হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে লাভবান হতে চান তাহলে আজকের
আর্টিকেল আপনার জন্যই। আজকেরে আর্টিকেলে আমরা হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার চাষ পদ্ধতি
সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবো।
আপনি যদি হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার বীজ,
মিষ্টি কুমড়া সার প্রয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
পেইজ সূচিপত্র : হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি এর মাধ্যমে অধিক ফলন করতে চাইলে প্রথমে
করতে হবে কোন ধরনের জমিতে হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী। লতানো
সবজিগুলোর মধ্যে মিষ্টি কুমড়া অন্যতম এবং সুস্বাদু।হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষের
জন্য উর্বর দোআঁশ এবং বেলে দোআঁশ মাটি উপযোগী। এবং মাঝারি উঁচু জমি
নির্বাচন করতে হবে। কুমড়া উৎপাদনে উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া পর্যাপ্ত সূর্যের আলো
প্রয়োজন।চলুন জেনে নেই হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
মাদা প্রস্তুতকরণ :
জমিতে মাদা প্রস্তুত এর মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে হয়। ৩ মিটার দূরে দূরে
এক একটি মাদা প্রস্তুত করতে হবে। প্রত্যেকটি মাদার মধ্যে ৫ থেকে ১০ কেজি পরিমাণ
শুকনো গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। এগুলো বীজ বপনের এক সপ্তাহ আগেই প্রয়োগ
করতে হবে। ও ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে।এবং
মিষ্টি কুমড়ার বীজ অঙ্কুরোদগম এবং অধিক পরিমাণ ফলন পেতে বাজার থেকে অবশ্যই উন্নত
বীজ বেছে নিতে হবে।
বীজ বপন ও অঙ্কুরিতগম পদ্ধতি :
কালো মানিক বীজ অন্যতম যার ৫ গ্রাম বীজের প্যাকেট মূল্য হচ্ছে ২০০
টাকা।৫গ্রাম প্যাকেটের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ টা বীজ থাকবে। এখন আপনাকে যা করতে হবে
শুরুতেই যে কোন একটা পাত্রের মধ্যে অল্প পরিমাণ পরিস্কার পানি নিয়ে ২৪ ঘন্টা
বীজগুলো ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজের গুনাগুন দেখার জন্য যখনই আপনারা বুঝতে পারবেন
বীজগুলো তলানির মধ্যে পড়ে গিয়েছে তখনই বুঝবেন গুলো অঙ্কুরিতগম হবে।২৪ ঘন্টা
বীজগুলো ভিজিয়ে রাখার পর পাত্র থেকে বীজগুলো আলাদা করে নিয়ে সুতি একটা কাপড়ের
মধ্যে বীজগুলোকে নিতে হবে।
সুতি কাপড় এ সবগুলো বীজ নিয়ে চার থেকে পাঁচটি ভাজ দিয়ে দিতে হবে। এবার কাপড়ে
পেঁচিয়ে রাখা মিষ্টি কুমড়ার বীজ যেকোন ঢাকনাযুক্ত একটি পাত্রের মধ্যে দুইদিন
ঢেকে রাখতে হবে। দুইদিন পর দেখবেন সবকটা বীজ অঙ্কুরিতগম হয়ে যাবে। আপনি যদি
হাইব্রিড জাতীয় মিষ্টি কুমড়ার বীজ বেছে নিন তাহলে দেখবেন সব কটা বীজ অঙ্কুরিকম
হবে। তো আপনারা এই পদ্ধতিতে বীজগুলো মাদার মধ্যে বুনে দেন তাহলে ৩/৪ দিনের মধ্যেই
চারা অঙ্কুরিতগম হবে। ৩ মিটার দূর দূর একেকটা মাদা এভাবে করবেন এবং প্রত্যেকটা
মাদা জমি থেকে ১০/১৫ সেন্টিমিটার উঁচু মাদা প্রস্তুত করবেন। মাদার মাটি
অবশ্যই ঝুরঝুর করে নিতে হবে।
চাষের জন্য এমন একটি জমি নির্বাচন করবেন যেন সেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে।
এবার মাদার মাটি ঝুরঝুরা করার পরে প্রতিটি মাদায় ৩/৪ টি বীজ পুঁতে দিবেন। আর
প্রত্যেকটা বীজ ১ ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিবেন যে অংশটায় শিকড় চলে আসছে সেই অংশটা
অবশ্যই নিচের দিকে থাকবে। শতকে যদি আমরা মিষ্টি কুমড়ার বীজ বুনি তাহলে ৩/৪ গ্রাম
