গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়
পেইজ সূচিপত্র: গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া কি নিরাপদ
- জাফরানের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান
- গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের ২৩টি উপকারিতা
- গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরান খাওয়ার অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভবতী মায়ের জন্য কোন জাফরান ভালো
- বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ার নিয়ম
- জাফরান খেলে কি দৃষ্টিশক্তি বাড়ে
- শেষ কথা: গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়?
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি এই প্রশ্নটির উত্তর দেই তাহলে বলবো না। প্রকৃতপক্ষে এই দাবির কোন ভিত্তি নেই। ফর্সা হবে নাকি কালো হবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে জেনেটিকের উপর। বিশেষজ্ঞদের মতে জাফরান এমন কোন বৈশিষ্ট্য নেই যা খেলে বাচ্চা ফর্সা বা সাদা হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে ও এটি প্রমাণিত হয়নি। একটি শিশুর চুল, ত্বক,চোখের রং জেনেটিক্যালি নির্ধারিত হয়।
গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভাস শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবে শিশুর গায়ের রং নির্ধারিত হয় পিতা-মাতা ও উত্তরাধিকার সূত্র থেকে। আর ত্বকের রঙের জন্য প্রধানত জিন ও মেলানিন নামক রঞ্জন পদার্থ দায়ী। নির্দিষ্ট কোন খাবার বা কোন মসলা শিশুর ত্বকের রঙের উপর প্রভাব ফেলে না।
আপনি জানলে অবাক হবেন প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বিশ্বাস করে জাফরান বা কেশর দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ত্বকের রং উজ্জ্বল হবে। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকেই এমনটি দাবি করে যে গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে বাচ্চা ফর্সা হবে। তবে চিকিৎসকরা এই ধরনের বিষয়কে গুজব বলে দাবি করেন।
অনেকেই বলেন গর্ভাবস্থায় দুইবার খাওয়া উচিত আবার অনেকেই পেটে আকৃতি দেখে বাচ্চার লিঙ্গ অনুমান করে, এমন অনেক প্রচলিত কথা যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন এই সময় গর্ভবতী মায়েদের সুষম পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত ২০০ ক্যালোরির প্রয়োজন। তার মানে এই নয় যে গর্ভবতী মহিলাদের দুজনের খাবার খাওয়া উচিত।
জাফরান খাওয়া কি নিরাপদ
গর্ভবতী মহিলাদের ডায়েটে জাফরান যুক্ত করার পূর্বে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে যেমন এটি গর্ভে পঞ্চম মাস থেকে শুরু করতে হবে এই সময় গর্ভাবস্থা স্থিতিশীল থাকে এবং অকাল প্রসবের কারণে শিশুর বিপদে পড়ার ঝুকিঝুঁকি হ্রাস পায়। কৃত্রিম রং বা অন্যান্য বিপদের ঝুঁকি এড়াতে অন্য জায়গা থেকে জাফরান কেনা উচিত। গর্ভাবস্থায় জাফরান ১৫ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম খাওয়া উচিত।
জাফরানের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান
- প্রতি ১০০ গ্রাম জাফরানে রয়েছে :
- ক্যালরি :৩১০ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিন:১১. ৪ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট :৬৫. ৪ গ্রাম
- ডায়েটারি ফাইবার :৩. ৯ গ্রাম
- ভিটামিন সি:৮০. ৮ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম:১১১ মিলিগ্রাম
- আয়রন :১১. ১ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম:১৭২০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম:২৬৪ মিলিগ্রাম
গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের ২৩টি উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় রক্তেচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে জাফরানি রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ
- হৃদপিন্ডের সমস্যা জনিত রোগ দূর করে
- হজমজনিত যে কোন সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে জাফরান
