ছাদ বাগানের উপযুক্ত গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

 

ছাদ বাগানের উপযুক্ত গাছ কোনগুলো তা ভাবছেন? তাহলে আমার আজকের আর্টিকেল আপনার জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটিতে ছাদ বাগান অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

ছাদ-বাগানের-উপযুক্ত-গাছ

সৌখিন মানুষেরা সুন্দর ও ঠান্ডা রাখার জন্য একান্তই নিজস্ব ভাবনায় প্রচেষ্টায় নিজ নিজ বাড়িতে তৈরি করেন। অনেকেই আছেন যারা কি কি চাষ করা যায় আজকে আর্টিকেল আমরা সেই বিষয় সম্পর্কে জানব  বিস্তারিত আলোচনা।

 পেইজ সূচিপত্রঃ ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ

ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছের তালিকা

 ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে যেমন গাছের আকার আকৃতি আপনার এলাকার আবহাওয়া, মাটি,পর্যাপ্ত সূর্যালোক রয়েছে কিনা এবং গাছের জাত  নির্বাচন এবং পরিচর্যার অভিজ্ঞতা। বর্তমানে পারিবারিক
 পুষ্টির  চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ছাদ বাগান। আর এই ছাদ বাগানের গুরুত্বপূর্ণ ভাব হচ্ছে উপযুক্ত গাছ নির্বাচন। চলুন আমরা জেনে নেই ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ কোনগুলো।
  1.  সবেদা : আমার মতে অল্প পরিচর্যা করা যায় এমন গাছের মধ্যে সবেদা গাছ হল একটি। যেহেতু এটি খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তাই ছাদে একটি হলেও সবেদা গাছ লাগানো উচিত।
  2.  আম: আপনারা আপনাদের বাগানে বিভিন্ন রকম আম গাছ লাগাতে পারেন তবে কাটিমন, বারি ১১ থাই অল টাইম এই তিন ধরনের আম গাছ অবশ্যই লাগানোর চেষ্টা করুন।
  3.  পেয়ার গাছ: ছাদ বাগানে বারোমাসি পেয়ারা যেমন থাই ৫, থাই ৭ এ দুটি ভ্যারাইটি রাখতে পারেন। পেয়ারা গাছের মধ্যে পলি পেয়ারা ও মাধবী পেয়ারা লাগাতে পারেন।
  4.  লেবু গাছ:ছাদ বাগানের অন্যতম পরিচিত গাছ হচ্ছে লেবুর গাছ এবং এর ফলন ভালো হয়। ছাদ বাগানে বারোমাসি লেবু চাষ করুন।
  5.  পয়সা মালটা বা বারি ১ মালটা : ছাদ বাগানে যে সকল মালটা গাছ রাখা যায় তার মধ্যে বারি ১ মাল্টা পয়সা মালটা সব থেকে ভালো।
  6.  ড্রাগন ফলের গাছ :ছাদ বাগানের ৪ থেকে ৫টি ড্রাগন ফলে চারা থেকে অসংখ্য চারা তৈরি করতে পারবেন। এই ফল গাছটির জন্য তেমন কোন যত্নের প্রয়োজন নেই।
  7.  পেঁপে গাছ : ছাদ বাগানের জন্য পেঁপে হল একটি আদর্শ গাছ ছাদ বাগানে পেঁপের ফলন খুব ভালো হয় এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
  8.  কামরাঙ্গা গাছ : ছাদ বাগানে একটি থাই মিষ্টি কামরাঙ্গা গাছ থেকে আপনিও সারা বছর কামরাঙ্গা পেতে পারেন ছাদে এই গাছ অনেক ভালো হয়।
  9.  আনার বা ডালিম গাছ : আপনি যদি ছাদে একটি বড় তবে অথবা বালতিতে ডালিম গাছ প্রতিস্থাপন করতে পারেন তাহলে আপনিও এখান থেকে অনেক আনার পেতে পারেন।
  10.  জামরুল গাছ :বাগানে জামরুল গাছের ফলনও বেশ ভালো হয় আপনারা যারা জামরুল খেতে ভালোবাসেন তারা ছাদ বাগানের জন্য এই গাছটি নির্বাচন করতে পারেন।