বীজ প্রয়োজন হবে। আপনি যদি মনে করেন মিষ্টি কুমড়ার বীজগুলো পিপড়া খেয়ে ফেলবে
সেক্ষেত্রে কেরোসিনের মধ্যে মিষ্টি কুমড়ার বীজগুলো চুবিয়ে তারপরে বপন করে দিবেন
এতে করে পিঁপড়ার উপরের থেকে মুক্তি পাবেন। এবার বীজ বপণের পর মাটি দিয়ে
বীজগুলোকে ঢেকে দিবেন এরপর মাদার মাটিতে হালকা পানি ছিটিয়ে দিবেন। এভাবে চারা
তাড়াতাড়ি অঙ্কুরিতগম হবে।
পরিচর্যা :
১/২ দিন পর পর গোড়ার দিকে মাটিটা ভিজিয়ে দিবেন।চারার বয়স যখন ২৫ দিন হবে তখন
রিং প্রস্তুতের মাধ্যমে চারা গাছের মধ্যে সার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত ২
দফায় মিষ্টি কুমড়া গাছের সার প্রয়োগ করবেন। যখন চারা গাছের ২৫ দিন বয়স হবে
তখন ১০০ গ্রাম টিএসপি ৬০/৭০ গ্রাম এমওপি এবং ৬০/৭০ গ্রাম ইউরিয়া সার একেকটি
মাদার মধ্যে প্রয়োগ করবেন। আর ১৫ থেকে ২০ দিন পরে মিষ্টি কুমড়া গাছে অধিক ফলন
পেতে তরল পদ্ধতির মাধ্যমে সরিষার ফয়েল প্রয়োগ করতে হবে।এইভাবে তার প্রয়োগের
মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়ার অধিক ফলন পেতে পারেন।
মিষ্টি কুমড়া চাষের উপযুক্ত সময়
আমাদের দেশে মিষ্টি কুমড়া সারা বছর পাওয়া যায়। যেহেতু এটি খেতে সুস্বাদু
তাই খুব জনপ্রিয়। এটি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি। আমাদের দেশে প্রায় সব ধরনের
মাটিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা যায়। তবে চড় অঞ্চলে পলি মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার
ফলন খুব ভালো হয়। ছাড়াও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি এঁটেল দোআঁশ মাটি
ভালো ফলন হয়। আপনি যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা জানেন আমাদের দেশের আবহাওয়াতে সারা
বছরে ভালো ফলন পেতে পারেন।
শীতকালে চাষের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য
ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস বীজ বপনের জন্য উপযুক্ত সময়।বীজ উৎপাদনের জন্য
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় ভালো। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে চাষকালীন সময় বড়দিন ও
রোদের তাপমাত্রা বেশি হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় ও স্ত্রী ফুলের সংখ্যা
কমে যায় যার ফলে ফলন কিছুটা কমে যায়। বিভিন্ন রকম হাইব্রিড জাত ভিন্ন সময় রোপণ
করতে হয়।
-
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া সুইটি সারা বছর চাষ উপযোগী যার গড় ওজন ৬/৭ কেজি।
-
বেঙ্গল সুইট ২ বীজ বপনের সময় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি। গড় ওজন ৫
থেকে৭কেজি।
- হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া 'শিলা' বীজ বপন এর সময় অগাস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি
যার গড় ওজন ৩/৪ কেজি।
- হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া ঢাকা ১ ভবনের সময় সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।
-
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া ওয়ান্ডার বল সময় শ্রাবণ থেকে মাঘ গড় ওজন মিষ্টি কুমড়া
প্রতি ৫/৭ কেজি
উচ্চফলনশীল মিষ্টি কুমড়ার জাত
আমাদের দেশে কম বেশি সবাই মিষ্টি কুমড়া খেতে ভালোবাসে এবং সারা বছরেই
মিষ্টি কুমড়া বাজারে পাওয়া যায়। হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে
মিষ্টি কুমড়ার সেরা জাতগুলো নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা গবেষণা
ইনস্টিটিউট কর্তৃক আবিষ্কৃত বারি মিষ্টি কুমড়া ১ বারি মিষ্টি কুমড়ার ২ যা বেশ
