ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছের তালিকা

 ভূমিকা

সৌখিন মানুষেরা তাদের বাড়িতে করে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় নিজ নিজ বাড়িতে তৈরি করে থাকেন ছাদবাগান।পারিবার পুষ্টির চাহিদা পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে একহাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই ছাদ বাগান।হাত বাগান গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে উদ্ভিদ বা গাছ নির্বাচন।ছাদ বাগানে কোন গাছ কোথায় লাগাবেন বুঝতে পারেন না।আজকের এই আর্টিকেলে জানবো ছাদবাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ নির্বাচন, ছাদবাগানের পরিচর্যা।




ছাদ বাগানের জন্য গাছ নির্বাচন করতে হবে যার জাত খর্বাকার মূলের গভীরতা কম সারা বছর ফল দেয়ন এই জাতীয় গাছ নির্বাচন করতে হবে।চলুন জেনে নেয়া যাক সেগুলো কি কি।

ছাদে যেসব গাছ লাগাবেন  

  • সবেদা 
  • আম
  • পেয়ারা
  •  পেঁপে গাছ
  • লেবু গাছ 
  • পয়সা মালটা বা বারি-১ মাল্টা
  • ড্রাগন ফলের গাছ 
  • কামরাঙ্গা গাছ
  • আনার গাছ
  • জামরুল গাছ
  • আঙ্গুর 
  • লাউ
  • শসা
  • করোল্লা 
  • ধনেপাতা 
  • ক্যাপসিকাম 
  • মরিচ 
  • টমেটো 
  • বেগুন 
  • তুলসী 
  • নিম গাছ 
  • অ্যালোভেরা 
  • গাঁদা ফুলের গাছ
  • গোলাপ ফুলের গাছ 


১.সবেদা গাছ:আমার মতে, অল্প পরিচর্যায় এর মধ্যে একটি হচ্ছে সবেদা গাছ।যেহেতু এটি খেতে সুস্বাদ। তাই বাড়ির ছাদে সবেদা গাছ হলেও এই গাছটি লাগান।

২.আম গাছ:আপনারা আপনাদের বাগানে বিভিন্ন রকম লাগাতে পারেন।তবে কাটিমন,বারি-১১,থাই অল টাইম তিনটে ছাদ বাগানে অবশ্যই রাখার চেষ্টা করবেন।

৩.পেয়ারা গাছ:আপনারা আপনাদের ছাদ বাগানে বারোমাসি পেয়ারা যেমন:থাই-৫,থাই-৭ এই দুইটি ভ্যারাইটি রাখতে পারেন।আর সিজনাল পেয়ারা গাছের মধ্যে পলি পেয়ারা পেয়ারা ও মাধবী পেয়ারা লাগাতে পারেন।

৪.পেঁপে গাছ:ছাদ বাগানে একটি হলেও পেঁপে গাছ  লাগান।ছাদ বাগানের জন্য পেঁপে গাছ হলে আদর্শ গাছ।ছাদ বাগানে পেঁপের ফলন খুব ভালো হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৫.লেবুগাছ:ছাদ বাগানের অন্যতম কমন গাছ হল লেবু গাছ।লেবু ভিটামিন সি এর অন্যতম উপাদান ও এর ফলনও ভালো হয়।তাই ছাদ বাগানে বারোমাসি লেবু গাছ চাষ করুন।

৬.মাল্টা:ছাদ বাগানে যে সকল ভ্যারাইটির মালটা গাছ রাখা যায় তার মধ্যে বারি-১ মালটা সবচাইতে বেস্ট। মাল্টা গাছ রাখতে চাইলে এই ভ্যারাইটিটি রাখুন।

৭.ড্রাগন ফলের গাছ:ছাদবাগানে ৪/৫ টি ড্রাগন ফলের চারা থেকে অসংখ্য চারা তৈরি করতে পারেন।এই গাছটির তেমন কোন যত্নের ও প্রয়োজন হয় না।যেহেতু এটি খেতে সুস্বাদু তাই আপনারাও আপনাদের বাড়ির ছাদে এই ফলের গাছ লাগাতে পারেন।

৮.কামরাঙ্গা গাছ:ছাদ বাগানে একটি থাই মিষ্টি কামরাঙ্গা গাছ থেকে আপনিও সারা বছর কামরাঙ্গা পেতে পারেন ছাদে অনেক ভালো হয়। 

আরো পড়ুন:ছাদ বাগানের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা 

৯.আনার বা ডালিম গাছ:আপনি যদি আনার গাছ একটি বড় টবে প্রতিস্থাপন করেন তাহলেও আপনিও আনার গাছ থেকে অনেক আনার পেতে পারেন।

