ভূমিকা
চুল পড়া নিয়ে চিন্তা করে না কোন নারী-পুরুষ হয়তো খুব কমই পাওয়া যাবে।কেন পড়ে যাচ্ছে এটা ব্যক্তি বিশেষ অনেকে বুঝতেই পারছে না। একেকজনের ক্ষেত্রে একেকটা কারণে চুল পড়ে যাচ্ছে।আজকের এই ব্লগে আমরা জানব কিভাবে চুল পড়া রোধ করবেন।
প্রথমে আপনাকে যেটা বুঝতে হবে স্বাভাবিক ও অতিরিক্ত চুল পড়ার মধ্যে পার্থক্য। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার চুল পড়াটা স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক। আমরা অনেকেই জানি একজন মানুষ প্রতিদিন প্রায় ১০০ টি চুল হারায় আর যদি এই চুল পড়া অতিরিক্ত পর্যায়ে যায় আপনার বালিশ চিরুনি গোসলখানায় সব জায়গায় চুল দেখতে পান তাহলে বুঝবেন চুল পড়া স্বাভাবিক নয়। অনেক সময় দেখা যায় আপনি চুলে হাত দিলেই অনেক চুল উঠে আসে সেক্ষেত্রে এটা একটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।চলুন নেই চুল পড়ার কারণ গুলো কি কি এর সঠিক সমাধান আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন।
চুল পড়ার কারণ
#চুল পড়ার প্রথম যে কারণ সেটি হচ্ছে জেনেটিক সবথেকে তার কারণ হচ্ছে জেনেটিক।যার জিন যে রকম। একটা চুল ২-৬ বছর থাকে। এই চুল ২ বছর নাকি ৬ বছর থাকবে তা নির্ভর করে জেনেটিকের গ্রোথ phase এর ওপর।
#খাবারের প্রোটিন ও বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে যায়।
#আমরা যারা চিন্তা করি চুল কেন পড়ে যাচ্ছে শুধু এই চিন্তার জন্যই চুল পড়ে যায়।
#স্ট্রেস এমন একটা বিষয় যা আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা অর্গান কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আরে স্ট্রেসের কারণেই অধিক পরিমাণ চুল পড়তে থাকে।
#আপনারা যারা রাত জাগেন আজি রাত জাগা বন্ধ করুন।কারণ চুল পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি।
#পানি শূন্যতার কারণে চুল পড়ে
#বিভিন্ন সময় দেখা যায় মেয়েদের ও ছেলেদের হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় এরমধ্যে চুল পড়া একটি।
#চুলের অনেক ধরনের রোগ থাকতে পারে বিশেষ করে যাদের হরমোন জনিত রোগ জনিত রোগ যেমন পিসিওডি, থাইরয়েড ডেফিসিয়েন্সিতে আছে তাদের চুল পড়ে থাকে।
#ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টোরেন হরমোন ঠিক না থাকার কারণে চুল পড়ে যায়।এই হরমোন কমে গেলে চুল পড়তে থাকে।
#তাছাড়া অতিরিক্ত ওজন হলেও চুল পড়বে হলেও চুল পড়বে কারণ এখানে পুষ্টির একটা বিষয় থাকে।
#আয়রনের ঘাটটিজনিত কারণে ও আয়রনের বা শোষণ হবার কারণেও চুল পড়ে।
#তাছাড়া ভিটামিন ডি এর ঘাটতির কারণে চুল পড়ে যারা সানলাইটে সূর্যের আলোতে বের না হওয়া চুল পড়ার আরেকটি কারণ।
#ভেজা চুল আঁচড়ানোর কারণে ও অনেক সময় অনেক চুল পড়ে।
#এছাড়া শ্যাম্পু কন্ডিশনার ও অতিরিক্ত কেমিক্যাল বা অস্বাস্থ্যকর কারণে পড়তে পারে। অনেকে কন্ডিশনার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানেনা সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চাইতে বেশি চুল পড়তে পারে।
#আপনি কি ধরনের চুল চিরুনি ব্যবহার করছেন এটিও একটি কারণ।অনেকেই আছেন যারা একজনের চিরুনি অন্যজন ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের একটি সম্ভাবনা থাকে।
#তাছাড়া ভেজা চুল বাধার কারণে ও চুল পড়তে পারে।
চলুন আমরা জেনে নেই কিছু ঘরোয়া সমাধান।
চুল পড়া রোধে ঘরোয়া সমাধান
১।বিভিন্ন রকমের চিনা বাদাম কাঠবাদাম পেস্তা কাজুবাদাম এগুলোতে আছে ওমেগা 6 ফ্যাট যা চুলের গোড়া সতেজ রাখতে ও লম্বা করতে সাহায্য করে।
২।চুলের গোড়া বা ফলিকল যেখান থেকে চুল বড় হয় করতে দরকার ভিটামিন এ। তাই বিভিন্ন সবুজ ও হলুদ রঙের শাকসবজি ও ফলমূল যেমন গাজর, পেঁপে,মিষ্টি কুমড়া,মিষ্টি আলু এগুলো ভিটামিন এ তে ভরপুর।তাই চুলকে মজবুত রাখতে এই খাবারগুলো খাওয়া জরুরী।
৩।তৈলাক্ত মাছ বা ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ মাছ যেমন টুনা ফিস, সেমন ফিস এ খাবারগুলো খেতে পারেন। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশি মাছ যেমন ইলিশ কই,মলা, চাপিলা এগুলোতেও ওমেগা ৩ রয়েছে। তাই চুল ভালো রাখতে অবশ্যই এ খাবারগুলো খেতে হবে
