কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও এর উপকারিতা
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চার ও এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না।আমরা শুধু কলা খেয়ে এর খোসা ফেলে দেই কিন্তু আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই এই কলার খোসা বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়।
পেইজ সূচিপত্র: কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও এর উপকারিতা
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
কেন কলার খোসা ব্যবহার করবেন
কলার খোসার উপকারিতা
কলার খোসার অপকারিতা
কলার খোসা ব্যবহারের নিয়ম
কলার খোসার স্বাস্থ্য উপকারিতা
চুলের যত্নে কলার খোসার ব্যবহার
কলার খোসার পুষ্টিগুণ
কলার খোসা খাওয়ার নিয়ম
শেষ কথা: কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও এর উপকারিতা কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা বিষয়টি অনেকের কাছে নতুন মনে হতে পারে। আপনি আপনি শুনলে চমকে যাবেন কলার খোসা রূপচর্চায় বেশ কার্যকরী একটা উপাদান আমরা অনেকেই পাকা কলা দিয়ে বিভিন্ন রকম ফেসপ্যাক বানিয়ে থাকি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করে থাকি। আমরা মনে করি কলার খোসার আর কি কাজ? আসলেই এটি ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক মোশচারাইজার হিসেবে কাজ করে।ত্বকের দাগ দূর করে ত্বকে উজ্জ্বল করে তোলে। চলুন জেনে নিই কলার খোসার দিয়ে রূপচর্চা সম্পর্কে।1.এটি ত্বককে মশ্চারাইজ করতে এবং উজ্জ্বল করতে ব্যবহৃত হয়।
2.কলার খোসায় বিদ্যমান উপাদান মুখের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে
3.শুষ্ক ত্বক তারা মধু ও দুধের সাথে ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে দিলে ত্বক উজ্জ্বল ও ময়শ্চারাইজ হয়।
কলার খোসার মধ্যে এমন সব গুণ থাকে যা আমাদের রূপচর্চায় বেশ কার্যকর।শুধু ত্বক নয় আমাদের চোখের চারপাশের কালো দাগ অর্থাৎ ডার্ক সার্কেল করতে কলার খোসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলাটা খেয়ে নিয়ে কলার খোসাটা না ফেলে সেটা চোখের চারপাশে মিনিট পাঁচেক ঘষতে থাকুন। চোখের নিচে ডার্ট সার্কেল কমে যাবে। অনেকেই আছে যাদের বয়স হয়নি কিন্তু মুখে ফাইন লাইন বা বলি দেখা দিয়েছে সে ক্ষেত্রে কলার টা খেয়ে নিয়ে খোসার ভিতরে যে সাদা অংশটা রয়েছে সেটা মুখে কিছুক্ষণ নিয়মিত ঘষলে আপনার ত্বকের বলিরেখা অনেকটাই কমে যাবে এবং ত্বক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
কেন কলার খোসা ব্যবহার করবেন?
1.কলার খোসা ত্বকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে ব্যবহৃত হয়
2. দাঁতের যত্ন ও চুলের যত্নে কলার খোসা ব্যবহৃত হয়
3. কলার খোসায় থাকা ভিটামিন এ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বেশ কার্যকর
4.কলার খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
5.এছাড়া কলার খোসা গাছের যত্নে প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে। আপনারা অনেকেই আছেন যারা গাছের বৃদ্ধির জন্য কলার খোসা ব্যবহার করে থাকেন
6. কলার খোসা গয়না পরিষ্কার করতে ও পোকামাকড় তাড়ানোর কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কলার খোসার উপকারিতা
নানা পুষ্টিগুনে ভরপুর এই কলা আমরা প্রায় প্রতিদিনই খেয়ে থাকি কিন্তু এর খোসা আমরা ফেলে দেই কিন্তু আপনি যদি চান কলার পুষ্টি উপাদান গ্রহণের পাশাপাশি কলার খোসা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এর জন্য আপনের আপনাকে আলাদা করে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। আপনি যদি কলার খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন তাহলে কলা খাওয়ার পর খোসার আর কখনো ফেলবেন না চলুন জেনে নেই কলার খোসা বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে।
কলার খোসায় থাকা ডায়েটারি ফাইবার হতে পারে কমানোর জন্য একটি দুর্দান্ত উপায়ে হতে পারে।ডাক্তার ও ডায়টিশিয়ানরা ওজন কমানোর জন্য খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখার পরামর্শ দেন।এক্ষেত্রে আপনারা অনেকেই হয়তো সরাসরি কলার খোসা খেতে পারবেন না। আপনি চাইলে গুড়া করে বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে অথবা বানিয়ে খেতে পারেন।
