মাশরুম বীজের দাম ও বীজ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
Grow With Nazmin ☑️
১৪ জুল, ২০২৫
মাশরুম বীজের দাম ও বীজ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে বর্তমানে অনেকেই আগ্রহী কারণ এটি খুব কম খরচে শুরু করা যায় ও অল্প পরিসরে চাষ করা যায় তাই অনেক মাশরুম চাষে এগিয়ে এসেছেন।
এইতো এটি পুষ্টিকর খাবার এবং বাজারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তাই অনেকেই এখন
বাড়িতে বসে মাশরুম চাষ করার কথা ভাবছে। কিভাবে সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে হয় তা
আমরা অনেকেই জানিনা।আমার আজকের এই আঁটিকে লে মাশরুম বীজের দাম ও বিস্তরের পদ্ধতি
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পেইজ সূচিপত্র : মাশরুম বীজের দাম ও বীজ তৈরির পদ্ধতি
মাশরুম বীজের দাম ২০২৫ এটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় কারণ মাশরুম বীজের
ধরন ও বীজের কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে দামের তারতম হতে পারে। বাজারে সাধারণত
প্রতি কেজি মাশরুমের দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।তবে আপনি যদি অনলাইন
বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে মাশরুম বীজ ক্রয় করেন ক্ষেত্রে দামটা একটু বেশি হতে
পারে। বাজারে এমন অনেক বিক্রেতাই আছেন যারা প্রকৃত দামের চাইতে অনেক বেশি দাম
নিয়ে থাকে কারণ অনেকেই আছেন যারা মাশরুমের সঠিক মূল্য সম্পর্কে ধারণা নেই।
সাধারণত মাশরুম বীজ (স্পন ) দাম ৩০ টাকা থেকে শুরু হলেও কোথাও কোথাও এর
চাইতে বেশি হতে পারে। যেমন আজকে দারাজে প্রতি মাশরুম বীজ (স্পন) ৪৫ টাকা। জায়গা
কোয়ালিটি ও বিক্রেতার উপর নির্ভর করে মাশরুম বীজের দাম কম বেশি। যেমন বাটন
মাশরুমের বীজ প্রতি কেজি প্রায় ১২০০ টাকা। কোথাও কোথাও এর কম বেশি হতে পারে।
বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইনে মাশরুম বীজের বিভিন্ন ওজনের প্যাকেট করে সে অনুসারে দাম
নির্ধারণ করে থাকে। আবার আবার মূল্যবান ও সুস্বাদু গুচি মাশরুম যা বন্য পরিবেশে
পাওয়া যায় তার দাম অনেক বেশি। বিভিন্ন অনলাইনে অফার প্রাইজে অনেক কম দামে
বিক্রি করে থাকে।
মাশরুম বীজ তৈরির পদ্ধতি
মাশরুম হলো এক ধরনের ছত্রাক। যেহেতু এটাকে আমরা খাই তাই আমরা এটাকে গাছের
ফল হিসেবেও বলতে পারি। মাশরুম বীজ (স্পন) এটা থেকেই মাশরুম তৈরি হয়। মাশরুম
মূলত চার রকমের হয় এক ওয়েস্টার মাশরুম,দুই হচ্ছে বাটন মাশরুম তিন নম্বর
মিল্কি মাশরুম চার নম্বর হলো পেডিষ্টার মাশরুম। সহজে বাড়িতে মাশরুমে যে বীজ তৈরি
করে থাকে সেটা হল ওয়েস্টার বা ঝিনুক মাশরুম। এতে সময় কম লাগে কষ্ট কম ও আয়ও
বেশি হয়।মাশরুম বীজ তৈরি করতে লাগে গম ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।তবে
অনেকেই গমের পরিবর্তে ধান বা ভুট্টা দিয়েও তৈরি করে থাকে।
বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম বীজ তৈরির পদ্ধতি কয়েকটি ধাপে হয়ে থাকে।
গম গুলোকে প্রথমে সেদ্ধ করা হয় করার পরে এর সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও
ক্যালসিয়াম সালফেট এ দুটো কে মেশানো হয়। যেন গমের দানাগুলো একটার সাথে আরেকটা