  11.  আঙ্গুর গাছ: ছাদে আঙ্গুর চাষ করতে হলে গাছ এনেই বড় কোন ড্রামে বা টবে আঙ্গুর লাগাবেন না। এটি ছোট্ট একটি ব্যাগে লাগিয়ে দিন। ছোট ব্যাগে আঙ্গুরের ফলন দেয়ার জন্য যথেষ্ট যদি গাছের জাত ঠিক থাকে। ঠিক জাত হলে ছোট গাছ ও ছোট ব্যাগেই আপনার ফলন চলে আসবে।
  12.  লাউ গাছ : শীতকালীন সবজি হলেও এখন সারা বছর লাউ পাওয়া যায় তবে ছাদে লাউ চাষের ক্ষেত্রে দোআঁশ অথবা বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করতে হবে। যদি বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করেন তাহলে জৈব সারের পরিমাণ একটু বেশি দিতে হবে।
  13.  শসা: শশা গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় একটি শসা গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ টি শসা পেতে পারেন। এর চারার মূল্য কম তাই আপনিও একটি শসা গাছ রোপন করতে পারেন ছাদে।
  14.  করল্লা : প্রায় সব মাটিতেই করল্লা গাছ হয়। সঠিক পরিচর্যা করলে করল্লা গাছে বাম্পার ফলন হয়। বেলে দোআঁশ  মাটিতে এর ফলন সব থেকে ভালো হয়।
  15.  ধনেপাতা : টবে ধনেপাতার সুবিধা হচ্ছে সারা বছর চাষ করা যায়। সব ধরনের মাটিতেই ধনেপাতা চাষ করা যায় তবে এটেল দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী।
  16.  ক্যাপসিকাম : বেলে দোআঁশ অথবা দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য ভালো। যে কোন সাইজের টবে এই গাছ রোপন করা যায়। তবে এ গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত মাটি ও ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সের চারা প্রয়োজন।
  17.  মরিচ : টবে লাগানো যায় এবং সহজে পরিচর্যা করা যায় এমন একটি গাছ হচ্ছে মরিচ। ছোট টবে লাগানো যায় একটি গাছ থেকে ১০০ থেকে ২০০ টি মরিচ পাওয়া যায়।
  18.  টমেটো: সহজে বেড়ে ওঠে এবং ভালো ফলন দেয় এমন একটি গাছ হচ্ছে টমেটো বড় কিংবা ছোট যেকোন পাত্রে চাষ করা যায়।
  19.  বেগুন : বেগুন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে আপনি চাইলে চারা লাগাতে পারেন চাইলে বীজ ও বপন  করতে পারেন।
  20.  তুলসী: বহুগুণ সমৃদ্ধ ছাদ বাগানের জন্য একটি  আদর্শ গাছ হচ্ছে তুলসী। এর পরিচর্যা ও খুব কম লাগে। ঠান্ডা কাশি উপশমে জুড়ি নেই।
  21.  নিম গাছ: এটি বড় টবে লাগাতে হয় যার মূল্য কম। খুব কম পরিচর্যা প্রয়োজন। পোকামাকড় দাঁড়াতে ও ওষুধ বানানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
  22.  অ্যালোভেরা : অ্যালোভেরা চাষের জন্য কয়েকটি পাতা এমনভাবে সংগ্রহ করুন যেন নিচের দিকে সাদা অংশটি পাতার সঙ্গে থাকে টবে ঝরঝরে মাটি দিন। অ্যালোভেরা গাছের জন্য খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন নেই।
  23. গাঁদা ফুলের গাছ: ছাদ বাগান ও বেলকনির একটি বহুল পরিচিত একটি গাছ গাঁদা ফুলের গাছ। চাষের জন্য এটেল ও দো আঁশ মাটি ভালো তবে ভালোভাবে চাষ করতে পারলে অন্য মাটিতেও চাষ করা যায়।
  24.  গোলাপ ফুলের গাছ: এটি ও ছাদ বাগানের কমন একটি গাছ। গোলাপ গাছ বিভিন্ন রঙের ও প্রকারের হয়ে থাকে। বড় ও মাঝারি সাইজের টবে সহজে চাষ করা যায়।

টবে কি কি ফুল গাছ লাগানো যায়?

