বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় ও প্রতিকার

 বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় প্রতিকার নিয়ে ভাবছেন? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি প্রিয় পাঠক আপনার জন্যই। আজকের এই আঁটিকেলে বাতের ব্যথার দূর করার ঘরোয়া উপায়, বাতের ব্যথার লক্ষণ ও প্রতিকার সহ আরো বিভিন্ন বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

বাতের-ব্যথা-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়


বাত বা আর্থ্রাইটিস গিরা বা অস্থিরসন্ধির প্রদাহ। মূলত বাতের ব্যথা নিয়ে চলাফেরা টা খুবই কঠিন ব্যাপার। অনেকেই আছেন যারা এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেন আবার অনেকেই আছে পরামর্শ ছাড়া এবং বাতের ব্যথায় ভুগছেন। তবে বাতের ব্যথায় থেকে ত্রাণ পাওয়ার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা খুব কার্যকর।

পেইজ সূচিপত্র:বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় ও প্রতিকার

 বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় 

বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে হয়তো জানেন না। অনেকেই মনে করেন শুধু ওষুধ খেলেই বাতের ব্যথার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। প্রকৃতপক্ষে বাতের ব্যথার কোন নিরাময় নেই তবে আপনি যদি বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেন নিয়মিত এই কষ্ট থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ পাবেন। বাতের ব্যথা নিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম করাটা খুবই কঠিন।চলুনজেনে নেই বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায়

1. বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে সহজে যেটি করা যায় তা হল গরম পানির গরম পানির সেক দেওয়া। চিকিৎসকিরাও ঘরোয়া ভাবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন এতে করে ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।
2. বাতের ব্যথা মূলত ক্যালসিয়ামের ঘাটতি জনিত কারণে হয়ে থাকে তাই দাঁতের ব্যথা দূর করতে নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার মাছ ও ভিটামিন বি আছে জাতীয় খাবার খেতে হবে।
3. বিভিন্ন মসলা যেমন আদার রসুন হলুদ এ রয়েছে প্রদাহ জনিত গুণ যা বাতের ব্যথা দূর করতে জুড়ি নেই। নিয়মিত এর সকল মসলা কমবে বাতের ব্যথা 
4.বাতের ব্যথায় সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  হয় হাঁটু ও কোমর তাই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ওজন যদি বেশি হয় সে ক্ষেত্রে বাতের ব্যথার কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।
5. এছাড়া সরিষার তেল অলিভ অয়েল রসুন তেল ইত্যাদি ব্যথাস্থান এ মালিশ করলে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায় এবং ব্যথা অনেকটাই উপশম হয়।

বাতের ব্যথা উপশম করতে চিকিৎসকরা ব্যায়ামের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই ঘরোয়া কিছু ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করুন।বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া সমাধান গুলোর মধ্যে কার্যকর। অনেকেই মনে করেন বাতের ব্যথা বয়স বাড়ার সাথে সাথে হয় কিন্তু আসলে ব্যাপারটি তা নয় বাতের ব্যথা আজকাল যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শর পাশাপাশি নিয়মিত ঘরোয়া এই উপায়গুলো যদি অনুসরণ করেন তাহলে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।

 বাতের ব্যথার লক্ষণ 

বাতের ব্যথা বিভিন্ন ধরনের আছে যেমন ঘুম থেকে ওঠে অনেকেই বলেন গা হাত-পা ব্যথা করে বা জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা করে আবার অনেকেই বলেন পুরো শরীর আরষ্ট হয়ে আছে। কিন্তু দেখা যায় বেলা বাড়ার সাথে সাথেই ব্যথা কিছুটা কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে আঙ্গুল ফুলে যায় হাত মুঠো করা যায় না ইত্যাদি।এগুলো হল প্রধান ও অন্যতম উপসর্গ বা লক্ষণ।