কলার খোসার ভিতরের সাদা অংশ দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁতের হলদে দাগ দূর করতে বেশ কার্যকর। আপনি নিয়মিত এটা করে দেখুন নিজেই এর ফলাফল দেখতে পারবেন।
কলার খোসায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে তাই এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
কলার খোসায় থাকা এন্টিসেপটিক পোকামাকড়ের কামড়ের জ্বালাপোড়া বা আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে এবং এটি প্রমাণিত।
গাছের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাকৃতিক সার হিসেবে কলার খোসা ও অন্যান্য সবজির খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে।
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা শুধু নয় এটি দিয়ে ঘরের আসবাবপত্র ও রুপার বিভিন্ন অলংকার পরিষ্কার করলে তা সুন্দর ও মসৃণ হয়।
কলার খোসার অপকারিতা
অতিরিক্ত কলার খোসার ব্যবহার ত্বকের জ্বালাপোড়া হতে পারে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে কলার খোসায় এলার্জি হতে পারে।যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেকোন ফল রাসায়নিক যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার পূর্বে অবশ্যই শরীরের ছোট অংশে লাগিয়ে দেখে নেওয়া উচিত।যদি কলার খোসায় এলার্জি থাকে সেক্ষেত্রে ব্যবহার না করাই ভালো।
কলার খোসার পুষ্টিগুণ
এছাড়াও রয়েছে অনেক ক্যালরি একটি বড় মাপের কলাতে প্রায় ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়। ভিটামিন বি ৬, বি ১২ পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ এর মত খনিজ উপাদান। কলার মধ্যে থাকা ডায়েটেরি ফাইবার হজমের সমস্যা দূর করতে ও পেট ফাঁপা কমাতে সহায়তা করে। কলার খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি প্রতিরোধের সহায়তা করে।
কলার খোসা ব্যবহারের নিয়ম
কলার খোসা বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার ক্ষেত্রে একরকম ভাবে ব্যবহৃত হয় চুলের যত্নে দাঁতের যত্নে ভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। আমরা অনেকেই গলার খোসা খেয়ে ফেলে দেই এবং এটাকে অবহেলা করি কিন্তু বড় বড় সেলিব্রেটিরাও তাদের রূপচর্চায় এ কলার খোসা ব্যবহার করে থাকে শুধু তাই নয় বিদেশেও ডাক্তাররা কলার খোসা ব্যবহার করার সাজেস্ট করে থাকে। আপনার ত্বকে প্রদাহ জনিত কোন সমস্যা থাকলে সেটাও কলার খোসার গুনে ভালো হবে। জেনে নিন কলার খোসার বিভিন্ন ব্যবহার।
কলার খোসা ব্যবহারের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো খোসার ভিতরের সাদা অংশ ত্বকের উপর আলতো করে ঘষা ৫ থেকে ৭ মিনিটে এভাবে ঘুরতে থাকুন মুখ শুকিয়ে টানটান হয়ে আসলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে মুখটা মুছে নিন এতে করে ত্বক নরম হবে ও মশ্চারাইজ হবে
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মধুর সাথে অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে যাদের ত্বক তৈলাক্ত ক্ষেত্রে দুধ ও মধু ব্যবহার না করাই ভালো।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কলার খোসার সাথে ১ চামচ মধু ও এক চা চামচ টক দই একসাথে ব্লেন্ডারে পেস্ট বানিয়ে নিন।তারপর এই প্যাক মুখ ও ঘাড়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন শুকিয়ে গেলে ভালো করে পানি দিয়ে মুছে দিয়ে ফেলুন নিয়মিত ব্যবহারে উজ্জ্বল ও মসৃণ হবে।
চোখে নিচের কালো দাগ দূর করতে টুকরো করে কাটা কলার খোসা চোখের উপর রাখুন। এভাবে নিয়মিত কলার খোসা চোখের উপরে দিয়ে রাখলে ভালো ফলাফল পাবেন। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে কলার খোসার জুড়ি নেই। হাত পা গলা দূর করার জন্য প্রথমে হাত-পা ভালোভাবে ধুয়ে নিন তারপরে কলার খোসা হাত ও পায়ে মিনিট ১০ এতে করে মৃত চামড়া দূর হবে ও হাত পা উজ্জ্বল দেখাবে।
চুলের রুক্ষ ভাব দূর করতে কলার খোসার সাথে টক দই ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগান। চুল হবে মোলায়েম ও উজ্জল।