 অল্প রোদে সারা বছর যে সব ফুল গাছ লাগানো যায় বা যাদের বারান্দায় অল্প সময় রোদ থাকে যেমন পূর্ব-পশ্চিম দক্ষিণের বারান্দায় তারা চাইলে পরিচিত একটি ফুল গাছ অপরাজিতা এই গাছটি আপনার টবে লাগাতে পারেন।৩ থেকে ৪ ঘন্টা রোদ পেলেই যথেষ্ট এই গাছটির জন্য। সারা বছর অল্প রোদে আপনি এই গাছটি থেকে ফুল পাবেন। বারান্দায় গোলাপ, নয়ন তারা,চন্দ্রমল্লিকা,গাঁদা, নয়ন তারা প্রভৃতি গাছ টবে লাগাতে পারেন। তবে আপনার বাড়ির ছাদে যদি জায়গা থাকে তাহলে বড় বা মাঝারি ফুলের গাছ যেমন জবা, টগর,ডালিয়া, শিউলি ফুল , জুঁই, বাগান বিলাস ও হাসা হেনা ফুল গাছ লাগাতে পারেন।

 টবে ফুল গাছ লাগানোর পদ্ধতি

 টবে ফুল গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে যেটা মনে রাখতে হবে নার্সারি থেকে গাছ এনে ওই দিনই  সাথে সাথে গাছ লাগাতে যাবেন না। অন্তত তিন থেকে চারদিন আপনার বাসার ছায়া স্থানে ওই ভাবেই রেখে দিন। তাহলে আপনার বাসার ওয়েদারের সাথে কাজগুলো এডজাস্ট হয়ে যেতে পারবে।এতে করে গাছগুলো লাগানোর পর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে ফুল গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে ভার্মি কম্পোস্ট, হাড়ের গুড়া,  গোবর সার পঁচা পাতা ইত্যাদি মাটির সাথে মেশাতে পারেন।
 পদ্ধতি :
সারগুলো ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে নিবেন। আর মাটির যে দলগুলো থাকে সেগুলো ভালো করে ভেঙে নেয়ার চেষ্টা করবেন। টবে গাছ লাগানোর সময় মাটির ভাঙা টুকরা অথবা মোটা কাগজ ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনি যখন গাছে পানি দিবেন তখন কাদা পানিটা বের হবে না আর বারান্দাটাও পরিষ্কার থাকবে। টবে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে তিন ভাগের একভাগ আগে মাটি দিতে হবে তারপর টবের ভেতর গাছ বসাবেন। এরপর বাকি দুই ভাগ মাটি চারপাশে পরিপূর্ণ করে দিতে হবে। মাটি দেয়ার পর যদি সমান না হয় একটু ঝাকি  দিলেই চারপাশটা সমান হয়ে যায়।

 তবে আপনি যদি ছাদে টবে গাছ লাগান আর টবটি যদি বড় হয় তবে টবের সিডের উপরে মাটির ভাঙ্গা টুকরা অথবা মোটা কাগজ আর উপরে প্রথমে ইটের খোয়ার লেয়ার দিতে হবে তার উপরে বালির লেয়ার দিবেন এরপর তার উপরে মাটি দিবেন তারপর গাছ টবে লাগাবেন। যেহেতু ছাদের গাছে বেশী পানি দেওয়া হয় তাহলে দ্রুত পানিটা বের হতে পারে।

ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত ফল গাছ 

 অনেকেই মনে করেন বাসার ছাদে অপেক্ষাকৃত একটি ছোট ফলের গাছ লাগানো ভালো কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ বাগানিদের মতে ছাদ বাগানে কলম করে ছোট বড় সব জাতের ফল গাছ লাগানো যায়। আপনারা চাইলে হাইব্রিড বা বামন জাতের ফল গাছ নির্বাচন করতে পারে না এতে ভাল ফলন পাবেন। তবে যে কোন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে গাছের সঠিক জাত নির্বাচন,মাটির ধরন ও পরিচর্যা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। নাহলে আপনি ভালো ফল পাবেন না। ফল গাছের জন্য দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী।


