গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়

    
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় এ কথা অনেকেই জানতে চান। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই এ কথাটি প্রচলিত আছে গর্ভাবস্থায়  জাফরান খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়। এটি একটি প্রচলিত বিশ্বাস।আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়



 গর্ভধারণ নারীদের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময় গর্ভবতী মায়ের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হবে এটা জানার চাইতে বেশি জরুরী গর্ভের সন্তান সুস্থ আছে কিনা।

 পেইজ সূচিপত্র: গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় 

গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়?

 গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি এই প্রশ্নটির উত্তর দেই তাহলে বলবো না। প্রকৃতপক্ষে এই দাবির কোন ভিত্তি নেই। ফর্সা হবে নাকি কালো হবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে জেনেটিকের উপর। বিশেষজ্ঞদের মতে জাফরান এমন কোন বৈশিষ্ট্য নেই যা খেলে বাচ্চা ফর্সা বা সাদা হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে ও এটি প্রমাণিত হয়নি। একটি শিশুর  চুল, ত্বক,চোখের রং জেনেটিক্যালি নির্ধারিত হয়।

 গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভাস শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবে শিশুর গায়ের রং নির্ধারিত হয় পিতা-মাতা ও উত্তরাধিকার সূত্র থেকে। আর ত্বকের রঙের জন্য প্রধানত জিন ও মেলানিন নামক রঞ্জন পদার্থ দায়ী। নির্দিষ্ট কোন খাবার বা কোন মসলা শিশুর ত্বকের রঙের উপর প্রভাব ফেলে না।

 আপনি জানলে অবাক হবেন প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বিশ্বাস করে জাফরান বা কেশর দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ত্বকের রং উজ্জ্বল হবে। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকেই এমনটি দাবি করে যে গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে বাচ্চা ফর্সা হবে। তবে চিকিৎসকরা এই ধরনের বিষয়কে গুজব বলে দাবি করেন।

 অনেকেই বলেন গর্ভাবস্থায় দুইবার খাওয়া উচিত আবার অনেকেই পেটে আকৃতি দেখে বাচ্চার লিঙ্গ অনুমান করে, এমন অনেক প্রচলিত কথা যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন এই সময় গর্ভবতী মায়েদের সুষম পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত ২০০ ক্যালোরির প্রয়োজন। তার মানে এই নয় যে গর্ভবতী মহিলাদের দুজনের খাবার খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুন :

জাফরান খাওয়া কি নিরাপদ 

 হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া নিরাপদ। জাফরান অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে প্রয়োজনের চাইতেও বেশি জাফরান গ্রহণ শরীরের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তাই প্রত্যেকটি গর্ভবতী মহিলাকে কোন কিছু খাবার আগে উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নেওয়া জরুরী।

 গর্ভবতী মহিলাদের ডায়েটে জাফরান যুক্ত করার পূর্বে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে যেমন এটি গর্ভে পঞ্চম মাস থেকে শুরু করতে হবে এই সময় গর্ভাবস্থা স্থিতিশীল থাকে এবং অকাল প্রসবের কারণে শিশুর বিপদে পড়ার ঝুকিঝুঁকি হ্রাস পায়। কৃত্রিম রং বা অন্যান্য বিপদের ঝুঁকি এড়াতে অন্য জায়গা থেকে জাফরান কেনা উচিত। গর্ভাবস্থায় জাফরান ১৫ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম খাওয়া উচিত।