পরিচিত। এছাড়াও আরো অনেক জাত রয়েছে যা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে। হাইব্রিড
জাত কখনোই একটি জাত লাগানো উচিত নয় আপনাদের একাধিক জাত চাষ করা।
-
অধিক ফলন পেতে যেসব জাত নির্বাচন করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্ল্যাক স্টোন
ভাইরাস পাতা ঝলসে যাওয়া রোগ সহনশীল বর্ষা ব্যতীত সারা বছর চাষ উপযোগী মাত্র ৮০
দিনে ফসল সংগ্রহ করা যায় গড় ওজন দুই থেকে তিন কেজি। দীর্ঘদিন ফল সংগ্রহ করা
যায় একর প্রতি ১২ থেকে ১৪ টন।
-
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া সুইটি সারা বছর চাষ করা যায়। ৬ থেকে ৭ কেজি গড়
ওজন। উচ্চতাপ লবণাক্ততা ভাইরাস
-
সুষ্ঠু জাত মিষ্টতা বেশি মাত্র ৮০ দিনের ফসল সংগ্রহ করা যায়। একর
প্রতিফলন ১৮ থেকে ২০ টন।
-
বেঙ্গল সুইট ২ গড় ওজন ৫ থেকে ৭ কেজি
-
মিষ্টি কুমড়া শিলা গড় ওজন ৩ থেকে ৪ কেজি গাছ প্রতিফলন ২৩ কেজি।
-
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া শিলা গড় ওজন তিন থেকে চার কেজি গাছপতিফলন ২৩
কেজি
-
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া ঢাকা ১ ভাইরাস সহনশীল ফল চ্যাপ্টা গোলাকৃতি বীজ
বপনের ৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায় গড় ওজন ৫/৮ কেজি একর প্রতিফলন ২০
থেকে ২৫ টন।
-
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া ওয়ান্ডার বল চ্যাপ্টা আকৃতি গোলাকৃতি মাত্র ৮৫
দিনে ফল সংগ্রহ করা যায় ফলের গড় ওজন ৫/৭ কেজি একর প্রতিফলন ২০ থেকে ২৫ টন।
-
এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ভালো জাত রয়েছে সিয়াম ১, মেটাল সিড মনিকা, এআর
মানিক অনিক ১, রফিক সিড ব্যাংকক ১ চিয়া থাই।
-
আরো রয়েছে ম্যাক্সিমা মেটাল সিড স্মল সুইট চিয়া থাই, ম্যাজিক বল, হিরা
বীজ মক্কা, বিজ পাতার সিড, তুষ্টি,ময়ূরী প্লাস,চিতা, জোনাকি, ইস্পাহানি
প্রভৃতি।
মিষ্টি কুমড়ার বীজ রোপন পদ্ধতি
শীতকালীন সবজি চাষের উপযুক্ত সময় অক্টোবর মাস। শীতকালীন সবজি হিসেবে
মিষ্টি কুমড়া লাগার উপযুক্ত সময় এটা। মিষ্টি কুমড়া লাগানোর প্রথম কাজ হল বীজ
নির্বাচন করে অঙ্কুরোদগম করা। জমিতে মাদা প্রস্তুতের মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়া চাষ
করতে হয়। ৩ মিটার দূরত্বে এক একটি মাদা প্রস্তুত করতে হবে। মাধায় ৩/৪ বীজ পুঁতে
দিতে হবে ১ থেকে ২ সেন্টিমিটার গভীরে। তারপর মাদার মাটি গুলো সুন্দরভাবে ওপর দিক
থেকে ঢেকে দিবেন প্রয়োজন মত পানি ব্যবহার করবেন।
- প্রথমত বীজগুলো প্যাকেট থেকে বের করে হালকা রোদ দিতে হবে তারপর একটি পাত্রে পানি নিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে ২৪ ঘন্টা।
- এরপর এই ভেজানো বীজগুলো তুলে একটি সুতি কাপড়ে ভাঁজ করে ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা রেখে দিলে অঙ্কুরোদগম হয়ে যাবে।
- এরপর মাদাতে প্রয়োজনীয় সার মিশিয়ে অঙ্কুরিত বীজ এর শিকড়ের অংশ নিচের দিকে দিয়ে পুঁতে দিতে হবে। এবং মাদার মাটি সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে।দেখবেন পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে চারা গাছ মাটি ভেদ করে বের হবে।
- এরপর নিয়মিত যত্ন নিতে হবে নিয়ম অনুযায়ী পানি দিতে হবে। ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ও ফল ধরা শুরু করবে।
মিষ্টি কুমড়া গাছে সার প্রয়োগ
কুমড়া গাছে যদি ফল আসার আগে সার প্রয়োগ না করা হয় তাহলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়