ছাদ-বাগানের-উপযুক্ত-গাছ



ছাদ বাগানের জন্য আপনি যে সকল ফল গাছ লাগাবেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সবেদা, বাড়ি ১১ থাই অল টাইম, পেয়ারা যেমন থাই ৫ থাই ৭ দুটি জাত রাখতে পারেন। মালটা গাছের মধ্যে পয়সা মাল্টা বা বারি ১ মালটা, ড্রাগন ফলের গাছ পেঁপে গাছ, থাই মিষ্টি কামরাঙ্গা গাছ লাগাতে পারেন। এছাড়াও লাগাতে পারেন জামরুল গাছ ডালিম গাছ আঙ্গুর গাছ। এছাড়া বড়ই গাছের মধ্যে বারি কুল ১ এক বারিকুল ২,বারি কুল ৩, আপেল কুল প্রভৃতি ফলের গাছ লাগাতে পারেন।

  ছাদ বাগানের জন্য বারোমাসি ফল গাছ নির্বাচন 

 মাসির ফল গাছগুলোর সহজেই লাগাতে পারেন আপনার বাড়ির ছাদের টবে অথবা বাড়ির আঙিনায়। এ সকল ফল গাছগুলো থেকে সারা বছর ফল পাওয়া যায় আপনি পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা সহজেই আপনার এই ছাদবাগান থেকে মেটাতে সক্ষম হবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে গাছের জাল নির্বাচনের জন্য প্রসিদ্ধ কোন নার্সারি থেকে নিতে হবে। গাছের জাত  নির্বাচন ভালো না হলে ভালো ফলাফল পাবেন না।বারোমাসি ফল গাছের মধ্যে যে ফলগুলো লাগাতে পারেন তা হল :

 মিষ্টি তেতুল : এ থাই ভ্যারাইটি মিষ্টি তেতুল গাছ সারা বছরে হঠাৎ বছরে দুইবার ফল দিয়ে থাকে
 মিষ্টি আমড়া: থাই ভ্যারাইটির এই মিষ্টি আমড়া আপনার বাড়ির ছাদে অথবা উঠানে, টবে লাগাতে পারেন। রয়েছে বারি আমড়া ১ খাটো প্রকৃতির এই আমড়া টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত এই আমরা সারা বছরই ফল দেয়।
 সবেদা : মিষ্টি স্বাদ যুক্ত এই ফল বারি সবেদা ১ ও থাই ভ্যারাইটি এই জাতগুলো সে আপনার বাড়ির ছাদে টবে লাগাতে পারেন।
 বারো মাসি শরিফা ফল : এই ফলটি আপনি অনায়াসেই বাড়ির ছাদে টবে লাগাতে পারেন তবে অবশ্যই গাছের জাত সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ভালো একটি নার্সারি থেকে সংগ্রহ করে তারপরে গাছ লাগান।
 পেয়ারা গাছ : বারোমাসি জাতের পেয়ারা গুলোর মধ্যে থাই পেঁয়ারা ৫, থাই পেঁযারা ৮ এ জাত গুলো লাগাতে পারেন। এছাড়াও কাজি পেয়ারা যা বছরে দুইবার ফলে এটিও আপনি লাগাতে পারেন। লাগাতে পারেন বারি-৪ পেয়ারা।
 কামরাঙ্গা :থাই কামরাঙ্গা, বারি-১ মিষ্টি স্বাদযুক্ত এই কামরাঙ্গা ছাদে লাগাতে পারেন। বারি কামরাঙ্গা ১ বছরের তিন বার ফল দেয়।
 আম গাছ : বিভিন্ন জাতের আম গাছের মধ্যে কাটিমন থাই অল টাইম,বারি ১১ তিন জাতের আমগাছ লাগাতে পারেন। এ সকল জাত গুলো থেকে আপনার সারা বছরে আম পেতে পারেন।
লেবু গাছ: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই লেবু জাত গুলোর মধ্যে পাতি লেবু বারি লেবু ৪ অনায়াসেই আপনি লাগাতে পারেন।
জাম্বুরা: এছাড়াও আপনি লাগাতে পারেন আপনার বাড়ির ছাদে থাই জাম্বুরা 
মালটা: ছাদ বাগানে জন্য পয়সা মালটা ও বারি মালটা ১ অনায়াসে লাগাতে পারেন 
বারোমাসি কুল: বারোমাসি কুল যেমন আপেল কুল বল সুন্দরী, থাই আপেল সারা বছর এই জাতগুলো ফল দিতে সক্ষম।

 ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত সবজির গাছ

 আপনারা ছাদ বাগানে সিমেন্টের বস্তায় জিও ব্যাগ বা টবে নানা রকম শাক সবজি চাষ করতে পারেন। এই সবজিগুলো বারোমাসি সবজি সারা বছর চাষ করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে প্রথমে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। সিমেন্টের বস্তায় বা টবে দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করে নিবেন। মাটির উপরে শাক সবজির ফলন অনেকটা নির্ভর করে। দোআঁশ মাটি টা খুব ভালোভাবে তৈরি করে নিবেন। ছাদে তবে বা বস্তায় আপনারা যে সকল সবজি ১২ মাস চাষ করতে পারবেন তা হল :

 ঢেঁড়স : আপনারা টবে বা বস্তায় ঢেঁড়স চাষ করতে পারেন যেমন বারি ঢেঁড়স, পেন্টাগ্রিন জাপানি জাপানি প্যাসিফিক গ্রীন জাতের ঢেঁড়স চাষ করতে পারেন। বীজ বুনার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে  ফুল ফোটার চার দিনের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে।
 করল্লা : সেপ্টেম্বর মাসে বারোমাসি করলা চাষ করা যায়। আপনি ছাদে বারি করল্লা ১, বারি করলা ২ ও বুলবুলি জাতের করল্লা চাষ করতে পারেন।
 লাউ : আগস্ট মাসের শেষের দিকে লাউ চাষ করতে পারেন সময়টা হচ্ছে লাউ চাষের মৌসুম। স্ত্রী ফুল পরাগায়নের ১২ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।
 বেগুন : শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য জুলাই মাসের মাঝামাঝি হতে আগস্ট মাস এবং বর্ষাকালীন বেগুন চাষ করার জন্য বপন মার্চ মাসে বীজ বপন করা যায়।
 সিম : বর্ষায় খুব সহজেই সিম চাষ করা যায় আমাদের দেশে হাইব্রিড জাতের সিম খুব জনপ্রিয়।
শসা: টবে আপনারা বারোমাসি শসা চাষ করতে পারেন।
 বীজ লাগিয়ে দেওয়ার চার ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। গ্রিনকিং শিলা ও আলাভী জাতের শসা চাষ করতে পারেন।
টমেটো : সহজে বাড়ে এবং ভালো ফলন দেয় এমন একটি গাছ হচ্ছে টমেটো আপনারা আপনাদের ছাদ বাগানে একটি টমেটো গাছ অবশ্যই রাখতে পারেন।
আপনারা টবে বা বস্তায় মিষ্টি কুমড়া ধনিয়া পাতা ও মরিচ চাষ করতে পারেন।
ক্যাপসিকাম : দোয়াশ ও বেলে দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য ভালো ছোট বড় যেকোনো টবে লাগানো যায়। এই গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত মাটি ও ৩০ থেকে ৪০ বয়সের চারা প্রয়োজন।
বরবটি: ছাদে টবে বা বারান্দায় আপনি বরবটি চাষ করতে পারেন খাটো জাতের বরবটি তবে ভালো ফলন দেয়।
সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে লাল শাক পালং শাক মূলা কলমি শাক, ডাটা শাক চাষ করতে পারেন।

ছাদ বাগানের জন্য কোন কোন ফুল গাছ উপযুক্ত 

 ছাদ বাগানের জন্য গোলাপ জবা টগর হাসনাহেনা বাগান বিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, সূর্যমুখী,ডালিয়া, গাধা, মর্নিং গ্লোরি, রঙ্গন, অলকানন্দা, জিনিয়া, জল পদ্ম, নয়ন তারা,পিটুনিয়া,জারবের, কসমস,জিনিয়া ফুল গাছ। আপনার ছাদে যদি পর্যাপ্ত জায়গা থাকে বড় বা মাঝারি ফুল গাছ যেমন জবা, টগর,ডালিয়া,শিউলি ফুল, জুঁই, বাগান,  বিলাস হাসনাহেনা এই ফুল গাছ লাগাতে পারেন।অল্প রোদে সারা বছর যে সকল ফুল গাছ লাগানো যায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপরাজিতা ৩/৪ ঘন্টা যথেষ্ট এই গাছটির জন্য।