জাফরানের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান

 আপনি জানলে অবাক হবেন দামি এই মসলা জাফরানের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। জাফরান (crocus sativus) বহু গুনসম্পন্ন একটি মসলা যা সপুষ্পক উদ্ভিদ এটি ফল দিতে পারেনা। জাফরানকে ইংরেজিতে স্যাফরন বা লাল সোনা গোল্ডেন স্পাইস বলে আখ্যায়িত করা হয়। নিচে জাফরানের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান উল্লেখ করা হলো।
  •  প্রতি  ১০০ গ্রাম জাফরানে রয়েছে :
  •  ক্যালরি :৩১০ কিলো ক্যালরি 
  •  প্রোটিন:১১. ৪ গ্রাম
  •  কার্বোহাইড্রেট :৬৫. ৪ গ্রাম
  •  ডায়েটারি ফাইবার :৩. ৯ গ্রাম
  •  ভিটামিন সি:৮০. ৮ মিলিগ্রাম
  •  ক্যালসিয়াম:১১১ মিলিগ্রাম
  •  আয়রন :১১. ১ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম:১৭২০ মিলিগ্রাম
  •  ম্যাগনেসিয়াম:২৬৪ মিলিগ্রাম
 এছাড়াও জাফরানের রয়েছে ক্রোসিন ও সাফ্রানাল নামক শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন উপকার করে যেমন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, হজমে সাহায্য, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ,গ্যাস অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বেশ উপকারী তবে অতিরিক্ত গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের ২৩টি উপকারিতা 

 গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে আপনি নানারকম উপকার পাবেন এতে রয়েছে বিস্ময়কর রোগ নিরাময় ক্ষমতা। এক চিমটি জাফরান আপনাকে শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় এবং জটিল রোগ সারাতে জাফরানের ব্যবহার করা হয়। জাফরান মানব দেহের প্রায় ২০ ধরনের রোগ সারাতে সহায়তা করে।

  •  গর্ভাবস্থায় রক্তেচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে জাফরানি রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ  
  • হৃদপিন্ডের সমস্যা জনিত রোগ দূর করে
  •  হজমজনিত যে কোন সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে জাফরান 
  •  গর্ভাবস্থায় মুড সুইং খুব স্বাভাবিক একটা সমস্যা  জাফরান সেরোটোনিন নামক হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে মুড ভালো রাখতে সহায়তা করে।
  •  জাফরান এ থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের নতুন কোষ গঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
  •  গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা পিঠ ব্যথা খুব সাধারন একটি সমস্যা জাফরান প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক ওষুধ হিসেবে সাহায্য করে 
  •  মর্নিং সিকনেস কাল সকাল বেলা বমি ভাব মাথা ঘোরানো গর্ভবতী মায়েদের খুব সাধারন একটি সমস্যা। জাফরান গর্ভবতীদের মর্নিং সিকনেস দূর করতে সহায়তা করে 
  •  গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে মা ও শিশুর আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়
  •  গর্ভের সন্তানের ব্রেনের বিকাশে জাফরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এবং মা ও শিশুরই উভয়েরই টিস্যু বৃদ্ধি ও রিপেয়ার করে জাফরান 
  •  এছাড়া জাফরান পুরুষদের বীর্যের মান উন্নত করতে সহায়তা করে
  •  জাফরানে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষকে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে
  • নিয়মিত জাফরান গ্রহণে এজমা,পারটুসিস, কাশি ও বসে যাওয়া কফ দূর করতে সহায়তা করে।
  •  মেয়েদের মাসিকের পূর্বের অস্বস্তিকর অবস্থা ও মাসিকের সময় অস্বস্তিকর ব্যথা দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই।
  •  গবেষণায় দেখা গিয়েছে জাফরান স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও আলজাইমার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
  •  গর্ভাবস্থা গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা।জাফরান গর্ভাবস্থায় নিদ্রাহীনতার দূর করতে সাহায্য করে
  •  শরীরের বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবলিজম উন্নত করতে সহায়তা করে
  •  জাফরান এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে 
  •  সামান্য পরিমাণ জাফরান মাড়িতে ম্যাসাজ করলে মাড়ি দাঁত ও জিহবার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় 
  •  কিডনি, যকৃত ও মূত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি দেয় জাফরান 
  •  ক্যান্সার ও টিউমার নিরাময় ও বেশ কার্যকর এই জাফরান 
  •  জাফরান চোখের ছানি পড়া প্রতিরোধেও বেশ কাজ করে 
  •  জাফরান এর এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান বাতের ব্যথা, জয়েন্ট ব্যথা, মাংসপেশীর ব্যথা দুর্বলতা দূর করতে প্রাকৃতিক ওষুধ জাফরানের জুড়ি নেই।
  •  জাফরান দেহের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে 
 প্রিয় পাঠক আশা করছি ওপরে জাফরানের উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পেরেছেন চলুন এবার জেনে আসি জাফরানের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কথা।

গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরান খাওয়ার অপকারিতা 

 বহুগুণ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ওষুধ জাফরান যেমন নানা রকম শারীরিক সমস্যার সমাধান করে তেমনি প্রয়োজনের চাইতে অতিমাত্রায় গ্রহণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বয়ে আনে শরীরের জন্য। তাই গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে খাওয়া উচিত কারণ এটি জরায়ুর সংকোচনের দিকে পরিচালিত করে। চলুন জেনে আসি জাফরানের কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।
  •  গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহ গুলিতে  অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান গ্রহণের ফলে গর্ভস্রাব হতে পারে। কারণ প্রথম সপ্তাহ গুলিতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে  এক্ষেত্রে জাফরান এড়িয়ে চলাই ভালো 
  •  গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কিছু মহিলার বমি হতে পারে। জাফরানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন যদি আপনার এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে এড়িয়ে চলাই ভালো 
  •  অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান গ্রহণ বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। এটি ত্বক চোখ অসাড়তা রক্তযুক্ত ডায়রিয়া আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন করতে পারে আপনাকে।
  •  অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান সেবন জরায়ুকে উদ্দীপিত করে যার কারণে অকাল প্রসব করতে পারে 
  •  বেশি মাত্রায় জাফরান গ্রহণের ফলে হাত-পায়ের সংবেদনশীলতা,চোখের পাতা ও ঠোঁটে অসাড়তা হতে পারে 
  •  কিছু মহিলার জাফরানের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে যার কারণে ত্বক শ্বাসকষ্ট অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে 
  •  অতিমাত্রায় জাফরান গ্রহণ কখনো কখনো বমি ভাব মাথা ঘোরা, কিডনির সমস্যার কারণ হতে পারে
  •  প্রচুর পরিমাণ জাফরান গ্রহণ শরীরের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে যার ফলে জন্ডিস ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে 
 উপরের আলোচনা গুলো থেকে বোঝা যায় গর্ভকালীন সময়ে প্রয়োজনের চাইতে বেশি মাত্রায় জাফরান গ্রহণ নানা রকম বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। যদিও জাফরান পুষ্টি উপাদানে ভরপুর ও গর্ভবতী মায়েদের নানা রকম উপকার করে থাকে। তাই আপনার যদি জাফরানের এলার্জি থাকে সেক্ষেত্রে জাফরান এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে যদি আপনার জাফরানের উপকারিতা পেতে চান সে ক্ষেত্রে জাফরান সেবনের পূর্বে অবশ্যই আপনি বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে তারপরেই পরিমাণ মতো গ্রহণ করবেন।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম 