গাছের পাতায় হলদে ভাব চলে আসো। তাই গাছে ফল আসার আগে সার প্রয়োগ করতে হবে।
তোমরা গাছে প্রচুর পরিমাণ ইউরিয়া ফসফেট ও পটাশ যুক্ত সারের প্রয়োজন হয়।
এছাড়াও কিন্তু মাটির অনু খাদ্য গুলা দরকার হয়ে থাকে। গাছের গোড়া থেকে কিছুটা
দূরে রাসায়নিক সার গুলো প্রয়োগ করতে হবে নতুবা গাছের গোড়াগুলো পচে যাবে।
মিষ্টি কুমড়া গাছের সার প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ গাছের জন্য
- ইউরিয়া ১ কেজি
- ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৫০০ গ্রাম
- থিয়োভিট ৩৫০ গ্রাম
- টিএসপি ১ কেজি
- জিপসাম ১ কেজি
- টিএসপি এক কেজি
- পটাশ ৫০০ গ্রাম
- বোরন ৫০০ গ্রাম
- বিষমুক্ত সবজি পেতে রাসায়নিক কৌতুক কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে
জৈব সার ব্যবহার করুন
সবগুলো মিশিয়ে এক এক মুঠো করে সার কুমড়া গাছে দিতে হবে অর্থাৎ তোমরা গাছের
চারপাশে রিং গর্ত করে গর্তের ভেতর দিয়ে সার দিয়ে দিতে হবে। তারপর সাইডে থেকে
মাটি নিয়ে কুমড়া গাছের রিং গর্তটা মিশিয়ে দিবেন এবং কার কাছ থেকে আরো কিছু
মাটি নিয়ে কুমড়া গাছের গোড়াটা উঁচু করে দিবেন যেন পানি জমে না থাকে।সার
প্রয়োগ করার পর গাছে প্রচুর পরিমাণ নতুন শিকড় দেয়। গাছের গোড়ায় যদি মাটি না
থাকে গাছ শিখর দিতে পারেনা। সেজন্যই গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করে দিতে হয়।
যদি রোদ থাকে অল্প পরিমাণ পানি সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়। আর বৃষ্টি থাকলে সে
ক্ষেত্রে পানি দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
মিষ্টি কুমড়া বড় হতে কতদিন সময় লাগে?
হাইব্রিড কুমড়া চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে জাত নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে
কোন গাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে উপযুক্ত মাটি,সার, বীজ,আবহাওয়ার উপরে কিছু
জাতের মিষ্টি কুমড়া গাছ আছে যেগুলো তাড়াতাড়ি ফলন দেয় আবার কিছু জাত আছে সে
সময় নেয়। তবে হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে কখনোই একটি জাত
লাগানো উচিত নয় বিভিন্ন জাত চাষ করা উচিত। মিষ্টি কুমড়া গাছের ফল পেতে সাধারণত
দু থেকে তিন মাস সময় লেগে যায়।
যেমন ব্ল্যাক স্টোন ভাইরাস পাতা ঝলসে যাওয়া রোগ সহনশীল বর্ষা ব্যতীত এছাড়া বছর
চাষ উপযোগে মাত্র ৮০ দিনেই আপনি ফল সংগ্রহ করতে পারবেন।আরো রয়েছে সুষ্ঠু জাত
মিষ্টতা বেশি মাত্র ৮০ দিনে ফল সংগ্রহ করা যায়। আর কিছু জাত আছে যেগুলো বীজ
বপনের পর প্রায় ১২০ দিনের মতো সময় লাগে ফল পেতে। হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া
ওয়ান্ডার বল ৮৫ দিনে ফল সংগ্রহ করা যায়। হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া ঢাকা ১ মাত্র
৮০ দিনে ফল সংগ্রহ করা।
বারোমাসি মিষ্টি কুমড়ার জাত
মিষ্টি কুমড়া সারা বছরে চাষ করা যায়। বারো মাসে মিষ্টি কুমড়ার জাতের
মধ্যে বারি মিষ্টি কুমড়ার ১, বারি মিষ্টি কুমড়ার ২,ব্ল্যাক স্টোন, ইয়েলো
কার্ড,ভাদুরী জাত প্রভৃতি
অক্টোবর মাসে এই বারো মাসি মিষ্টি কুমড়ার জাত গুলো যদি রোপন করেন বাড়ির
আঙিনায় মাচা তৈরি করে নিরাপদ উপায়ে জৈব সার ব্যবহার করে তাহলে আপনার পারিবারিক
পুষ্টির চাহিদার পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারবেন।
বারোমাসি মিষ্টি কুমড়ার জাত "ভাদুরী "রোপনের ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে আপনি ফল