 আপনি হয়তো বা পদ্মফুলের কথা শুনে ভাবছেন শহরে কিভাবে পদ্মফুল ফুটবে তাইতো? পদ্মবীজ সংগ্রহ করে জার্মিনেট বা অঙ্কুরোদগম করার পর বড় মাটির অথবা সিমেন্টের তৈরি পাত্রে পদ্মফুল লাগানো যায়। তবে মনে রাখবেন আপনি যেই গাছি লাগান না কেন গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য অপর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাসের প্রয়োজন। আপনার ছাদ যদি দক্ষিণমুখী হয় সেখানে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যাবে অন্যদিকে ছাদ যদি উত্তরমুখী হয় অপেক্ষাকৃত কম সূর্যের আলো পাওয়া যাবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে এমন ফুলের গাছ নির্বাচন করতে হবে যেসব গাছে অল্প সূর্যের আলো প্রয়োজন।

ছাদ বাগান করার সহজ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

 ছাদ বাগান পড়ার ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে স্থান নির্বাচন করতে হবে আপনার ছাড় যদি দক্ষিণমুখী হয় তাহলে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো পাওয়া যাবে তাই সে অনুযায়ী গাছ নির্বাচন করতে হবে অন্যদিকে যদি উত্তর মুখে ছাদ হয় যেখানে কম সূর্যের আলো পাওয়া যায় সেসব স্থানে ছায়া প্রিয় গাছ নির্বাচন করতে হবে।আপনি ছাদেবাগান দুই ভাবে করতে পারবেন। প্রথমত,সিমেন্ট কাঠ অথবা লোহার ফ্রেম লোহার ফ্রেম বেড তৈরি করে  করতে পারেন।দ্বিতীয়ত, টপ, ড্রাম,বালতি ও কন্টেইনার ব্যবহার করে করতে পারেন।

 মাটি প্রস্তুত 
বেলে দোওয়াশ মাটি ছাদ বাগান করার জন্য সবচেয়ে সবথেকে উপযোগী। তবে অবশ্যই মাটির সাথে গোবর সার, পচা পাতা, ভার্মি কম্পোস্ট, সরিষার খৈল টিএসপি  পাথর চুন ইত্যাদি মিশিয়ে মাটি গাছ লাগানোর জন্য উপযোগী করে নিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে 
 সার প্রস্তুত 
গাছের ভালো ফলন ও বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই সার প্রস্তুত করে নিতে হবে। তাই মাটির সাথে গোবর সার পচা পাতা, হাড়ের গুড়া, সরিষার খৈল,নিম খৈল, পাথর চুন মেশাতে হবে।
পরিচর্যা
 চারা লাগানোর পর থেকে নিয়মিত ২৫ থেকে ৩০ দিন পর পানি সরিষার খৈল পচা পানির গাছের গোড়ায় দিতে হবে। 
  1.  ড্রাম বা বালতির যখন  যখন দুই থেকে তিন বছর যাবে তখন মাটি পরিবর্তন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রস্থের ২ ইঞ্চি গভীর ৬ ইঞ্চি শিকড়সহ টবের বা ড্রামের ফেলে দিয়ে নতুন করে গোবর অন্যান্য সার মিশ্রিত মাটি পুনরায় ভরাট করে দিতে। যে আপনার মাটিকে তিন ভাগে ভাগ করে প্রথম সপ্তাহে একভাগ তার পরের মাসে আরেকভাগ তার পরের মাসে এভাবে আপনার ড্রামের মাটি পরিবর্তন করতে পারেন।
  2.  ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর গ্রামের মাটি খুঁচিয়ে উপর নিচ করে দিতে হবে। এরপর সুষম সার  প্রয়োগ করতে হবে গাছের পুষ্টির অভাব হলে ফুল ফল ঝরে যায় 
  3.  অল্প পরিমাণে হলেও অন্যান্য সারের সাথে বোরন ও পটাশিয়াম দিতে হবে  কারণ বোরন সারের অভাবে ফুল ফল ঝরে যায়। এটা বছরে দুইবার দাওয়ায় উত্তম।
  4.  গাছের গোড়ায় কোন আগাছা রাখা যাবে না আগাছা থাকলে পোকামাকড় আক্রমণ জনিত রোগ হতে পারে।
  5.  ফল গাছ হলে নিয়মিত হালকা সেচ দিতে হবে গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে তার লক্ষ্য রাখতে হবে ড্রামের মাটি যেন শুকিয়ে না যায় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
  6.  আপনার গাছ যদি আক্রান্ত হয় সেই আক্রান্ত স্থান বা ফল নষ্ট করে ফেলতে হবে। সব থেকে ভালো হয় ফল আসার আগে পলিথিন কাপড় বা নেটের ব্যাগ দিয়ে ব্যাগিং করে দেওয়া।
  7.  আপনার গাছ আক্রান্ত হয়েই যায় তাহলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হারে এসি কার মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করবেন।
 সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আপনি ছাদবাগান যদি করেন সে ক্ষেত্রে আপনাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে তাহলে আপনি ভাল ফলাফল পাবেন।