 ওপরে আলোচিত জাফরান এর উপকারিতা ও অপকারিতা থেকে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে জাফরান কতটুকু খাব এবং কিভাবে খাব। জাফরান অনেকেই দুধের সাথে মিশিয়ে খায় সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী ১ থেকে ২ চিমটি জাফরান দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি নিয়মিত খাওয়া উচিত নয়। যেহেতু এটি খুব দামী এবং সব সময় ভালো জাফরান নাও পেতে পারেন সে ক্ষেত্রে খুব সামান্য পরিমাণ জাফরান সেবন করুন। সাপ্তাহে এক থেকে দুই দিন বেশি গ্রহণ করা উচিত নয়।
 যেভাবে খাবেন :
  •  গর্ভের প্রথম সপ্তাহগুলোতে জাফরান এড়িয়ে চলুন। পঞ্চম মাস থেকে গর্ভাবস্থায় স্থিতিশীল থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ৪-৫ টি জাফরানের  পাপড়ি দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন 
  •  জাফরান ভেজানো রান্নার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায়ে ব্যবহার করার পদ্ধতি। এক্ষেত্রে কয়েকটি পাপড়ি পানি কিংবা দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন রান্নার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পূর্বে তারপর তা রান্নায় ব্যবহার করুন 
  •  উষ্ণ গরম দুধের সাথে ১-২ চিমটি জাফরান চূর্ণ   মিশিয়ে খেলে শরীরে জয়েন্টে ব্যথা, ব্যথা মাংসপেশির ব্যথা উপশম সহায়তা করে 
  •  এক চিমটি জাফরান এক গ্লাস কুসুম গরম পানি অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে 
  •  গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসের দিকে ওদের সাথে বাদাম পেস্তা ও দুধের সাথে বাদাম পেস্তা ও বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফ্রুটস সঙ্গে জাফরানের সুতা ভিজিয়ে রেখে পেস্ট করে ড্রিংস তৈরি করতে পারেন। একই দিনের যেকোনো সময় খেতে পারেন। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ গঠনে সহায়তা করে।
  •  দুধ দিয়ে তৈরি যে কোন ডেজার্টে জাফরান মিশিয়ে খেতে পারেন 
  •  জাফরান গুড়া করে পানির সাথে অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
  •  এছাড়া পোলাও,বিরানি,বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন এর সাথে জাফরান মিশিয়ে নিশ্চিন্তে যে কেউ খেতে পারে 
 তবে এক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত যেমন
 যেসব মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের ক্ষেত্রে জাফরান এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়া গর্ভকালীন সময়ে যদি কোন সমস্যার কারণে ওষুধ সেবন করে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জাফরান সেবন করুন।

গর্ভবতী মায়ের জন্য কোন জাফরান ভালো 

 জাফরান হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ভেজা উপাদান যা "লাল সোনা "বা "গোল্ডেন স্পাইস" নামে পরিচিত।এটি মূলত ক্রোকাস সেটিভাস ফুলের ভিতরে লাল স্টিগমা থেকে সংগ্রহ করা হয় যা আসল জাফরান।শুধুমাত্র দামের কারণেই এটি নকল করা হয়।সমস্ত প্রকার লাল জাফরান প্রমাণিত হবে ১০০% খাঁটি ও প্রাকৃতিক। সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আনা হয়।

আসল জাফরানের কেজি যার মূল্য লাখ টাকা। তাই বাজার থেকে দেখে শুনে বুঝে জাফরান না কিনলে প্রতারিত হবেন। তাই জেনে নিন কিভাবে আসল জাফরান চিনবেন। জাফরান খুবই দামী একটি মসলা তাই কম দামে জাফরান পেলে বুঝতে হবে সেটা আসল নয়। বিশ্বস্ত কোন দোকান থেকে এটি কেনা উচিত অপরিচিত কোন জায়গা থেকে জাফরান কেনার যাচাই-বাছাই করে নিন।
 আসল জাফরান চেনার উপায়:
  •  আসল জাফরান পানিতে ভেজালে হলুদ বা কমলা রং ধারণ করে যা নকল জাফরানের তুলনায় বেশি সময় নেয়।
  •  আসল জাফরানের গন্ধ ও স্বাদ দুটোই আলাদা সামান্য জাফরান বা কেশর রান্নায় বাদশাহী আমেজ এনে দেয়
  •  নকল জাফরান পানিতে মেশালে সঙ্গে সঙ্গে পানিকে লাল করে দেয় এবং হাতের তালুতে নিয়ে ঘুষলে লাল রংয়ে দন্ডটি গলে যেতে থাকে।
  •  আসল জাফরানের স্বাদ কিছুটা তেতো হয় নকল জাফরানের স্বাদ কিছুটা মিষ্টি হয় 
  •  আসল জাফরান থেকে মিষ্টি ফুলের গন্ধ পাওয়া যায় যা নকল জাফরানে পাওয়া যায় না।

বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ার নিয়ম 

 গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে মা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পায় তেমনি বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও জাফরানের অনেক উপকারিতা রয়েছে। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য বাবা মা সব সময় চিন্তিত থাকেন। পুষ্টির পরিমাণ ঠিক রাখতে খাবারের বিকল্প হিসেবে জাফরানের কথা ভাবতে পারেন জাফরান দিবে আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি।