সংগ্রহ করতে পারবেন। এবং প্রচুর পরিমাণ ফলন হয়। হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া লাল তীর
সুইটি সারা বছর চাষ উপযোগী জাত। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণার
মতে সবথেকে লাভজনক যে কয়েকটি ফসল চাষ রয়েছে তার মধ্যে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হলো
একটি। তাদের গবেষণার মতে, প্রতি দুই টাকা বিনিয়োগে আপনি ৮ টাকা ফেরত পাবেন।কম
খরচে যদি বসত ভিটায় প্রতি জমিতে মাচা তৈরি করে বারোমাসি জাতের মিষ্টি কুমড়া
রোপন করেন তাহলে আপনিও লাভবান হবেন।
মাচায় মিষ্টি কুমড়া চাষ
মিষ্টি কুমড়া অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। বাড়ির আশেপাশে যদি
লাগানো যায় এর ফলন দেখলেও চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে মাচায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে
মিষ্টি কুমড়ার সাইজ তুলনামূলক একটু ছোট হয় কুমড়া চাষের চাইতে। তবে মাটিতে
যেকোনো কাজ করলে অনেক সময় দেখা যায় জালি বা ফুল নষ্ট হয়ে যায় বা মিষ্টি
কুমড়া পচে যায় অনেক সময় পানি জমে। মাচায় চাষ করলে এই ধরনের সমস্যা করতে হয়
না।
মাচায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করার ক্ষেত্রে প্রথমে চাষ দিয়ে মাটি প্রস্তুত
করে নিতে হবে এরপর মাদা তৈরি করতে হবে।এরপর মাদায় জৈব সার ইউরিয়া টিএসপি পটাশ
মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। জৈব সার ও রাসায়নিক সার দেওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন
পর চারা রোপন করে দিতে হবে মাদায়। মাচায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করার ক্ষেত্রে
একটি মাদা থেকে আরেকটি মাদার দূরত্ব ১ থেকে ১.৫ ফিট। ২ থেকে ৩ টি বীজ বপন করতে
হবে প্রত্যেকটি মাদায় ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার গভীরে। তারা একটু বড় হলেই মাচা তৈরি
করে দিতে হবে যেন গাছ ওপরে উঠতে পারে। গাছের যত্নে সার প্রয়োগ, নিয়মিত পানি
দেয়া আগাছা পরিষ্কার এগুলো করতে হবে।
টবে মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি
বাড়ির আঙিনায় অথবা ছাদ বাগানে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে প্রচুর ফলন পাওয়া
সম্ভব। প্রথমেই ভাল জাতের হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার নির্বাচন করুন। অবশ্যই বীজগুলো
যেন হাইব্রিড বীজ হয়। তারপর বীজগুলোকে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে
তারপর ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে সুতি কাপড়ে একটি ছোট বক্সের মধ্যে করে শুকনো ও
ছায়াযুক্ত স্থানে দুই দিনের জন্য রেখে দিতে হবে। দুই দিন পর দেখবেন বীজগুলো
অঙ্কুরিত হয়ে যাবে। এখন বীজগুলো সিডলিং ট্রে অথবা মাটিতেও বপন করতে পারেন।
বীজ বপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন সেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো
বা রোদ পাওয়া যায়। বপনের এক সপ্তাহ পর চারাগুলোর রোপন এর জন্য প্রস্তুত।এবার
মাটির তৈরি করার পালা এক্ষেত্রে ৫০% ও ৩০% বার্মি কম্পোস্ট ১০% জৈব সার ১০% ধানের
তুষ ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে যে পাত্রে চারা রোপন করা হবে সেখানে ভরে নিতে
হবে।এটি টব বা বালতি বা ড্রাম হতে পারে। যে পাত্রেই নেন না কেন তার চারদিকে এবং
নিচে কয়েকটি ছিদ্র করে দিন যেন অতিরিক্ত পানি জমা হয়ে না থাকে।
যেহেতু পাত্রে বেশ কয়েকটি ছিদ্র করা হবে তাই ছিদ্র দিয়ে মাটিগুলো যেন বের
না হয়ে যায় সেজন্য মাটি দেয়ার পূর্বে কিছু খড় বিছিয়ে তার উপরে মাটি ভরে দিন।
