিম ও পাস্তরিত দুধে পাওয়া যায়।তাই ভাত কম খেয়ে এসব খাবার
খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খাওয়াও বেশ
জরুরি।ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা, কফি, চকলেট বা কোমল পানীয় কতটুকু
সম্ভব এড়িয়ে চলুন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলা।
ঘুম
গর্ভবতী মাকে দৈনিক ৮/১০ ঘণ্টা বিচ্ছিন্নভাবে ঘুমাতে হবে। সারাদিনের
বেলায় কাজের ফাঁকে অল্প সময়ের জন্য হলেও বিশ্রাম নিতে হবে বিছানায় শোয়া
ভালো বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
গর্ভবতী মাকে দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি নিয়মিত সাবান পানিতে
দিয়ে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পোশাক
গর্ভবতী মায়েদের আরামদায়ক, ঢিলেঢালা পোশাক, চলাচলের সুবিধা জনক ও
পোশাকটি পড়তেও খুলতে যেন সমস্যা না হয় এমন পোশাক পরিধান করতে হবে। তবে
কোনোভাবে উঁচু হিল, ফিতা ওয়ালা জুতা বা স্লিপ কাটে জুতা ব্যবহার করা যাবে না।
চলাফেরা
চিকিৎসকদের মতে গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষের তিন মাস বেশ সাবধানে
চলাচল করতে হয়। শরীর বা মনে বেশি চাপ নেয়া যাবে না। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা
বসে না থেকে হাঁটাচলা করুন। এ সময় দূরের ভ্রমণ বা বিমান যাত্রা এড়িয়ে চলাই
ভালো। ভাঙ্গা ও পিচ্ছিল রাস্তা বারবার সিঁড়িতে ওঠা নামা ভারী জিনিস তোলা এই
কাজগুলো পরিহার করতে হবে
চিকিৎসা টিকা ও ওষুধ
আপনি যদি বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা করেন তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে
পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ইতিহাস জানিয়ে রাখবেন। যেমন আপনি আগে কতবার গর্ভধারণ করেছেন
আপনার কখনো গর্ভপাত হয়েছিল কিনা, শিশুর মা বাবা বা তাদের পরিবারের কেউ
গুরুতর অসুস্থতা আছে কিনা সকল বিষয়। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা টেস্ট,টিকা ও ওষুধ
খাওয়ার পরামর্শ দিবেন।
মানসিক স্বাস্থ্য
গর্ভবতী মায়েদের নানা রকম হরমোনের পরিবর্তন এসে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে
প্রভাব পড়ে। এ সময় তারা শিশুর ভবিষ্যৎ ও গর্ভকালীন শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে
অতিরিক্ত আবেগ মানসিক চাপ হীনমন্যতা দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভোগেন। এক্ষেত্রে
অনেক গর্ভবতী নারী ধ্যান বা ধর্মচর্চার মাধ্যমে মনকে স্থির রাখার চেষ্টা করেন।
বই পড়া মুভি দেখা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে হাসিখুশি সময় কাটাতে
পারেন। গর্ভধারণের প্রথম ও শেষের তিন মাস সহবাস থেকে বিরত থাকার পরামর্শ
দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শিশুর সাথে যোগাযোগ
বিশেষজ্ঞরা বলেন,গর্ভধারণের কয়েক মাসের মধ্যে শিশু বাইরের জগতের শব্দ
শুনতে পায় ও মায়ের অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারে। তাই বাবা মা দুজনেরই উচিত
শিশুর সাথে কথা বলা গল্প করা। সময় চেষ্টা করুন ডিভাইসের ব্যবহার যতটা কমানো
যায়। কারণ এর থেকে নির্গত বিকিরণ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন
বিশেষজ্ঞরা।
পোষা প্রাণী
আপনার বাড়িতে যদি পোষা প্রাণী কিংবা বাড়ির আশেপাশে যদি কোন খামার থাকে
তাহলে এসব প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক
হতে হবে।এ সময় প্রাণীর সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাই নিরাপদ বলে বৃটেনের
জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা পরামর্শ দিয়েছেন।
গর্ভাবস্থায় এন্টিবায়োটিক ও গ্যাসের ওষুধ খাওয়া যাবে কি?
প্রথম তিন মাস ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যদি কেউ এন্টিবায়োটিক খায়
গর্ভপাত হতে পারে অথবা গর্ভের সন্তানের পেটের মধ্যে মারা যেতে পারে। এটি একটি
খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বিশেষ করে প্রথম তিন মাস বাচ্চার স্ট্রাকচারাল
ডেভেলপমেন্ট হয়। যদি এমন হয় গর্ভবতী মা অসুস্থ অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া তার
জন্য জরুরী অবশ্যই তিনি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। তাই ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী যে অ্যান্টিবায়োটিক গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া নিরাপদ সেই ওষুধই সেবন
করবেন। নিজে থেকে না জেনে কোন ওষুধ খেতে যাবেন না ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া।
প্রেগনেন্সিতে গ্যাস খুব কমন একটা সমস্যা। প্রেগনেন্সিতে সাধারণত গ্যাসের ওষুধ
খাওয়া নিরাপদ তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রেসক্রাইব করা ওষুধটি
খেতে হবে। তবে গর্ভাবস্থায় আমরা নানা রকম খাবার খেয়ে থাকি বা নানা রকম খাবার
খেতে ইচ্ছে হয়। সে ক্ষেত্রে জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া অতিরিক্ত তৈলাক্ত
জাতীয় খাবার আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সর্তকতা
অবলম্বন করা প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের উচিত তাই যে কোন সমস্যায় যেকোন ওষুধ
খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেই খাবেন।
শেষ কথা :গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সর্তকতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সর্তকতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত
তুলে ধরেছি।গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস যেকোনো মায়ের কাছেই ভীষণ আনন্দের কারণ
নতুন প্রাণের আগমন মাকে উদ্বেলিত করে তোলে।শুধু মায়ের জন্য নয় সন্তানের জন্য
এই সময়টি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তাই এই সময় দরকার সতর্কতা ও
সচেতনতা।যেহেতু আপনি অন্তঃসত্ত্বা তাই সবসময় আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী চলতে হবে।
মনে রাখবেন সন্তান সবার কাছেই মূল্যবান তাই কষ্ট হলেও সাবধানে সবকিছু মেনে চলার
চেষ্টা করবেন। সবথেকে বড় কথা হলো আপনি ভালো থাকলে আপনার সন্তানও ভালো থাকবে।
আজকে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকলে আশা করছি উপকৃত হবেন।
কিন্তু ভালো লাগলে পরিচিত জন ও বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করার জন্য অনুরোধ
রইল। আজ এই পর্যন্তই ভালো থাকবেন।আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত
ভিজিট করুন ।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url