৪।ডিম প্রোটিনের খুব ভালো একটি উৎস। খাবারের প্রোটিনের অভাবে চুল পড়ে যায় তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ডিম প্রতিদিন অন্তত একটি করে খান।
৫। পালং শাকের চারটা গুরুত্বপূর্ণ যা ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় ভিটামিন এ ভিটামিন সি,আয়রন ও ফলেট যা যা চুলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৬।গবেষণা থেকে আমরা জানি যে আয়রনের অভাবে চুল পড়ে তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপনি রাখতে পারেন ডাল। এতে আছে আয়রন ও প্রোটিন যা সুন্দর চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৭।বিভিন্ন বীজ মিষ্টি কুমড়ার বীজ সূর্যমুখীর বীজ এগুলো সুন্দর চুলের উপাদান
৮।তাছাড়া ছোলা চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন আইরন প্রোটিন রয়েছে তাই চুল সুন্দর রাখতে মাঝে মাঝে খাবারের তালিকায় ছোলা রাখতে পারেন।
৯।টপ ফল যেমন কমলা মালটা লেবু ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি আছে। যার চুলের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান
চুল পড়া রোগের চিকিৎসা
#কিছু রোগের কারণে চুল পড়তে পারে থাইরয়েডের রোগ, রক্তশূন্যতা।আপনি যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ ও পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও অতিরিক্ত চুল পড়ে তাহলে বুঝতে হবে অন্য কোন রোগ আছে।সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হবে।
#ওষুধ ছাড়াও আরো কিছু উন্নত চিকিৎসা যেমন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট,তাছাড়া পি আর পি থেরাপিতেও অনেকে উপকার পাচ্ছেন।
#স্ট্রেস বন্ধ করে দিন।এমন একটা জিনিস যে আমাদের শরীরের ভীষণ ক্ষতি করে। স্ট্রেস নেয়া বন্ধ করে দিন
#চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে দুশ্চিন্তা করা চিন্তা করা। তাই দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করে দিন
#যারা রাত জাগেন আজি রাত জাগা বন্ধ করে দিন রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পরুন।এই ঘুমটাই কিন্তু আপনার আবার পড়ে যাওয়া চুলকে রিপেয়ার করে দিবে।আপনার হরমোন যত ভালো থাকবে চুলের গ্রথ ও তত ভালো হবে।
#মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক নিয়মিত হচ্ছে কিনা থাইরয়েড ও পিসিওডি আছে কিনা সেটা চেক করতে হবে। নয়তো চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন না।
#শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকলে অটোমেটিক্যালি আপনার চুল পড়ে যাবে এবং চুলের গ্রোথ নষ্ট হয়ে যাবে।তাই ভিটামিন ডি চেক করুন।তাই ফটিফাইড ভিটামিন ডি যুক্ত তেল ও খাবার খান প্রয়োজনে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিন।
#আপনার বডি যেন ডিহাইড্রেট না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে ও যেকোনো বয়সের মানুষকে প্রতিদিন ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।
উপসংহার
পরিশেষে বলতে চাই বহুল পরিচিত করার সমাধান করতে হলে প্রথমে যেটা করতে হবে আপনার জীবন ধারার পরিবর্তন। শুধু দামি তেল বা বিভিন্ন পার্লারে গিয়ে দামি ট্রিটমেন্ট নিলেই হবে না যতক্ষণ না আপনি পর্যাপ্ত ঘুম দুশ্চিন্তা ত্যাগ করা ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করেন তাহলে এই সমস্যার বের হতে পারবেন না।উপরে বর্ণিত চুল পড়ার কারণ ও বন্ধের সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয়েছে তা স্বাস্থ্য বিষয় বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট নিয়মিত প্রতিবেদন করে থাকে।আর সেই আলোকেই বিভিন্ন কারণ ও উপায় আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি।এই নিয়মগুলো ধৈর্য সহকারে মেনে চললে আপনিও চুল পড়া রোধ করতে পারবেন।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url