না লেগে থাকে।এর পিএইচ টাকেও কন্ট্রোল করা হয়। এর একটা ময়েশ্চার কন্ট্রোল করতে
হয় গমটাকে এমন ভাবে শুকিয়ে নেওয়া হয় যাতে এর মধ্যে ৬০% এর মত ময়েশ্চার থাকে।
অবস্থাতেই এটাকে ডাবল পিপি প্যাকেটের মধ্যে ভরে দিয়ে তাকে এমন ভাবে কটন প্লাগ
দিয়ে আটকাতে হবে যেন এর ভেতরে বাতাসটা চলাফেরা করতে পারে।
পরবর্তী ধাপ হচ্ছে এটাকে স্টেরিলাইজেশন করা হয় অটোক্লেভ মেশিন এ। এই অটোক্লেভ
মেশিনের মধ্যে টমের প্যাকেট গুলোকে কে স্টেরিলাইজ করা হয়।এর মধ্যে যে জীবাণুগুলো
রয়েছে সেটাকে মেরে ফেলা বা জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া। জীবাণুমুক্ত হয়ে গেলে
গমের প্যাকেটটিকে ১২ ঘন্টার মতো রেখে এটাকে নরমাল তাপমাত্রায় আনা হয়
অর্থাৎ গমের প্যাকেটটাকে ঠান্ডা করা হয়।
তারপর এটাকে ঠান্ডা করার পর এটা কি ইনোকুলেশান করে ল্যাবে একটা লিকুইড
মিডিয়াম মধ্যে কটনের পাশ দিয়ে প্যাকেটের মধ্যে ইনজেক্ট করে দেওয়া হবে এর মধ্যে
যেন জীবাণু ঢুকতে না পারে। বিশুদ্ধ মাশরুম কালচার একটি পরীক্ষাগারে তৈরি করা হয়
যেখানে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির মাশরুম ছাড়া অন্য কোন জীবাণু থাকে না।
বৃদ্ধি ও পরিচর্যার জন্য কি ইনোকুলেশন করা গমের দানাগুলোকে উপযুক্ত তাপমাত্রা ২০
ডিগ্রি থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পরিবেশে রাখতে হয়।
মাশরুম বীজ সাধারণত মাশরুম চাষি কৃষি উপকরণ বিক্রেতা,বিভিন্ন অনলাইন
প্লাটফর্ম বা পেজ যারা কৃষি পণ্য বিক্রি করে থাকে,বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা
ইনস্টিটিউট( গাজীপুর), মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সাভার, ঢাকা, মাশরুম চাষে
প্রশিক্ষণ দেয় এমন কিছু বেসরকারি বেসরকারি সংস্থা, মৃত্তিকা গবেষণা
কেন্দ্র, বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান যারা মাশরুম করে, কৃষি উপকরণ ও কৃষি উপকরণ
সামগ্রী বিক্রি করে এমন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাশরুম বীজ বা স্পন কেনা যায়।
খুলনার প্রথম ও একমাত্র মাশরুম বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি হল ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালী
গ্রামের মাসুম হাউস বা মাশরুম ল্যাব। এছাড়া ও বিভিন্ন ছোট বড় উদ্যোক্তা যারা
কৃষি ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের কাছ থেকেও মাশরুম বীজ বা স্পন কেনা যায়। কৃষি
বিষয়ক বিষয়ক সংস্থা এবং আপনার এলাকার স্থানীয় নার্সারি থেকেও এই মাশরুম বীজ
সংগ্রহ করা যেতে পারে।
বিভিন্ন প্রকারের মাশরুম ও এর উপকারিতা
মাশরুম বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে। সাধারণত মৌসুম অনুযায়ী মাশরুম তিন ধরনের হয়।
সারা বছরব্যাপী যে মাশরুম হয়ে থাকে সেটি হলো ওয়েস্টার মাশরুম,ইয়ার মাশরুম।
সাধারণত গ্রীষ্মকালে হয় মিল্কি মাশরুম স্ট্র মাশরুম। এবং শীতকালে যে মাশরুম হয়
সেটা হচ্ছে বাটন মাশরুম,ই রেঞ্জি মাশরুম এবং সীতাকে মাশরুম। ওয়েস্টার
মাশরুম সারা বছর চাষ করা হয়। ওয়েস্টার মাশরুম আবার দশ ধরনের হয়ে থাকে বাংলাদেশ
মাশরুম গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।
ওয়েস্টার মাশরুম :