১০.জামরুল গাছ :ছাদ বাগানে জামরুল গাছের ফলন বেশ ভালো হয় আপনারা যারা জামরুল খেতে ভালোবাসেন তারা ছাদ বাগানে জামরুল গাছ লাগাতে পারেন।

১১.আঙ্গুর :আপনারা যারা আঙ্গুর পছন্দ করে তারা ছাদে আঙ্গুরের চাষ করতে পারেন তবে গাছ এনেই বড় কোন ড্রাম বা পাত্রে লাগাবেন না।এটি ছোট্ট একটি ব্যাগে লাগিয়ে দিন ছোট ব্যাগেই আঙ্গুরের ফলন দেওয়ার জন্য যথেষ্ট যদি এর জাত ঠিক থাকে।সঠিক জাত হলে ছোট্ট গাছ ও ছোট্ট ব্যাগেই আপনার ফলন চলে আসবে।

১২.লাউ :শীতকালীন সবজি হলেও এখন সারা বছর পাওয়া যায়।টব বা ছাদে লাউ চাষের জন্য দোআঁশ মাটি অথবা বেলে -দোআঁশ মাটি ব্যবহার করতে হবে।বেলে বেলে দওয়াশ মাটি ব্যবহার করলে জৈব সারের পরিমাণ একটু বেশি দিতে হবে।

১৩.শসা :খুবই জনপ্রিয় এবং খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।একটি গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ টি শসা আপনি পেতে পারেন।যেহেতু চারার মূল্য তাই আপনিও শসা গাছের চারা রোপন  করতে পারেন।

১৪:করলা গাছ :প্রায় সব মাটিতেই করলার গাছ হয়।তবে এর সঠিক পরিচর্যা করলে বাম্পার ফলন হয়।বেলে দওয়াশ মাটিতে এর ফলন সব থেকে ভালো হয়। 

১৫.ধনেপাতা :টবে বা ছাদে ধনেপাতা সুবিধা হচ্ছে প্রায় সারা বছরে চাষ করা যায়।সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায় তবে ধনেপাতা চাষের জন্য এঁটেল দোয়াশ মাটি উপযোগী।

১৬.ক্যাপসিকাম:বেলে- দোওয়াশ বা দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য ভালো।যে কোন সাইজের টবে এই গাছ রোপন করা যায়।তবে টবে এই গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত মাটি ও ৩০-৪০ দিন বয়সের চারা প্রয়োজন।

১৭.মরিচ:সহজে পরিচর্যা করা যায় ও বেড়ে ওঠে  এমন একটি গাছ হচ্ছে মরিচ গাছ।ছোট টবে লাগানো যায় একটি গাছ থেকে থেকে ১০০-২০০ টি মরিচ পাওয়া যায়।

১৮.টমেটো :সহজে বেড়ে ওঠে এবং প্রচুর ফলন দেয় এমন একটি গাছ হল টমেটো।লম্বা বা ছোট যেকোনো পাত্রে এটি চাষ করা যায়।

১৯.বেগুন:বেগুন আপনি চারা ও লাগাতে পারেন আবার চাইলে বীজ বপন করতে পারেন।

২০.তুলসী :আপনার ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ ও উপযুক্ত গাছ হচ্ছে বহু গুণে সমৃদ্ধ তুলসী গাছ।খুবই কম পরিচর্যা প্রয়োজন। ঠান্ডা কাশি উপশমে এর জুড়ি নেই। 

২১.নিম গাছ :এটি বড় টবে লাগানো যায় এর মূল্য কম।পোকামাকড় তাড়াতে ও ওষুধ বানানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।

২২.অ্যালোভেরা :অ্যালোভেরার একটি পাতা থেকে হবে গাছ। অ্যালোভেরা গাছের জন্য খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন নেই।চাষের জন্য কয়েকটি অ্যালোভেরার পাতা এমনভাবে সংগ্রহ করুন যেন নিচের দিকে সাদা অংশটি পাতার সঙ্গে থাকে। ঝরঝরে মাটির দিন টবে।

২৩.গাঁদা ফুলের গাছ :তবে বা ছাদ বাগানের কমন একটি গাছ হল গাঁদা ফুলের গাছ।চাষের জন্য এটেল ও দো আঁশ মাটি ভালো।তবে ভালোভাবে চাষ করলে অন্য মাটিতেও চাষ করা সম্ভব। 