একের ক্ষেত্রেই লম্বা সময় ডেস্ক ওয়ার্ক করার সময় ঘাড়ে পিঠে প্রচন্ড ব্যথা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে আবার সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় হাটুতে ব্যথা হয়। অনেক সময় জয়েন্ট ফুলে যায় ও শক্ত হয়ে যায়। অনেকেই এটাকে সাধারণ একটি রোগ মনে করে ওষুধে সেরে যাবে বিষয়টি আসলে এরকম না। আর্থাইটিস বা বাতের ব্যথা একটি ক্রনিক ডিজিজ এর জন্য কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ ও লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 গেটে বাতের লক্ষণ গুলো কি কি 

সাধারণত নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যায় তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে গেটে বাত হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। এক্ষেত্রে যাদের ওজন বেশি তাদের গেটে বাত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। সে ক্ষেত্রে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরী। ওজন বেশি হলে বাতের ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে। এটি একটি বিশেষ ধরনের বাত যা শরীরে ইউরিক এসির জমার কারণে হয়ে থাকে। গেটে বাতে লক্ষণগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
 
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পায়ের আঙ্গুলের গোড়া ফুলে যায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয় 
  •  ব্যথার সাথে শরীরে জ্বর অনুভূত হওয়া দুর্বল লাগা
  •  ব্যথা থাকাকালীন সময়ে ব্যথার স্থান গরম থাকা
  •  শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট এ ফুলে যায় হাড় ও টিস্যু ক্ষয় হতে থাকে 
  •  জয়েন্ট এর কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
  •  যেহেতু এটি শরীরে ইউরিক এসিড জমার কারণে হয়ে থাকে তাই কখনো কখনো  কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণে পিঠে ব্যথা ও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 বাতের ব্যথায় যেসব খাবার খাবেন 

 গবেষণা থেকে জানা যায় যে একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং সুন্দর লাইফ স্টাইল যেমন বাতের ব্যথা কমায় তেমনি একটি হৃদরোগ ও টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর ডায়েট দুইভাবে ক্ষতি কমায় প্রথমত এটি প্রদাহ কমিয়ে জয়েন্টের ক্ষতি প্রতিরোধ করে যা আর্থাইটিস রোগীদের জন্য অপরিহার্য দ্বিতীয়তঃ একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমরা জানি ওজন বেশি বাতের ব্যথা আরো বেশি বাড়িয়ে দেয়। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে তা  ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ আরো বাড়িয়ে দেয়। বাতের ব্যথায় শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরী চলুন জেনে নেই বাতের ব্যথায় যে সব খাবার খাবেন।

 স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েট শরীরের যেকোন প্রদাহ জনিত সমস্যা বিরুদ্ধে লড়াই করে।এ খাবারগুলোতে রয়েছে ভিটামিন মিনারেল ও পর্যাপ্ত এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের জয়েন্ট গুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং বাতের ব্যথা নিরাময় করে। বাতের ব্যথা নিরাময়ে প্রয়োজনীয় সাতটি খাবার এক ওমেগা 3 চর্বিযুক্ত খাবার শরীরকে  সুস্থ রাখতে বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করে বাতের ব্যথার রোগীদের জয়েন্ট শক্ত হয়ে থাকা, ব্যথা ফোলা ভাব  অনেকটাই কমে গিয়েছে।

ওমেগা 3 চর্বি সমৃদ্ধ খাবার এর কাজ :

  • ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ বিরোধী খাবার 
  • হৃদরোগ প্রতিরোধ করে 
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় 
  •  হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করে 

 ওমেগা 3 সমৃদ্ধ খাবার:

 1.প্রায় সব মাছেই ওমেগা 3 থাকে তবে সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন,ম্যাকেরেল,টুনা ও কর্ড এসব সামুদ্রিক মাছে প্রচুর ওমেগা 3 পাওয়া যায়।

 2.দেশি মাছের মধ্যে ইলিশ মাছ রূপচাঁদা মাছ পাঙ্গাস মাছ মাছ এ ওমেগা 3 পাওয়া যায়। শরীরে ওমেগা 3 চর্বি নিশ্চিত করতে আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সপ্তাহে অন্তত দুই বেলা ওমেগা 3 চর্বিযুক্ত মাছ খেতে বলেছেন।