- গর্ভাবস্থায় মুড সুইং খুব স্বাভাবিক একটা সমস্যা জাফরান সেরোটোনিন নামক হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে মুড ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- জাফরান এ থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের নতুন কোষ গঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
- গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা পিঠ ব্যথা খুব সাধারন একটি সমস্যা জাফরান প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক ওষুধ হিসেবে সাহায্য করে
- মর্নিং সিকনেস কাল সকাল বেলা বমি ভাব মাথা ঘোরানো গর্ভবতী মায়েদের খুব সাধারন একটি সমস্যা। জাফরান গর্ভবতীদের মর্নিং সিকনেস দূর করতে সহায়তা করে
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে মা ও শিশুর আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়
- গর্ভের সন্তানের ব্রেনের বিকাশে জাফরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এবং মা ও শিশুরই উভয়েরই টিস্যু বৃদ্ধি ও রিপেয়ার করে জাফরান
- এছাড়া জাফরান পুরুষদের বীর্যের মান উন্নত করতে সহায়তা করে
- জাফরানে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষকে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে
- নিয়মিত জাফরান গ্রহণে এজমা,পারটুসিস, কাশি ও বসে যাওয়া কফ দূর করতে সহায়তা করে।
- মেয়েদের মাসিকের পূর্বের অস্বস্তিকর অবস্থা ও মাসিকের সময় অস্বস্তিকর ব্যথা দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই।
- গবেষণায় দেখা গিয়েছে জাফরান স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও আলজাইমার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
- গর্ভাবস্থা গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা।জাফরান গর্ভাবস্থায় নিদ্রাহীনতার দূর করতে সাহায্য করে
- শরীরের বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবলিজম উন্নত করতে সহায়তা করে
- জাফরান এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে
- সামান্য পরিমাণ জাফরান মাড়িতে ম্যাসাজ করলে মাড়ি দাঁত ও জিহবার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
- কিডনি, যকৃত ও মূত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি দেয় জাফরান
- ক্যান্সার ও টিউমার নিরাময় ও বেশ কার্যকর এই জাফরান
- জাফরান চোখের ছানি পড়া প্রতিরোধেও বেশ কাজ করে
- জাফরান এর এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান বাতের ব্যথা, জয়েন্ট ব্যথা, মাংসপেশীর ব্যথা দুর্বলতা দূর করতে প্রাকৃতিক ওষুধ জাফরানের জুড়ি নেই।
- জাফরান দেহের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরান খাওয়ার অপকারিতা
- গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহ গুলিতে অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান গ্রহণের ফলে গর্ভস্রাব হতে পারে। কারণ প্রথম সপ্তাহ গুলিতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে এক্ষেত্রে জাফরান এড়িয়ে চলাই ভালো
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কিছু মহিলার বমি হতে পারে। জাফরানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন যদি আপনার এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে এড়িয়ে চলাই ভালো
- অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান গ্রহণ বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। এটি ত্বক চোখ অসাড়তা রক্তযুক্ত ডায়রিয়া আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন করতে পারে আপনাকে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান সেবন জরায়ুকে উদ্দীপিত করে যার কারণে অকাল প্রসব করতে পারে
- বেশি মাত্রায় জাফরান গ্রহণের ফলে হাত-পায়ের সংবেদনশীলতা,চোখের পাতা ও ঠোঁটে অসাড়তা হতে পারে
- কিছু মহিলার জাফরানের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে যার কারণে ত্বক শ্বাসকষ্ট অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- অতিমাত্রায় জাফরান গ্রহণ কখনো কখনো বমি ভাব মাথা ঘোরা, কিডনির সমস্যার কারণ হতে পারে
