ভূমিকা
একটা শিশুর জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ ব্রেন ডেভেলপমেন্ট
হয়ে থাকে।অর্থাৎ তার মেধা বিকাশ টা ৯০ ভাগে পাঁচ বছর মধ্যে হয়।এজন্য পাঁচ বছর
বয়স পর্যন্ত একটি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এর মধ্য দিয়ে যদি যাওয়া হয় তাহলে তো
সম্পন্ন হয়।মেধা বিষয়টা অবশ্যই জেনেটিক্যালি ওপর নির্ভর করে অর্থাৎ সে কি
পরিমান মেধা বা বুদ্ধি নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে বা সৃষ্টিকর্তা তাকে কি পরিমান মেধা
দিয়ে পাঠিয়েছেন।তবে আনন্দের বিষয় হলো আমাদের হাতের কাছে এমন কিছু খাবার রয়েছে
যা শিশুর বুদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ পাশাপাশি আমরা সঠিক ভাবে তার
খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখি তাহলে তার মেধা বিকাশ টা কিছুটা হল বৃদ্ধি
পাবে।
চলুন জেনে নি কি কি খাবার ব্রেন ডেভেলপমেন্টে সহায়ক ভূমিকা পালন
করে।পুষ্টিবিদদের মতে, মেধাবিকাশে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গুড ফ্যাট
জাতীয় খাবার অর্থাৎ যদি গুড ফ্যাট রাখা হয় যেমন ডিমের কথা বলি ডিমের কুসুমে
কলিন থাকে যা ব্রেন ডেভেলপমেন্টে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ তার খাবারের যদি
প্রতিদিন কলিন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন তা আপনার সন্তানের ব্রেন বিকাশে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য যেসব খাবার রাখবেন
- ডিম
- দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার
- বাদাম
- বীজ জাতীয় খাবার
- ওটস
- বিভিন্ন রঙের শাকসবজি
- ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
- কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ শস্য জাতীয় খাবার
ডিম
বাজারে সস্তায় পাওয়া যায় এমন যত খাবার আছে তারমধ্যে সব থেকে বেশি পুষ্টিকর
খাবার হচ্ছে ডিম। আনন্দের বিষয় হচ্ছে বেশিরভাগ বাচ্চারাই ডিম খেতে পছন্দ
করে।ডিমে রয়েছে প্রোটিন,খনিজ ও ভিটামিন।রয়েছে প্রচুর পরিমান কলিন, গুড ফ্যাট ও
কোলেস্ট্রল। আর তাই পুষ্টিবিদ্যা সুপার ফুড বলে অভিহিত করেন।গবেষণায় দেখা
গিয়েছে, ডিম খেলে শুধু বুদ্ধি বাড়ে না স্মৃতিশক্তি ও বৃদ্ধি পায়।বাচ্চার শরীরে
যদি যথেষ্ট পরিমাণে এসিড ও কলিন না থাকে তাহলে কিন্তু সঠিকভাবে ব্রেন এর বিকাশ
হবে না। তাই আপনার সন্তানের পাতে প্রতিদিন একটি হলেও ডিম রাখুন।
দুধ
আমরা কমবেশি সবাই জানি দুধ দুধের মধ্যে রয়েছে সকল ধরনের প্রোটিন ভিটামিন
মিনারেলস রয়েছে।যেটা তার স্নায়ুতন্ত্রের গঠন তার যে ডিএনটা খুব সুন্দর
করে।সেজন্য আমরা শিশুর খাদ্য তালিকায় ও দুধ জাতীয় খাবার ১-৫ বছর পর্যন্ত অবশ্যই
রাখবো।তবে এক্ষেত্রে সতর্কের বিষয় হচ্ছে ২ বছর পর্যন্ত শিশুকে কোনভাবেই সরাসরি
গরুর দুধ দেয়া যাবে না।আপনি ফর্মুলা মিল্ক দিতে পারবেন কিন্তু গরুর দুধ পারবেন
না কারণ এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্যাসিন।এটা আপনার শিশু নিতে পারবে না।আপনি
হয়তোবা দিচ্ছেন শিশু হজম করে ফেলছে বলে কিন্তু আপনার শিশুর জন্য ভবিষ্যতে
ক্ষতিকর হবে।কারণ এটা তার সেলে রিজার্ভ হয়ে থাকবে।আরেকটি প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম
সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে মিষ্টি ছাড়া দই ।প্রতিদিন অন্তত একবেলা যদি আপনার শিশুর
খাবারে দই রাখতে পারেন খুব সহজেই কিন্তু তার প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ
হয়ে যায়
বাদাম
বাদাম একটি অন্যতম খাবার। স্নাকস হিসেবে বাদামের ঝুড়ি নেই প্রতিদিন বিকেলে
বাদাম বা বিভিন্ন ডেজার্ট আইটেমে বাদাম দিতে পারি যেটাতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি
এসিড যা ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এ সহযোগিতা করে।চিনা বাদাম বা বিভিন্ন রকমের বাদামে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে যেটা শিশুর নিউরন সিস্টেম সুন্দর ভাবে গঠন
করে ফেলবে।এতে করে শিশুর বুদ্ধি যেমন বিকশিত হবে তেমনি তার চিন্তাশক্তি ডেভেলপ
করে।শিশুর খাদ্য তালিকায় ভিন্ন রকম বাদাম বা বাদাম দিয়ে তৈরি খাবার রাখা খুবই
