হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী রাখতে যা যা করণীয়
বয়সের সাথে সাথে কি আপনার হাড় ক্ষয় হচ্ছে? আপনার কাজের সাথে শরীরের হাড় ও হাড়ের শক্তি তালমিলাতে পারছে না তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী রাখতে প্রথমেই আমাদের জানা প্রয়োজন হাড়ের জন্য কি কি উপাদান লাগবে।সেটা জানা থাকলেই সেই অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে পারবো।তবে শুধু খেলেই হবে না কিছু কাজ করা এবং কিছু জিনিস বর্জন করতে হবে তাহলে এটি ঠিকঠাক মতো তাহলেই এটি আমাদের শরীরে ঠিকঠাক মত কাজ করবে।
হাড়ের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা
বিভিন্ন কারণে হাড়ের স্বাস্থ্য অত্যাবশ্যকীয় কারণ এটি আমাদের সামগ্রিক
স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।আমাদের শরীরের অঙ্গ গুলিকে
নড়াচড়া করা এবং সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি শক্তিশালী হাড় গুলো আমাদের জীবিত
রাখে এমন পুষ্টি খনিজ গুলো সঞ্চয় করে।আমরা জানি বয়সের সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব
কমতে থাকে বিশেষ করে ৩০ এর পর থেকে।তাই সঠিক যত্ন ছাড়া বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন
:হাড়ে ব্যথা,দুর্বল হয়ে যাওয়া, ফ্রাকচার ও অস্টিওপেরেসিস এর মত দীর্ঘ মেয়াদী
সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।যেটা কিনা আপনার হাড়কে ভঙ্গুর করে তোলে এমনকি যেকোনো
ছোটখাটো এক্সিডেন্ট বা দুর্ঘটনায় আপনার হাড় ভেঙে যেতে পারে।তাই হাড়কে মজবুত ও
শক্তিশালী করতে আজি আপনার পরিবর্তন করুন লাইফ স্টাইলের।
হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী রাখতে যা যা করবেন
১.ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া:হাড়ের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
হচ্ছে।হাড়কে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে ক্যালসিয়ামের বিকল্প কিছু নেই। প্রতিদিন
খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার দই
পনির ইত্যাদি রাখুন আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী।এছাড়া অন্যান্য খাবারের মধ্যে
ব্রকলি ও বাদামও বেশ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
২.পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ :হাড়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান
হল ভিটামিন ডি। তবে সব খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না।বিয়ের একটি বড় উৎস হল
সূর্যের আলো।তাই ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণের জন্য যতটা সম্ভব সকালের সূর্যের আলোর
সংস্পর্শে থাকুন।পাশাপাশি চর্বিযুক্ত মাছ ও ডিমের কুসুম থেকে ভিটামিন চাহিদা
মেটাতে পারেন।
৩.ব্যায়াম করুন :শুধু খেলেই হবে না আপনার হাড়কে কর্মক্ষম রাখতে ব্যায়াম
করুন।নিয়মিত হাটা,জগিং,সুইমিং, ওজন ব্যায়াম করলে হাড় কর্মক্ষম হয়।হাড় যত
বেশি কর্মক্ষম হবে হাড়ের ক্ষয় ও তত কম হবে।
৪.ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করা :ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান স্বাস্থ্যের
উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আপনার হাড়কে ভালো রাখতে চাইলে অবশ্যই এই খারাপ
অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে।ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান সামগ্রিক স্বাস্থ্যের
জন্য ক্ষতিকর।এটি হাড়ের ডেনসিটি হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়।
শক্তিশালী হাড়ের জন্য যেসব খাবার খাবেন
হাড় কি শক্তিশালী রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ খুবই জরুরী।
চলুন জেনে নেই সেগুলো কি কি।
১.দুধ ও দুধের তৈরি খাবার
হাড়ের জন্য প্রধান যে উপাদানটি দরকার তা হল ক্যালসিয়াম।তাই হাড়কে সুস্থ
রাখতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ,দই,
পনির এগুলো রাখুন।দুধ ও দুধের তৈরি খাবার ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ফসফরাস,ভিটামিন
এ ও ডি এর ভালো উৎস।গবেষণায় জানা গেছে,নিয়মিত দই খেলে হাড়ের ফ্র্যাকচার
প্রতিরোধ করা যেতে পারে।তাই প্রতিদিন ক্যালসিয়াম যুক্ত দুই খান।
২.মটরশুটি ও সবুজ শাক