- প্রচুর পরিমাণ জাফরান গ্রহণ শরীরের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে যার ফলে জন্ডিস ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভের প্রথম সপ্তাহগুলোতে জাফরান এড়িয়ে চলুন। পঞ্চম মাস থেকে গর্ভাবস্থায় স্থিতিশীল থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ৪-৫ টি জাফরানের পাপড়ি দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
- জাফরান ভেজানো রান্নার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায়ে ব্যবহার করার পদ্ধতি। এক্ষেত্রে কয়েকটি পাপড়ি পানি কিংবা দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন রান্নার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পূর্বে তারপর তা রান্নায় ব্যবহার করুন
- উষ্ণ গরম দুধের সাথে ১-২ চিমটি জাফরান চূর্ণ মিশিয়ে খেলে শরীরে জয়েন্টে ব্যথা, ব্যথা মাংসপেশির ব্যথা উপশম সহায়তা করে
- এক চিমটি জাফরান এক গ্লাস কুসুম গরম পানি অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে
- গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসের দিকে ওদের সাথে বাদাম পেস্তা ও দুধের সাথে বাদাম পেস্তা ও বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফ্রুটস সঙ্গে জাফরানের সুতা ভিজিয়ে রেখে পেস্ট করে ড্রিংস তৈরি করতে পারেন। একই দিনের যেকোনো সময় খেতে পারেন। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ গঠনে সহায়তা করে।
- দুধ দিয়ে তৈরি যে কোন ডেজার্টে জাফরান মিশিয়ে খেতে পারেন
- জাফরান গুড়া করে পানির সাথে অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
- এছাড়া পোলাও,বিরানি,বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন এর সাথে জাফরান মিশিয়ে নিশ্চিন্তে যে কেউ খেতে পারে
গর্ভবতী মায়ের জন্য কোন জাফরান ভালো
- আসল জাফরান পানিতে ভেজালে হলুদ বা কমলা রং ধারণ করে যা নকল জাফরানের তুলনায় বেশি সময় নেয়।
- আসল জাফরানের গন্ধ ও স্বাদ দুটোই আলাদা সামান্য জাফরান বা কেশর রান্নায় বাদশাহী আমেজ এনে দেয়
- নকল জাফরান পানিতে মেশালে সঙ্গে সঙ্গে পানিকে লাল করে দেয় এবং হাতের তালুতে নিয়ে ঘুষলে লাল রংয়ে দন্ডটি গলে যেতে থাকে।
- আসল জাফরানের স্বাদ কিছুটা তেতো হয় নকল জাফরানের স্বাদ কিছুটা মিষ্টি হয়
- আসল জাফরান থেকে মিষ্টি ফুলের গন্ধ পাওয়া যায় যা নকল জাফরানে পাওয়া যায় না।
বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ার নিয়ম
- রাত্রে নারকেল তেল অথবা আমন্ড তেলের সাথে কয়েকটি জাফরানের পাপড়ি মিশিয়ে নিন সকালে বাচ্চাকে এই জাফরান ভেজানো তেল দিয়ে মালিশ করুন অথবা গোসলের পর গায়ে মালিশ করে দিন এতে ত্বকও ভালো থাকবে ভালো ঘুম হবে।
- ছয় মাস পর থেকে যখন শিশুকে বাড়তি খাবার দেয়া হবে তখন দুধের সাথে অথবা অন্য কোন খাবারের সাথে জাফরান মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন
- বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ানোর ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্ধারণ করে খাওয়াতে হবে সাধারণত ১ থেকে ২ বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ পিস জাফরানের পাপড়ি যথেষ্ট
- একটু বড় বয়সী বাচ্চাদের জন্য দুই থেকে তিন পিস জাফরান দেয়া যেতে পারে
- অবশ্যই মনে রাখতে হবে জাফরান খাওয়ানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে জাফরান ভিজিয়ে রাখতে হবে
- এটি বাচ্চাকে যেকোনো তরল জাতীয় খাবার যেমন দুধ জুস বা বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন
জাফরান খেলে কি দৃষ্টিশক্তি বাড়ে
শেষ কথা : গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়?
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় এই প্রশ্নের উত্তরটি আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে থাকলে পেয়ে গেছেন। নির্দিষ্ট কোন খাবার বা মসলা বাচ্চার রং এর ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখে না। এটি নির্ভর করে জেনেটিকের উপর। গর্ভাবস্থায় অনেকেই বিভিন্ন রকম উপদেশ দিয়ে থাকে তাই বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক তথ্য জানুন এবং সে অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url