জরুরী।তবে অতিরিক্ত বাদাম খেলে গ্যাস বা গ্যাস, এসিডিটি হতে পারে।
বীজ জাতীয় খাবার
বীজ জাতীয় খাবার যেমন সিম, মটরশুটি এগুলো তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও
মিনারেলস।বুদ্ধি বিকাশ করে ও চিন্তাশক্তি বাড়িয়ে দেয়।তাই শিশুর খাদ্য তালিকায়
প্রতিদিন কিছুটা হলেও বীজ জাতীয় খাবার রাখুন।
ওটস
সহজেই যদি কোন খাবার থেকে মেধা বিকাশ হয়ে যায় তাহলে আমরা দেখব যে সহজেই
যে পুষ্টিযোগ্য খাবারগুলো পাওয়া যায় এগুলো আমরা নিব।এতে কিছু কিছু খাবার
সাহায্য করে থাকে যেমন সিরিয়ালের মধ্যে ওট মিল।এটি কন্সটিপেশন দূর করে হাই
ফাইবার সমৃদ্ধ ও আয়রন রয়েছে।আয়রন বাচ্চাকে যথেষ্ট সজাগ সাহায্য করে।সকালের
খাবারে যদি বাচ্চাকে এটি খাওয়ানো হয় যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার।
ফল
বাচ্চাদেরকে খাবারের বিরতিতে কিছু কিছু ফল দিতে পারি।এখন প্রশ্ন হলো কোন জাতীয়
ফল?বেরি জাতীয় ফল স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি,ব্ল্যাকবেরি এই ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণ
এন্টি ইনফ্লামেটরি এজেন্ট।এটি পেটের গ্যাস কমাতেও সাহায্য করবে।এটি বাচ্চার রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে মেটাবলিজম বাড়াবে রুচি বাড়াবে আল্টিমেটলি বাচ্চার
চিন্তাশক্তি ও বাড়বে।
বিভিন্ন রংয়ের শাকসবজি
আমরা জানি বেশিরভাগ বাচ্চারাই শাকসবজি খেতে চায় না কিন্তু আপনি যদি আপনার
সন্তানের ভালো চান তাহলে ভাবেই হোক আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকায় কিছু না কিছু
শাকসবজি।যে উপায়ে রান্না করলে খাবে আপনাকে রান্না করে দিতে হবে।চাইলে আপনি
পাকোড়া বা বড়া বা ফ্রাইড রাইস এর সাথে হলেও সবজি খাওয়াতে হবে।চেষ্টা করুন
এগুলো গুড ফ্যাট দিয়ে রান্না করে খাওয়াতে যেমন আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী মাখন,ঘি
বা মাস্টার্ড অয়েল।এতে করে গুড ফ্যাট টিও পাচ্ছে আর ভেজিটেবলস থেকে মিনারেলস তো
পাচ্ছেই।এই দুটোর কম্বিনেশনে কিন্তু তার মেধা শক্তিটা বৃদ্ধি পাবে।
ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার
তৈলাক্ত মাছ বা ওমেগা-৩ বা সমৃদ্ধ খাবার যেগুলো হল আনসাইচুরিটেড ফ্যাটি অ্যাসিড
এই খাবারগুলো কিন্তু বাচ্চার মেধা বিকাশে সহায়তা করে বিশেষ সামুদ্রিক মাছ
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মাছ যেমন:কাতল মাছ,ইলিশ মাছ,পাবদা মাছ এ প্রচুর কলিন
রয়েছে।এগুলো যদি প্রতিদিন অল্প অল্প করে তাদেরকে দিতে পারি তাহলে কিন্তু বাচ্চার
স্নায়ুতন্ত্র বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
গবেষকদের মতে, হালকা ঘাটতিও যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্তর ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে
পারে।এজন্য আয়রন ও জিংক সমৃদ্ধ যে খাবারগুলো আছে যেমন মুরগির মাংস,কলিজা বা
গরুর মাংস হতে পারে অল্প পরিমাণে হলেও দিতে হবে।
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ শস্য জাতীয় খাবার
সর্বশেষ আমরা যে খাবারটির কথা বলব কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার আপনার বাচ্চার
খাবারে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কিন্তু রাখতে হবে।আমরা যদি প্রতিদিন এই
জাতীয় খাবার বাচ্চাকে দিয়ে তাহলে তার গ্লুকোজের লেভেলটাও বৃদ্ধি করবে এবং
বাচ্চার ব্রেনে যে মেটাবলিজম আছে সেটা ও রান করবে করবে।
লেখক এর শেষ কথা
সর্বশেষ যেটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে বাচ্চাকে আর্টিফিশিয়াল সুইটনার দেওয়া
থেকে বিরত থাকবেন।বাচ্চার খাদ্য তালিকায় মধু (১ বছর পর থেকে),আখের গুড়,খেজুর
গুড়,বাদাম পেস্ট,খেজুর পেস্ট,কিশমিস এই খাবারগুলো শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট খুবই
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তবে যে খাবারই দেন না কেন জোর করে খাওয়াতে যাবেন
না।বাচ্চা যখনই খেতে যাবে তখনই দিবেন এবং দেয়ার পূর্বে নিজে খেয়ে দেখবেন বাচ্চার
খাবারটি খেতে পারবে কিনা বা টেস্ট হয়েছে কিনা তাহলে দেখবেন আপনার বাচ্চা সুস্থ
থাকবে এবং সুন্দর মত বেড়ে উঠবে।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url