 3.এছাড়াও উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে ওমেগা 3 পেতে তিসি বীজ, চিয়া বীজ ও ওয়ালনাট বা আখরোট বাদামের পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা ৩ থাকে। আপনারা সকালের নাস্তার সিরিয়ালে বা সালাদে, টক দই এ টেবিল চামচ তিসি বীজ বা চিয়া বীজ মিশিয়ে খেতে পারেন।

 ফলমূল বিশেষ করে গাঢ় ও উজ্জ্বল রং এর ফল:

 1.বাতের ব্যথা কমাতে কমাতে গাঢ় ও উজ্জ্বল রংয়ের কম মিষ্টি টক জাতীয় ফল যেমন বেরি জাতীয় ফল ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি,রাজবেরি রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

2.কালো ও সবুজ রঙের আঙ্গুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষা দেয়। 

3.গবেষণায় দেখা গিয়েছে কলা, আপেল, পেঁপে,বেদানা আনারস এ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ব্যথা নিরাময়ের সহায়ক

4. সাইট্রাস ফল যেমন কমলা জাম্বুরা লেবু ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভিটামিন সি প্রদাহ কমিয়ে জয়েন্টের ব্যথায়  সুরক্ষা দেয়।

 বিভিন্ন বিভিন্ন রকমের বাদাম :

  •  এটি প্রদাহ বিরোধী খাবার
  •  হৃদরোগ প্রতিরোধ করে 
  •  এছাড়া রিউমাটয়েড বা আর্থ্রাইটিস রোগের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। কারণ তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি।
  • ১০০০ খাবারের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে বাদাম বা নাটস হচ্ছে বিশ্বের সবচাইতে পুষ্টিকর খাবার।
  •  আমন্ড,চিনা বাদাম,পেস্তা বাদাম আখরোট হ্যাজেল নাট প্রায় সব রকম বাদামই খুব উপকারী 
  •  বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার,আয়রন, ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম,জিংক, ভিটামিন বি,ই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সবগুলোরে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাই আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন অল্প করে হলেও বাদাম রাখুন।
  •  কয়েক ধরনের বাদাম অন্তত দুই ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে কয়েকটা খেজুরের সাথে সকালবেলা খেয়ে দেখবেন শরীর প্রাণবন্ত ও সতেজ থাকবে 
  •  বাদাম আমাদের ইমিউন সিস্টেম বুস্ট করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

 বীনস বা শিম জাতীয় খাবার :

  •  এ জাতীয় খাবারের প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা আমাদের নার্ভ রিজেনারেশন সাহায্য এ করে এবং ব্রেনে ব্যথার অনুভূতি কম করে।
  •  ব্লাড সব ধরনের যেমন ব্ল্যাক বীনস, রেড কিডনি বীনস,  ছোলা, ডাল গবেষণায় দেখা গিয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি যৌগ থাকে যা প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথার রোগীদের সিম জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। প্রোটিনের একটি সস্তা ও চমৎকার উৎস।
  •  এক কাপ বীনস এ প্রায় ১৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে যা আমাদের পেশির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
  •  ছোলাতে আছে ভিটামিন বি ও সালফার যা আমাদের হাত পায়ের জ্বালাপোড়া কমায় 

 গাঢ় সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি :

  •  শাকসবজিতে রয়েছে ভিটামিন মিনারেলস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  •  এছাড়া সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীরের কোলাজেন তৈরি করে। শরীরের জয়েন্ট থেকে সুরক্ষা দেয় ও ফ্লেক্সিবিলিটি তে সহায়তা করে তাই নিয়মিত প্রতিদিন শাকসবজি খাবেন 
  •  যেমন পালং শাক, কেল শাক লেটুস ব্রোকলি বাঁধাকপি তে রয়েছে এত পরিমাণ ভিটামিন K যা আমাদের রক্তে প্রদাহের সূচক কমায় 
  •  ব্যথা নিরাময় প্রতিদিন দুই থেকে তিন টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল খুব জরুরী। অলিভয়েলে রয়েছে অলিওক্যানথাল নামে একটি যৌগ যা ব্যথা নাশক ওষুধের মত কাজ করে।
  •  গবেষণায় দেখা গিয়েছে অলিভ অয়েল বা এক্সট্রা ভার্জিন তেল ভিটামিন ডি এর সাথে মিশে শরীরের হাড় ক্ষয় থেকে সুরক্ষা দেয়।
  •  গ্রিন টি বা সবুজ চা এন্টি অক্সিডেন্ট ও আন্টি ইনফ্লামেটরি  বৈশিষ্ট্য যা ব্যথা নিরাময় উপকারী। রয়েছে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমায় ও জয়েন্ট এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়।
  •  দুধ ও  দুগ্ধ জাত খাবার ও ছোট মাছ প্রতিদিন খাবার চেষ্টা করুন এতে শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে।