 আপনার বাচ্চা যদি খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি জাফরানের কথা ভাবতে পারেন।এটা আপনার বাচ্চার মুড স্টাবিলাইজার হিসেবে কাজ করবে। নবজাতক কিনা এটা যে কোন বয়সের বাচ্চাদের জন্য পুষ্টির যোগান দিবে। চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে ব্যবহার করবেন জাফরান।

  •  রাত্রে নারকেল তেল অথবা আমন্ড তেলের সাথে কয়েকটি জাফরানের পাপড়ি মিশিয়ে নিন সকালে বাচ্চাকে এই জাফরান ভেজানো তেল দিয়ে মালিশ করুন অথবা গোসলের পর গায়ে মালিশ করে দিন এতে ত্বকও ভালো থাকবে ভালো ঘুম হবে।
  •  ছয় মাস পর থেকে যখন শিশুকে বাড়তি খাবার দেয়া হবে তখন দুধের সাথে অথবা অন্য কোন খাবারের সাথে জাফরান মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন 
  •  বাচ্চাদের জাফরান খাওয়ানোর ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্ধারণ করে খাওয়াতে হবে সাধারণত ১ থেকে ২ বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ পিস জাফরানের পাপড়ি যথেষ্ট
  •  একটু বড় বয়সী বাচ্চাদের জন্য দুই থেকে তিন পিস জাফরান দেয়া যেতে পারে 
  •  অবশ্যই মনে রাখতে হবে জাফরান খাওয়ানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে জাফরান ভিজিয়ে রাখতে হবে 
  •  এটি বাচ্চাকে যেকোনো তরল জাতীয় খাবার যেমন দুধ জুস বা বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন
 বাচ্চাদের বিভিন্ন রকম সমস্যা থাকতে পারে যেমন পেটের সমস্যা বা এলার্জি থাকে সেক্ষেত্রে জাফরান দেয়ার পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণ জাফরান গ্রহণ উপকারের বদলে অপকারিতা বয়ে আনতে পারে। তাই নিয়মিত বাচ্চাকে জাফরান খাওয়াতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

জাফরান খেলে কি দৃষ্টিশক্তি বাড়ে

 জাফরান বিশেষ করে ক্রোসিন বয়স সম্পর্কিত ম্যাকুলার সম্পর্কিত ডিজেনারেশন থেকে রক্ষা করতে ও রেটিনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া পরিমাণ মতো নিয়মিত জাফরান গ্রহণ চোখের চাপ কমাতে পারে এবং চোখের রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে পারে। বিশেষ করে যারা কম্পিউটার বা মোবাইলের বেশি সময় কাটার তাদের জন্য।

 জাফরানে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট চোখের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।পরিমাণমত নিয়মিত  জাফরান গ্রহণে চোখের ছানি পরা প্রতিরোধ করে ও দুর্বল দৃষ্টিশক্তি নিরাময়ের সহায়তা করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জাফরান চোখের রেটিনার কার্যকারিতা উন্নত করে এবং গ্লুকোমা রোগীদের চোখের ভেতর চাপ কমাতে সহায়তা করে।

শেষ কথা : গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়?

 গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় এই প্রশ্নের উত্তরটি আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে থাকলে পেয়ে গেছেন। নির্দিষ্ট কোন খাবার বা মসলা বাচ্চার রং এর ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখে না। এটি নির্ভর করে জেনেটিকের উপর। গর্ভাবস্থায় অনেকেই বিভিন্ন রকম উপদেশ দিয়ে থাকে তাই বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক তথ্য জানুন এবং সে অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

গায়ের রং ফর্সা বা কালো তার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্য। গর্ভবতী মায়েদের এই সময় একটু বেশি ক্ষুধা পায় তাই প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন কারণ আপনার খাবারের ওপরে আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্য নির্ভর করছে। প্রিয় পাঠক আমার আজকের এই আলোচনা স্বাস্থ্য বিষয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url