পালং শাক বাঁধাকপি পাতা লেটুস পাতা ইত্যাদি ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
ভিটামিন সি ও কে এর খুব ভালো একটি উৎস।ছোলা,মসুর ডাল,মটরশুটি ক্যালসিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের মত খনিজ গুলোর মিশ্রণ সরবরাহ করে। আপনাদের তাই
হাড়কে রাখতে চাইলে প্রতিদিন পাতে এগুলো রাখুন।
৩.চর্বিযুক্ত মাছ ও সামুদ্রিক মাছ
চর্বিযুক্ত মাছ ও সামুদ্রিক মাছ শরীরে ক্যালসিয়াম ভিটামিন
বি১২,ওমেগা -৩ সরবরাহ করে।ভিটামিন ডি হাড় ও জয়েন্ট গুলোকে শক্তিশালী করার জন্য
গুরুত্বপূর্ণ কারণ শরীরের এটি শরীরের ক্যালসিয়ামকে সঠিকভাবে সহায়তা করে।
৪.ডিম
আর কে ভালো রাখতে এর পাশাপাশি কিছু পরিমান প্রোটিন ও প্রয়োজন।ডিমের কুসুমে
ভিটামিন ডি ও প্রোটিনসহ হাড় ভালো রাখার অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানও
রয়েছে
৫.আমন্ড বাটার
আমন্ড বাটার বা কাজু বাদামের মাখন প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের বড় একটি উৎস।
কোলেস্টেরল কম থাকে হাড়ের পাশাপাশি হার্ট কেউ ভালো রাখে।সম্ভব হলে ১/২ চামচ
আমন্ড বাটার খান।
৬.ব্রকলি
এই সবজিটি ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি,পটাশিয়াম, ফসফরাস,ফলেট ও ভিটামিন কে দ্বারা
সমৃদ্ধ।চেষ্টা করুন সিজনের সময় প্রতিদিন এই সবজি আপনার পাতে রাখতে।
৭.বীজ জাতীয় খাবার
বিভিন্ন ধরনের বীজ যেমন চিয়া সিড, কুমড়ার বীজ, তরমুজের বীজ,তিনের বীজ,
সূর্যমুখীর বীজ এগুলো প্রোটিন, খাদ্য তালিকা গত ফাইবার, ফসফরাস ও আয়রন সমৃদ্ধ যা
শরীরও হাড়ের জন্য স্বাস্থ্যকর
৮.বাদাম
আমরা জানি বাদামে প্রোটিন,গুড ফ্যাট ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।গবেষণায় দেখা
গিয়েছে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের বাদাম সামগ্রিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হাড়ের জন্য
জন্য উপকারী।
৯.সাইট্রাস ফল
জাম্বুরা, কমলা, লেবু ইত্যাদি সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি এর সর্বোত্তম উৎস।যা
কোলাজেন গঠন হয় ও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
১০.হলুদ
হলুদের রয়েছে কারকিউমিন যা ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।
অস্টিওপিরোসিসের মত হাড়ের অবস্থার সাথে সম্পর্কিত প্রদাহ কমাতে সহায়তা
করে।তাছাড়া কাঁচা হলুদের রস ত্বকের জন্য বেশ ভালো।হলুদে থাকা আন্টি ইনফ্লামেটরি
উপাদান আর্থাইটির থেকে রক্ষা ও হাড়ের কোষ কে সুরক্ষা দেয়। অঙ্গ পতঙ্গের অঙ্গ
প্রতঙ্গের নাড়াচাড়ার অসুবিধা দূর করে।
তাছাড়া কিছু জাতের মাশরুম, সবুজ চা, শুকনো কুল অ্যাভোকাডো হাড়ের জন্য খুবই
ভালো।
হাড় ভালো রাখতে যা যা করবেন না
- বিভিন্ন রকম প্যাকেটজাত খাবার যেমন চিপস,ফ্রাই,সসেস, ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি চলা উচিত এতে থাকা লবণ হাড়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।তাই অস্টিওপেরোসিতে ভুগলে নোনতা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- ওজন কমাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের ডায়েট অনুসরণ করে থাকি।অনেক সময় দেখা যায় এতে শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি ও পুষ্টিকর খাবার গুলো বাদ পড়ে যায় ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা শুরু হয়
- বেশ কিছু গবেষণা প্রমাণ করে যে অতিরিক্ত মধ্যপান করলে অস্টিওপেরোটিক হবার ঝুঁকি থাকে
- প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ করা ক্যাফেইন গ্রহণ করা হাড়ের স্বাস্থ্যের অবনতি ও হাড়ের ফ্র্যাকচার এর সম্ভাবনা তৈরি করে। তাই ক্যাফিন পাওয়া যায় এমন পানীয় যেমন চা, কফি অতিরিক্ত পানকরা থেকে বিরত থাকতে হবে
- তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের কোল ড্রিংকস সামগ্রিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।এটি কিডনির পাশাপাশি হাড়ের ক্ষতি করে।
ওপরে বর্ণিত আলোচনা, তথ্য ও পরামর্শ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়
ওয়েবসাইট, বিভিন্ন গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের আলোকে আপনাদের সামনে তুলে
ধরা হয়েছে। তাই আশা করছি উপরে বর্ণিত আলোচনা মেনে চললে আপনিও মজবুত হাড় গঠন ও
অকালে হাড়ের ক্ষয় থেকে সুরক্ষা পাবেন।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url