যেসব খাবারে ব্যাতের ব্যথা বাড়ে

  ব্যাতের ব্যথা উপশমে পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। যেদিন যদি আপনি খাদ্য তালিকায় সুষম পুষ্টিকর খাবার রাখেন তাহলে বাতের ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো বাতের ব্যথায় খাওয়া উচিত নয়।ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড অতিরিক্ত চিনি ও লবণ, মদ্যপান এই অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ না করলে বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করাও জরুরি।
বাতের-ব্যথা-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়


  • অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন চকলেট ক্যান্ডি  কোল্ড ড্রিংস আইসক্রিমের অনেক মিষ্টি থাকে যা ব্যাতের ব্যথায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  •  এছাড়া প্রক্রিয়াজাত রেডমিট মাংস প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো 
  •  বিশেষজ্ঞদের মতে গম বার্লি  শস্য জাতীয় খাবারে  থাকে গ্লুটেন নামক বিশেষ প্রোটিন ব্যাতের ব্যথার সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  •  বাতের ব্যথায় অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ লবণে থাকে সোডিয়াম যা বাতের ব্যথা ও ফোলা ভাব সৃষ্টি করে।
  •  জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড,প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেট জাত খাবারের থাকে প্রচুর লবণ চিনি ফ্যাট যা প্রদাহ বাড়াতে সহায়তা করে। শুধু বাতের ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসের রোগী নয় সকল মানুষেরই এই ধরনের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
  •  টমেটো লেবু বেগুন আমরা জাতীয় আমরা জাতীয় ফল শেকড় জাতীয় ফল মানুষের ক্ষেত্রে বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই উচিত  এছাড়া হোয়াইট পয়জন যা সাদা আটা ময়দা সাদা চিনি এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। 
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বাতের ব্যথা বাড়ানোর ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে
  •  লাল মাংস যেমন গরুর মাংস খাসির মাংস ইত্যাদি তে ফসফরাস থাকে যা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে তাই এগুলো যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত।

 ব্যাতের ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা

বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় এর পাশাপাশি রোগীর ধরন অনুযায়ী ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা জরুরী বাতের ব্যথার ধরন অনুযায়ী একেক রোগীর জন্য চিকিৎসক একেক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন। বাতের ব্যথায় ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভাসের পরিবর্তন জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও ব্যায়াম আবশ্যক। অনেকেই আছেন ঘরোয়া পদ্ধতির পাশাপাশি চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করেন আবার অনেকেই আছেন ডাক্তারের কাছ থেকে কোন চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। এতে করে সমস্যা আরো জটিল হতে পারে। তাই রোগীর ধরন অনুযায়ী ডাক্তারের কাছ থেকে সঠিক চিকিৎসা নেওয়াটা খুবই।

 যদিও বাতের ব্যথার নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই তারপরেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করাটা আবশ্যক।যেহেতু বাতের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী একটি সমস্যা সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন এর ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ যেমন ফুসফুস কিডনি  লিভার হার্ট  ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই দীর্ঘদিন অসৎ সেবনের পরিবর্তে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। বাতের ব্যথার আধুনিক চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত বিষয় নিচে আলোচনা করা হলো 

1.প্রথমত,বাতের ব্যথার চিকিৎসায় চিকিৎসক প্রথমে যা করবেন তা হচ্ছে বাতের ব্যথার ধরন নির্ণয়। যেমন অস্টিও আর্থ্রাইটিস রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বাতের ধরন নির্ণয় করা 