ছাদ বাগানের জন্য কোন আম গাছটি উপযুক্ত

 আমাদের দেশের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ প্রজাতির আমের চারা পাওয়া যায়। এবং এর সবগুলো আমের চাড়াই কিন্তু গ্রাফটেড কলমের। কলমের চারা গুলো লাগানোর এক বছরের মাথায় সে গাছ থেকে বেশ ভালো পরিমাণে ফল পাওয়া যায়। একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে চারা গুলো বয়সে ছোট হলে সেই গাছগুলো থেকে  ফল নেয়া  থেকে বিরত থাকতে হবে। ছাদ বাগানের জন্য  জনপ্রিয় ও বহুল আলোচিত যেই ভ্যারাইটি তা হল থাই কাটিমন। এছাড়াও রয়েছে বারি ১১, ব্যানানা  ম্যাংগো ও থাই অল টাইম। ব্যানানা আম থোকায় থোকায় ধরে। এছাড়াও রয়েছে কিউজাই, থ্রি টেস্ট আম।

 আপনি যদি সঠিক জাতের থাইকাটি মন আমের চারা লাগান সে ক্ষেত্রে আপনার ব্যর্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই কারণ থাই কাটিমন আম একটি দুর্দান্ত ভ্যারাইটি। থাই কাটিমন  থেকে আপনি থাইকাটি মন থেকে যারা থেকে আপনি প্রচুর পরিমাণ ফলন পাবেন।
 তবে থাই কাটিমন নিয়ে অনেক আলোচনা নেতিবাচক আলোচনা রয়েছে কারণ থাইকাটি মন বলে অন্য জাতের আমের চারা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি যদি সঠিক জাত চিনে কিনতে না পারেন তাহলে কিন্তু আপনি ভালো ফলাফল পাবেন না। তবে ছাদ বাগানে যদি আম গাছের চারা লাগাতে চান তবে অবশ্যই থাইকাটি মন ও ব্যানানা আম দিয়ে শুরু করবেন এই জাতগুলো প্রচুর পরিমাণ আমের ফলন হয়।

 শেষ কথা:ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ

 ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করেছি আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে আপনিও ছাদ বাগান করে ভালো ফলাফল পাবেন আশা করছি। আপনি যদি সঠিক জাত নির্বাচন ও সঠিক পরিচর্যা করতে পারেন তাহলে আপনার ছাদ বাগানটিও হবে গোছালো সুন্দর একটি ছাদ বাগান। ছাদ বাগানের সফলতার পেছনে আলাদা কোন যাদু মন্ত্র নেই শুধু প্রয়োজন একটু পরিশ্রম নিয়ম মেনে যদি ছাদ বাগান করতে পারেন ছাদ বাগান শতভাগ সফলতার মুখ দেখতে পারবে।

ছাদ বাগান শহরের মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। পারিবারিক পুষ্টির চাহিদার মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও একটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই ছাদ বাগান। আপনি ছাদ বাগান থেকে যে পরিমাণ ফুল ফল সবজি পান না কেন এটা শুধু আপনার। আপনি চাইলে কাউকে দিতেও পারেন আবার নাও দিতে পারেন। তবে ছাদে গাছ লাগানোর ফলে আপনি যে অক্সিজেন পাবেন সেটা আপনি সহ আপনার চারপাশে সবাই ভোগ করতে পারবে। প্রিয় পাঠক আমার আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ থাকলো।














 







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url