বাংলাদেশের দশ ধরনের পোস্টার মাশরুম সারা বছরব্যাপী চাষ করা হয় বাংলাদেশ
মাসুম গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এগুলো নামকরণ করা হয়েছে। তবে এগুলো সাংকেতিক নাম
ধরেই বেশি পরিচিত।
পিও ২ (PO-2)
এইচ কে ৫১ (HK 51)
পিওপি (POP)
এফ এল ও (FLO)
ডব্লিউ এস (WS)
পিওপি ২(POP 2)
পি ওয়াই (PY)
ওবিগ (Obig)
পিও ১০(PO 10)
পিসিওয়াইএস ২ (PCYS 2)
ইয়ার মাশরুম:
কাঠের গুড়াতে ভালো ফলন হয়।ঔষধি গুনসম্পন্ন এটি দেখতে অনেকটা কানের মত তাই
একে ইয়ার মাশরুম বলা হয়।
মিল্কি হোয়াইট মাশরুম :
এটি গরমকালে খুব ভালো হয়। মার্চ অক্টোবর সময়ে ভালো হয়। বাংলা বাটন
মাশরুম নামে এই মিল্কি মাশরুমটা পরিচিত।
ঋষি মাশরুম :
সাধারণত গরমকালে মার্চ এপ্রিল মে মাসে খুব ভালো জন্মে। এটার রেট মাসুম নামে
পরিচিত সাধারণত চায়ের সাথে গুড়া করে লিকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঔষধ ও
কসমেটিক শিল্পে ব্যবহার করা হয়। সরাসরি সবজি হিসেবে এটা খাওয়া যায় না।
স্ট্র মাশরুম:
৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত চাষ করা যায়।খড়ের ভেতর বেড করে গরমকালে চাষ হয়।
বাটন মাশরুম:
১৬ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। এটা ঠান্ডা আবহাওয়া
লাগে ফ্রেশ এয়ার এ ভালো জন্মেও উচ্চ আদ্রতা লাগে।
সীতাকে মাশরুম :
বিশ্বে উৎপাদনের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে সীতাকে মাশরুম। মেডিসিনাল
রোগ নিরাময় যোগ্য ভ্যালু অনেক বেশি। সবজি হিসেবেও এটা খাওয়া যায়। এটা
অন্যান্য জাতের চেয়ে খুবই সুস্বাদু। জাপানে এটি খুবই জনপ্রিয়। শীতকালে তৈরি করা
হয়।
ইরেঞ্জি মাশরুম বা কিং ওয়েস্টার মাশরুম :
ওয়েস্টারের এক ধরনের প্রজাতি হচ্ছে ইরিঞ্জি মাশরুম বা ওয়েস্টার মাশরুম।
ওয়েস্টারের সকল প্রজাতির গরমকালে চাষ করা যায় শুধুমাত্র ইরেঞ্জি বা কিং
ওয়েস্টার মাশরুম শীতকালে চাষ করা হয়।
মানকি হেড মাশরুম :
ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এই দুই মাসের চাষ করা যায় এর ঔষধি গুনাগুন অনেক
বেশি।
মাশরুমের ১৪ টি উপকারিতা:
আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন তার প্রত্যেকটি
মাশরুমে বিদ্যমান। আমাদের মানব দেহে যে নয়টি অ্যামাইনো এসিড অত্যাবশ্যকীয়
তার প্রত্যেকটি বিদ্যমান রয়েছে।
১০০ গ্রাম মাশরুমে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম প্রোটিন থাকে যা যা আমাদের
দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে অনেকটাই সক্ষম।
মাশরুমে রয়েছে পটাশিয়াম যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রেখে
আটকে সুস্থ রাখে।
মাশরুমে রয়েছে সিলিনিয়াম যা আমাদের লিভার ফাংশন কে সুস্থ রাখে
মাশরুমের সেল ওয়ালে রয়েছে বিটা গ্লুকোন নামক একটি ফাইবার যা ফাইবার
এর চাহিদা পূরণে সাহায্য করে এবং ফাইবার গ্রহণের ফলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
হয় ও কোলন এর বিভিন্ন যে রোগ হয় তা থেকে আমাদের দূরে রাখে।
মাশরুমগুলো সূর্যালোকে উৎপন্ন হয় তাতে ভিটামিন ডি রয়েছে। ভিটামিন ডি
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসকে শোষণে ত্বরান্বিত করে।
মাশরুমের ভিটামিন B১২ ও ভিটামিন বি ৬ ও ফলেট হয়েছে যা আমাদের লোহিত
রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।
এছাড়া মাশরুমে থাকা ফাইটো কেমিক্যাল টিউমারের বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান
করে।
মাশরুমে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট না থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা
গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে এটি খেতে পারে।
মাশরুম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকেও অনেক অংশে কমে যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে মাশরুমের টাইটারিং নামে এক ধরনের উপাদান
রয়েছে এখন দেশে এই এইডস প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নিয়মিত মাশরুম খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে
আমাদের শরীরে থাকা নয় টি এমাইনো এসিড,ফলেট ও লৌহ জন্ডিস প্রতিরোধে
সহায়তা করে
যাদের অল্প বয়সে চুল পেকে যায় তারা মাশরুম খেলে পাকা চুল প্রতিরোধে
সহায়তা হয়।
মাশরুম চাষ করতে কি কি লাগে?
মাশরুম একটি পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত একটি লাভজনক সবজি। অল্প পুজিতেই আপনি
এই কাজটি করতে পারেন। মাশরুম চাষের জন্য কয়েকটি ধাপকে অনুসরণ করতে হয়।
সর্বপ্রথম যা করা হয় তা বাণিজ্যিক মাশরুম বীজ বা স্পন তৈরি এবং এই স্পনটিকে
পরবর্তীতে জীবাণুমুক্তকরণ এর পরবর্তী ধাপে ইনকুলেশন করা এরপর এরপর এটিকে
ল্যাবে রেখে দেওয়া সম্পূর্ণ মাইসেলিয়াম বা ছত্রাক গ্রোথ হওয়ার পর এটিকে
চাষ ঘরে স্থানান্তর করা।চাষঘরে পরিচর্যা হওয়ার পরেই শুটিং বডিকে বা ফ্লাওয়ার
টাকে হারভেস্ট করা। মাশরুম চাষ করতে যেসব প্রয়োজন তা হল :
মাশরুম বীজ বা স্পন তৈরি করা : এটি তৈরি করতে কাঠের গুড়ি,গমের তুষ, পানি
এবং চুন।
পিপি প্যাকেট : গমতোষ ও চুনের মিশ্রণটি ভরার জন্য জন্য লাগবে পিপি
প্যাকেট।
পানি : পরিষ্কার পানি দিয়ে স্তরটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
প্রেসার কুকার বা অটোফ্লেভ মেশিন : গমের তৈরি মিশ্রণটি জীবাণুমুক্ত করার
জন্য প্রয়োজন অটো ক্লোজ মেশিন জীবাণুমুক্ত করার জন্য।
নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ: সাধারণত যে ঘরে এসি আছে বা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা এমন
একটি পরিবেশে এগুলোকে রাখতে হয়। সাধারণত ২০ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা
তারপরে চাষঘরে রাখলে মাইসেলিয়াম গ্রোথ খুব দ্রুত হয়।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ : সংক্রমণ ও পোকামাকড়ের সমস্যা এড়াতে পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
আদ্রতা : মাশরুম বীজ (স্পন )সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজন সঠিক আর্দ্রতা ও
তাপমাত্রা।
মাশরুম একটি পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত এবং লাভজনক সবজি। করার জন্য আলাদা করে
কোন জায়গার প্রয়োজন নেই কোন কীটনাশক বা ছত্রাক নাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই
খুব অল্প জায়গায় অল্প পুজিতেই এটি আপনার জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।