2.দ্বিতীয়ত প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করা বাতের ব্যথার ধরন অনুযায়ী 

3. তৃতীয়ত ফিজিওথেরাপি, বাতের ব্যথায় ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী সমাধান। ফিজিওথেরাপি কে একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা বলা যেতে যা বাতের ব্যথা থেকে ত্রাণ পেতে এবং প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

ফিজিওথেরাপির বাতের ব্যথা উপশম করে জয়েন্টের নাড়াচাড়া স্বাভাবিক করে ও বেশি শক্তিশালী করে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সহায়তা করে।বিভিন্ন রকম ম্যানুয়াল ফিজিওথেরাপি, হাইড্রো থেরাপি বা জল থেরাপি, ব্যায়াম ও ইলেক্ট্রোরেপি এগুলোর মাধ্যমে জয়েন্টের স্বাভাবিক নাড়াচাড়া করা পেশির শক্তি বাড়ানো ব্যথা উপশম ও সঞ্চালন বাড়ায়।

 আরো পড়ুন :

 শীত ও বর্ষায় কেন বাতের ব্যথা বাড়ে?

 শীত ও বর্ষায় বাতের ব্যথা বাড়ে তার কারণ হলো শীতের আবহাওয়া রক্ত চলাচল কিছুটা কমে যায় বিভিন্ন রকম প্রদাহ বা ইনফ্লামেটরি যেমন রিউমাটয়েড আর্থাইটিস অস্টিওআর্থাইটিস,গাউট এই ইনফ্লামেশন গুলো ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেড়ে যায়।সেক্ষেত্রে করণীয় হলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ওষুধ ফিজিওথেরাপি এক্সারসাইজ ইত্যাদি প্রয়োজন। 

  • এই আবহাওয়ায় বায়ুর চাপ কম থাকার কারণে জয়েন্ট ও টিস্যুতে হ্যাঁ হতে পারে। তবে সব ধরনের বাতের ব্যথা বাড়বে এমনটিও নয়।
  • অনেকেই আছি যারা শীতে কম পানি  করে থাকি এতে শরীরে তরলের ঘাটতির কারণে মাংসপেশির আড়ষ্টতা বেড়ে যায় ফলে বাতের ব্যথা বাড়ে।
  •  এছাড়া শীতকালে মানুষ চলাচল ও কাজকর্ম কিছুটা কমিয়ে দেয় এতে করে শরীরের অস্থির সন্ধি শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা বেড়ে যায়।
  •  শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কম যাওয়ার কারণে পেশি ও অস্থিসন্ধি গুলোর চারপাশের টিস্যু শুকিয়ে সংকুচিত হয় এবং বাতের ব্যথা বেড়ে যায় 
  •  তাই সে তো বর্ষায় প্রয়োজন অনুযায়ী হাঁটাচলা কিছু কাজকর্ম করা ব্যায়াম করা,গরম পানির সেঁক দেওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা আবশ্যক।

বাতের ব্যথায় যে সকল ব্যায়াম করবেন

 বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে ব্যায়াম প্রদাহ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে জয়েন্টের স্বাভাবিক নড়াচড়া,পেশী শক্তিশালী করে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সহায়তা করে। বাতের ব্যথায় কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে যেমন : হাটা, যোগ ব্যায়াম, হাফ স্কোয়াট, লেগ রেজ,পুশ আপ সাঁতার বা জলজ ব্যায়াম।
 হাটা একটি  সহজ ব্যায়াম স্বাভাবিক নাড়াচাড়া বৃদ্ধি করে পেশী কে শক্তিশালী করে তোলে। হাফ স্কোয়াট  ব্যায়াম দাঁড়িয়ে করতে হয়। এ ব্যায়ামে মূলত হাত দুটি সামনের দিকে তুলে ধরে অল্প বসার চেষ্টা করুন অর্থাৎ অর্ধ বসার ভঙ্গি করে আবার দাঁড়িয়ে পড়তে হয় এভাবে 10 থেকে 15 বার করুন। এই ব্যায়ামে প্রথমে হয়তো একটু ব্যথা করতে পারে কিন্তু ধীরে ধীরে এই থাক চলে যাবে। লেগ রেজ ব্যায়ামের ক্ষেত্রে মাটিতে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন দুই হাত মেঝেতে রাখুন। এবং পা দুটি ধীরে ধীরে উপরে তুলুন এভাবে প্রায় ১০ সেকেন্ডের মতো রেখে দিন তারপর আবার নামিয়ে ফেলুন।