মাটি ভরা হয়ে গেলে এর উপরে পলিথিন অথবা চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।এতে করে
বৃষ্টির পানি অথবা রোদ সরাসরি মাটিতে পৌঁছাবে না মাটির গুনাগুন সহজে নষ্ট হবে
না।এরপর বস্তাটিকে অল্প ছিদ্র করে চারা রোপন করে দিতে হবে। চারা রোপন শেষে পানি
দিয়ে দিতে হবে এবং নিয়মিত গাছে পানি দিতে হবে।
চারা রোপনের প্রায় ২৫ দিন পর শুধু কোন প্রয়োজন শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী
পানি দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই এখন কাঠ অথবা বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করার পালা।
মাচা তৈরি করার পর গাছগুলো মাচায় তুলে দিতে হবে যেন গাছগুলো উপরে উঠতে
পারে।৭০/৭৫ দিন পর দেখবেন গাছ মিষ্টি কুমড়ার ভরে গেছে।এভাবে বাড়ির ছাদে বা টবে
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে
আপনিও পারবেন।
চাল কুমড়া চাষের উপযুক্ত সময়
আপনি যদি কোন ফসল চাষ করে লাভবান হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই কয়েকটি
বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। এক নম্বর হচ্ছে সঠিক সময় নির্বাচন অর্থাৎ কখন কোন
ফসলের দাম কেমন থাকে সে সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকতে হবে। দুই নম্বর হচ্ছে ফসলের
সঠিক জাত নির্বাচন অর্থাৎ কোন মাসে একটি ফসলের কোন জাত চাষ করলে সবচেয়ে ভালো ফলন
পাওয়া যায় সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তিন নম্বর হলো গাছে কোন রোগ হলে
কি ওষুধ দিতে হবে সে বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা চার নাম্বার হলো গাছে কোন খাদ্য
ঘাটতি দেখা দিলে কি লক্ষণ দেখা যায় এবং তখন কি সার দিতে হবে এই সম্পর্কে সঠিক
ধারণা থাকতে হবে।
কুমড়ার বীজ রোপনের সঠিক সময় হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাস আর আপনারা যদি অগ্রিম
চাষ করতে চান তাহলে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে চাল কুমড়ার বীজ রোপন করতে পারেন
সাধারণত উন্নত মানের হাইব্রিড চাল কুমড়ার জাত খুব বেশি শীতের সময় ছাড়া সারা
বছরই চাষ করা যায়। চাল কুমড়ার একটি ভালো মানের জাত যদি নির্বাচন করা যায় এবং
সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায় একটা চালকুমড়াও গাছে ২০ টা করে চাল কুমড়া পাওয়া
সম্ভব।
শেষ কথা: হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত যেসব বিষয় তুলে
ধরেছি সবজি চাষীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ক ওয়েবসাইট এর
তথ্যের ভিত্তিতে। সবজি উৎপাদন অন্যান্য ফসল উৎপাদনের মত নয় এর জন্য বিশেষ যত্নের
প্রয়োজন। প্রয়োজন। আপনার যদি সবজি উৎপাদন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকে তাহলে সবজি
উৎপাদনে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন
হতে পারবেন। এবং এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
আপনার যদি ফসল উৎপাদনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান স সঠিক সময় নির্বাচন
ফসলের সঠিক জাত নির্বাচন, ফসলে কখন কোন দিতে হবে ও কখন কোন সার প্রয়োগ করতে হবে
সে সম্পর্কে জ্ঞান জ্ঞান না থাকে তাহলে কখনোই লাভবান হতে পারবেন না। তাই সবজি
উৎপাদনে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে তারপরেই সবজি চাষ শুরু করুন।রাসায়নিক মুক্ত পেতে
নিজের বাড়ির আঙিনায় অথবা ছাদে সবজি উৎপাদন এর বিকল্প নেই।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url