মাশরুম চাষে সফল হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনার যেটি প্রয়োজন তা হল গুণগত
মানসম্মত মাশরুম বীজ বা স্পন তৈরি। মানসম্মত মাশরুম বীজ বা স্পন না হলে আপনি ভালো
ফল পাবেন না। মাশরুম চাষের সফল হওয়ার জন্য কয়েকটি টিপস নিচের উল্লেখ করা হলো :
সফলতা নিশ্চিত করতে মানসম্মত মাশরুম বীজ বা স্পন তৈরি করুন।
চাষের জন্য প্রয়োজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ
মাশরুম চাষের জন্য সঠিক তাপমাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা মাশরুমের
বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য সঠিক তাপমাত্রা প্রয়োজন একে প্রজাতির মাশরুমের জন্য
একেক রকম তাপমাত্রা দরকার তাই সে সম্পর্কে আপনাকে জ্ঞান থাকতে হবে।
সঠিক আদ্রতা বজায় রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত পানি সেচ
মাশরুম চাষে নিয়মিত পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
সঠিক সময়ে মাশরুম সংগ্রহ করুন এবং ও মাশরুমের গুণগত মান বজায় রাখতে
এবং দূষন থেকে রক্ষা করতে ভালো প্যাকেজিং নিশ্চিত করুন।
মাশরুম চাষে বাজারজাতকরণ
মাশরুমের বীজের দাম ও বিস্তারিত পদ্ধতির সম্পর্কে আমরা আলোচনা বোঝা যায়
মাশরুম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে আপনার জন্য। মাশরুম চাষ থেকে থেকে
ভালো আয় করা সম্ভব বর্তমান বাজার মাশরুমের দাম হতে পারে প্রায় ৩০০ থেকে
৫০০ টাকা প্রতি কেজি। স্থানীয় বাজার ছাড়াও অনলাইন মার্কেট , সুপার শপ ও
রেস্টুরেন্টে বিক্রি করা যায়। বাংলাদেশের দিন দিন চাহিদা বাড়ছে এর কারণে অনেকেই
মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
সঠিক পরিকল্পনা করে চাষ করলে বছরে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।তাই
কেউ যদি কম টাকায় কম পুজিতে লাভজনক কৃষি প্রকল্প করতে চান মাশরুম চাষ হতে পারে
আপনার প্রথম পছন্দ। এতে এমন একটি চাষ যা খুব অল্প জায়গায় সহজে করা যায়। মাশরুম
বাজারজাতকরণের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে তা আপনাকে নিশ্চিত করতে
হবে যেমনঃ
মাশরুমের গুণগত মান সঠিক তাপমাত্রা আদ্রতা বজায় রেখে মাশরুম তৈরি করে
বাজারজাত করতে হবে
এক এক মাশরুমের একেক রকম চাহিদা কিছু মাশরুম আছে যেটা সারা বছর চাষ উপযোগী
আবার কিছু মাসুম আছে যেগুলো বিভিন্ন মৌসুমে চাষ করা হয়। বাজারে কোন মাশরুমের
চাহিদা বেশি সে সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকতে হবে।
স্থানীয় সবজি বাজার বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম রেস্টুরেন্ট বিভিন্ন
সুপারশপে আপনি এই মাশরুম বিক্রি করতে পারেন।
গুনগত মান বজায় রাখতে দূষণমুক্ত রাখতে মানসম্মত প্যাকেজিং নিশ্চিত করুন।
বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে প্রচার প্রসার ও ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আকর্ষণীয়
মোড়ক,মুদি দোকান ও স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা দাম, বিভিন্ন অনলাইন অফলাইন
প্ল্যাটফর্মে এর পুষ্টিকর দিক তুলে ধরা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে সরবরাহ করতে
হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি ও জনপ্রিয় মাশরুম কোনটি?
বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ওয়েস্টার মাশরুম বাটন মাশরুম ঋষি মাশরুম
গ্যানোডারমা মাশরুম চাষ হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ওয়েস্টার্ন মাশরুম অনেক
জনপ্রিয় ব্যাপকভাবে চাষ হয় এছাড়াও রয়েছে বাটন মাশরুম যা সারা বিশ্বে বেশ
জনপ্রিয়। মাশরুম চাষাবাদ তুলনামূলকভাবে সহজ খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না
বাড়ি রাঙিনায় এটি চাষাবাদ করা যায় এবং এর জন্য বেশি কিছু সরঞ্জামেরও প্রয়োজন
নেই। তাই আমাদের দেশে এই মাশরুম বেশি চাষ করা হয়।
গ্যানোডার্মা লুসিডিয়াম পৃথিবীর দ্বিতীয় দামি মাশরুম যা আমাদের দেশে ঋষি
মাশরুম নামে পরিচিত। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি মাত্র এবং এটির দামও অনেক বেশি
ইন্টারন্যাশনাল রেট প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ ডলার বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০০০ টাকার
কিছু বেশি প্রতি কেজি। অবশ্য এর থেকেও দামী মাশরুম রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে এর
থেকে দামি মাশরুম আর চাষ হয় না তো সেই হিসেবে ঋষি মাশরুম বাংলাদেশের সব থেকে
দামি মাশরুম। অনেক পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ আমাদের দেশের ওয়েদারে এটা খুব
ভালো হয়।
মাশরুম চাষের ট্রেনিং কোথায় হয়?
দিন দিন মাশরুম চাষ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনেকেই এটাকে ব্যাঙের ছাতা
বললেও এটি আসলে অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার ও উচ্চমানের ফসল। মাশরুমের বিভিন্ন
জাত রয়েছে তবে বর্তমানে আমাদের দেশে ওয়েস্টার মাশরুম ঋষি মাশরুম বা কেনডারমা
গ্যানোডার্মা মিলকি মাশরুম, সীতাকে মাশরুম বাটন মাশরুম বাণিজ্যিকভাবে চাষ
হচ্ছে। মাশরুম চাষ অন্তত লাভজনক মাশরুম চাষের সবচাইতে বড় সুবিধা হল এর জন্য
আলাদা কোন জমির প্রয়োজন হয় না আপনারা বাড়িতেই মাশরুম চাষ করতে পারেন।
আমাদের দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাশরুম চাষের উপরে
ট্রেনিং দিয়ে থাকে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান:
ঢাকার সাভারে অবস্থিত মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে আপনারা বিনামূল্যে
মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।সেখানে মাশরুম চাষ মাশরুম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও
মাশরুম বিপণন এর উপরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও হাতে-কলমে শেখানো হয়। কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট যেখানে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের
জন্য কাজ করা হয় এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। "হর্টিকালচার সেন্টার" সাভারেও
মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান :
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে রয়েছে সাভারের মাশরুম সেন্টার এখানে
অনলাইনের মাধ্যমে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। ছাড়াও বিভিন্ন কৃষি
বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেও মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ঢাকার বাইরে
বেসরকারিভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণের জন্য 'ড্রিম মাশরুম
সেন্টার' বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেটা মাগুরায় অবস্থিত। এখানে মাশরুম
চাষের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। মাগুরা যোগাযোগ করতে
পারেন।
মাশরুম বীজের দাম ও বীজ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সামনে তুলে
ধরেছি। আমাদের দেশে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যেহেতু চাষ পদ্ধতি বেশ সহজ
এবং আলাদাভাবে কোন জমির প্রয়োজন হয় না এবং অল্প পুজিতেই ব্যবসা করা সম্ভব। মাশরুম বীজ বা স্পন কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে বীজের দাম সম্পর্কে থাকতে হবে
তাহলে আপনি ব্যবসার জন্য কিনতে পারবেন। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে বিভিন্ন
প্রজাতির মাশরুম বিক্রয় কেন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা করেছে আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ
পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি উপকৃত হবেন।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি মাশরুম চাষের সফল হতে চান তাহলে অবশ্যই মানসম্মত মাশরুম বীজ
বা স্পন তৈরি, পরিবেশ ও তাপমাত্রা পরিচর্য রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা
প্রয়োজন। যেহেতু মাশরুম চাষ অন্যান্য চাষাবাদ এর চাইতে তুলনামূলক সহজ ও কম
পরিশ্রম সেক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ট্রেনিং সেন্টারের
মাধ্যমে আপনি প্রশিক্ষণ নিয়ে সহজেই এই চাষ শুরু করে এবং নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে
সচ্ছল স্বাবলম্বী করতে পারেন। আজকে এই পর্যন্ত আর্টিকেলটি ভাল লাগলে পরিচিতজনদের কাছে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ রইল।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url