 এছাড়া রয়েছে পুসাদ যা মাটির দিকে মুখ করে দুই হাত ও পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে মাটি থেকে দেহ সমান্তরাল ভাবে তুলে ধরতে হয় একে অতি পরিচিত ব্যায়াম আমরা অনেকেই জানি। কোনায় ভাঁজ করে একবার মাটির দিকে এবং কোন সোজা করে আরেকবার মাটি থেকে দূরে সরে যেতে হয়। এছাড়াও সাতার বা জলজ ব্যায়াম যোগ ব্যায়াম জয়েন্ট এর ওপর চাপ কমাতে খুব ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে। আপনি যদি নিয়মিত যদি ব্যায়ামগুলো তাহলে বাপের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে এবং শরীর হালকা অনুভূত হবে।তবে এক্ষেত্রে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

 বাতের ব্যথার প্রতিকার

 বাতের ব্যথা একটি সাধারন সমস্যা এটি যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে তবে বিশেষ করে মধ্যবয়স্ক ও বয়স্ক মানুষ এর মধ্যে এই রোগটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে যা পুরো শরীরের ওপরে প্রভাব ফেলে। বাতের ব্যথার কয়েকটি কারণ রয়েছে এর মধ্যে একটি হল জেনেটিক অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কিত আত্মীয়-স্বজন কারো মধ্যে এটি থাকলে পরবর্তী জেনারেশন এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।পরিবেশগত কারণ ভাইরাস জ্বর এমন কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর ভাব দেখা দিয়েছিল এরপর অনেকেই বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছে। চিকুনগুনিয়া ছাড়াও সাধারণ ভাইরাস জ্বর থেকেও এই ব্যথায় আক্রান্ত হয় অনেকেই।

 কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে ওজন বেড়ে যাওয়া যা হাঁটুর ও জয়েন্ট এর উপরে প্রভাব ফেলে এটিও বাত ব্যথার আরেকটি কারণ। আবার অনেকেই আছেন অতিরিক্ত পরিশ্রম করে এর ফলেও বাতের ব্যথা হতে পারে। এছাড়া বয়স জনিত কারণে মানুষের বোন ডেন্সিটি বা হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে এর ফলে বাতে ব্যথা বাতের ব্যথা হয়।এছাড়া উপরে উল্লেখিত কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই বাতের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত ব্যায়াম
  • খাদ্য অভ্যাস এর পরিবর্তন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ 
  • জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন
  • চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা
  • প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদির মাধ্যমে বাতের ব্যথা প্রতিকার করা সম্ভব।
  •  ওপরে উল্লিখিত পদ্ধতিতে যদি প্রতিকার না করা যায় সে ক্ষেত্রে অস্ত্র পাচারের প্রয়োজন হতে পারে।

 শেষ কথা:বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় ও প্রতিকার

 বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় প্রতিকার এর লক্ষণসমূহ, বাতের ব্যথা উপশম এ প্রয়োজনীয় খাবার ও ব্যায়াম সম্পর্কে তুলে ধরেছি। বাতের ব্যথার একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং এর কোন প্রতিকার নেই তবে উপরে উল্লেখিত প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে বাতের ব্যথার দূর করার নিয়ম যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন সে ক্ষেত্রে বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং জীবনযাত্রা সহজ হবে।

 বাতের ব্যথা উপশমের পর্যাপ্ত ঘুম বিশ্রাম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা পেশির উপরে চাপ সৃষ্টি করবে এবং প্রদাহ বাড়বে।সেক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।প্রিয় পাঠক আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেল প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন আশা করছি উপকৃত হবেন। আমার এই আজকের আর্টিকেল এর বিভিন্ন তথ্য আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট, চিকিৎসকের পরামর্শ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি।















 






 





















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url