দাঁতের হলদে ভাব দূর করতে প্রতিদিন ব্রাশ করার আগে কলার খোসার সাদা অংশ দিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট ভালোভাবে ঘষে নিন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে ফেলুন এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন করলে দাঁতের হলদে ভাব দূর হয়ে চকচকে হবে
মাথার ত্বকে জমে থাকা ময়লা ও খুশকি দূর করতে সাহায্য করে কলার খোসা
ত্বকে রোদে পোড়া দাগ দূর করতে কলার খোসার সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিন
রূপচর্চার ছাড়াও অন্যান্য কাজে যেমন গাছের সার হিসেবে চলার কলা ও অন্যান্য সবজির খোসা পচিয়ে করলে মাটির উর্বরতা বাড়ে।পোকামাকড়ের কামড় ব্যথার উপশম কমাতে কলার খোসা ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কলার খোসা দিয়ে রুপার গয়না পরিষ্কার করলে চকচকে হয়। শুধু তাই নয় আসবাবপত্রে জমে থাকা ময়লা দূর করতে কলার খোসা ব্যবহৃত হয়।
কলার খোসার স্বাস্থ্য উপকারিতা
কলার মধ্যে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ভালো করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুটেইন অতি বেগুনি রশ্মি চোখকে সুরক্ষা দেয়।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কলার খোসা বেশ কার্যকর কারণে তে রয়েছে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট।গবেষণায় দেখা গেছে কলার মধ্যে থাকা দ্রবণীয় ও দ্রবণীয় আশ শরীরের বাজে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া কলার খোসা চুলকানি ও খোশপাঁচড়ার ওষুধ হিসেবে বেশ কাজ করে।
চুলের যত্নে গলার খোসার ব্যবহার
চুলের খুশকি কমাতে কলার খোসা ভেতরে সাদা অংশ মাথার তালুতে কিছুক্ষণ ঘষে নেই এতে করে আপনার খুশকি কমে যাবে এবং আপনার নিষ্প্রাণ চুল প্রাণ ফিরে পাবে।নারকেল তেল এর সাথে কলার খোসা টুকরো করে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন।২৫-৩০ মিনিট মাথার স্কাল্পে মেখে অপেক্ষা করুন। তেলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে।কলার খোসা দিয়ে ব্যাগ আপনার চুলের প্রাকৃতিক তেল হিসেবে কাজ করবে। আপনার চুল উজ্জ্বল ও মসৃণ করবে চুলের বৃদ্ধি ঘটাবে চুল হবে ও স্বাস্থ্যজ্জল।
কলার খোসা খাওয়ার নিয়ম
এছাড়া কলা দিয়ে মিল্কশেক বানানোর সময় কলার সাথে কয়েক টুকরো খোসা দিয়ে দিতে পারেন।এভাবে খেলে আপনি বুঝতেই পারবেন না এর ভিতরে কলার খোসা দেয়া আছে। তাছাড়া কলার খোসা ভালোভাবে শুকিয়ে গুড়ো করে অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন বা শুধু পানি দিয়েও কলার খোসার গুড়ো খেতে পারেন। পাকা কলার খোসা খেতে চাইলে খোসার ভেতরে সাদা অংশটি খান তবে অবশ্যই মনে রাখবেন খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
শেষ কথা :কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও এর উপকারিতা
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সস্তায় রূপচর্চায় করতে চাইলে কলার খোসার বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। আশা করছি আপনারা উপকৃত হবেন। প্রিয় পাঠক আপনি যদি পুরো আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ে থাকেন তাহলে আজকের পর থেকে আর কলার খোসা কখনোই ফেলে দিবেন না। কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করা ছাড়াও নানাবিধ কাজে এটি ব্যবহার করা যায়। চেষ্টা করুন রাসায়নিক মুক্ত কলা খেতে ও এর খোসা ব্যবহার করতে।
কলা অতি পরিচিত উপদেয় ও সহজলভ্য। এর দামও অন্যান্য ফলের তুলনায় কম।আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখুন এর পুষ্টিগুণ উপভোগ করুন। কলার খোসা খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। কিছুক্ষণ পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। আমরা জানি বাজারে বেশিরভাগ ফলে এই পেস্টিসাইড ব্যবহার করে। আমাদের শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। চেষ্টা করুন পেস্টিসাইড মুক্ত কলা খেতে। কেননা পেস্টিসাইডযুক্ত কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করলে আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতি হতে পারে সেই দিকটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। আশা করছি আজকের আর্টিকেল আপনাদের ভালো লেগেছে। ও আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url