২৪.গোলাপ গাছ :এটিও একটি টবে বা ছাদ বাগানের কমন একটি গাছ।গোলাপ গাছ বিভিন্ন রঙের ও প্রকারের হয়ে থাকে।বড় ও মাঝারি সাইজের টবে সহজে চাষ করা যায়।

পরিচর্যা 

টপ বা ড্রামে গাছ লাগানোর পর থেকেই আপনাকে এর সঠিক জন্য নিতে হবে না হলে আপনি ভাল ফলাফল পাবেন না। পরিচর্যা ছাড়া আপনি ভালো ফুল ফল পাবেন না।চলুন জেনে নেই হাত বাগানের গাছের পরিচর্যা।
#চারা লাগানো পর থেকেই নিয়মিত ২৫-৩০ দিন পর সরিষার ক্ষৈল পচা পানির সাথে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।আর সরিষার কই পচা দশ দিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর সেই খৈল পচা পানি পাতলা করে পানির এর সাথে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
#আরেকটি বিষয় গ্রামের যখন দুই থেকে তিন বছর হয়ে যাবে এখন এর মাটির পরিবর্তন করতে হবে।সেক্ষেত্রে প্রস্থের ২ ইঞ্চি ও গভীর ৬ ইঞ্চি শিকড়সহ টবের বা ড্রামের মাটি ফেলে দিয়ে নতুন করে গোবর ও অন্যান্য সার মিশ্রিত মাটি পুনরায় ভরাট করে দিতে হবে।এভাবে আপনার মাটিকে তিন ভাগে ভাগ করে প্রথমে সপ্তাহে একভাগ তারপরের মাসে আরেক ভাগ এবং বাকি অংশ তার পরের মাসে কিভাবে আপনি ড্রামের মাটির পরিবর্তন করতে পারেন।
#গ্রামের মাটি সাধারণত বর্ষার শেষে বা শীতের আগেই করা উত্তম।একটি বিষয় ১০/১৫ দিন পর পর ড্রামের মাটি খুচিয়ে উপর নিচ করে দিতে হবে এবং সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।কারণ গাছের পুষ্টির অভাব হলে ফুল ফল ঝরে যায়। 
#বিশেষ করে পটাশ ও ভরণ সারের অভাব হলে ফুল ফল ঝরে টাওয়ার প্রবণতা বেশি। সেজন্য অল্প পরিমাণে হলেও অন্যান্য সারের সাথে বরণ ও পটাশিয়াম দিতে হবে।এবং এটি বছরে দুইবার দেওয়াই উত্তম।যেটা বর্ষার শুরুতে ও শেষে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
#তাছাড়া গাছের গোড়ায় কোন প্রকার আগাছা রাখা যাবে না।আগাছা থাকলে পোকামাকড় আক্রমণ করবে জনিত রোগ হতে পারে।
#ফল গাছে নিয়মিত হালকা সেচ দিতে হবে গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে লক্ষ রাখতে হবে ও ড্রামের মাটি যেন শুকিয়ে না যায়  খেয়াল রাখতে হবে।
#আপনার গাছ যদি পোকায় আক্রান্ত হয় তবে সে আক্রান্ত স্থান বা ফল নষ্ট করে ফেলতে হবে।এবং সব থেকে ভালো হয় ফল আসার পর পলিথিন, কাপড় বা নেটের ব্যাগ দিয়ে ব্যাগিং করে দেওয়া।ব্যাগিং করে দিলে বিভিন্ন রকম পোকামাকড় এর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
#আপনার গাছ যদি আক্রান্ত হয়ে যায় প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হারে এসিকার মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করবেন। 
#ফল পচা রোগ বা গাছের গোড়া রোগ এই রোগগুলো হয় ছত্রাক জনিত কারণে তাই গাছের গোড়া সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। 
#টবে বা ছাদ বাগানে আরেকটি সমস্যা দেখা যায় হল ঝরে যায় ফল ফেটে যায় এটি কোন রোগ নয় পুষ্টির অভাবজনিত কারণে বা মাটিতে রসের তার ধর্মের কারণে হয়ে থাকে ফল ধরার পর ও পরিমাণমতো সেচ দিতে হবে।মাটিতে বরণ দিতে যদি সমস্যা হয় তাহলে আপনার গাছের মাটিতে ৪০গ্রাম হারে বরিক এসিড প্রয়োগ করতে হবে। 

থেকে বড় কথা হলো  আপনাকে ছাদবাগানে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে বিশেষ করে শীতের মৌসুমে বা খড়ার সময় পানি দিতে হবে যেন গাছ খড়ায় আক্রান্ত না হয়। আপনার বাগানকে ফুল ফল কিছু  ঔষধি গাছ দিয়ে সজ্জিত রাখবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url