কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থানসমূহ ঘুরে দেখার কথা ভাবছেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি
পড়ুন। আজকে আর্টিকেলে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানসমূহ কুয়াকাটায় থাকা খাওয়া
বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
ভ্রমণ গাইডের আজকের আর্টিকেলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় কিভাবে যাবেন কুয়াকাটার
দর্শনীয় স্থানসমূহ কোথায় খাবেন কোথায় থাকবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়
আপনাদের সামনে তে তুলে ধরবো।
পেইজ সূচিপত্র : কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থানসমূহ
কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থানসমূহ
কুয়াকাটায় শুধু সমুদ্র সৈকত নয় এখানে দেখার মত আছে আরো অনেক দর্শনের
স্থান। পূর্ব ও পশ্চিমে ঝাউবন তিন নদীর মোহনায় লেবুর চড়, গঙ্গা মতির
জঙ্গল, লাল কাকড়ার দ্বীপ, সবুজ অরণ্য উপভোগের সাথে সাথে পাবেন সুন্দরবনের একাংশ
দেখার সুযোগ। কিংবা কুয়াকাটার ঐতিহাসিক কুয়া, বৌদ্ধ মন্দির, কিংবা দুর্গমচর
বিজয় অভিযানের জন্য কুয়াকাটা বেড়াতে যেতে পারেন।
-
শুটকিপল্লী জেলে পল্লীর
অবস্থান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের প্রান্তে এখানে মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস
পর্যন্ত শুটকি তৈরির মৌসুম চলে। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে সৈকতের পাশেই মাছ
শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। চাইলে জেলেদের কর্মব্যস্ততা দেখে সময় কাটাতে
পারেন আর কম দামে কিনে নিতে পারেন বিভিন্ন ধরনের পছন্দের শুটকি।
-
ক্র্যাব আইল্যান্ড কুয়া
কাটার সমুদ্র সৈকত ধরে পূর্ব দিকে অনেকটা দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেলেই ক্রাব
আইল্যান্ড বা কাকড়ার দ্বীপখ্যাত জায়গার চোখে পড়বে। এখানে নির্জন সৈকত ঘুরে
বেড়ায় হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার দল ভ্রমণ মৌসুমের সময় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে
মার্চ মাস পর্যন্ত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ক্র্যাব আইল্যান্ডে যাবার
স্পিড বোর্ড পাওয়া যায়।
-
গঙ্গামতির চর পূর্ব দিকে
গঙ্গা মতির খাল পর্যন্ত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে। আর এ জায়গা থেকে
গঙ্গা মতির জঙ্গল শুরু বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ছাড়া ও এ জঙ্গলে দেখা মেলে
বিভিন্ন রকম পাখি বন মোরগ মুরগি বাচ্চাদের পশু পাখিরা।
-
ফাতরার বন সমুদ্র সৈকত থেকে
পশ্চিম দিকে অবস্থিত অবস্থিত নদীর অন্যপার্ট থেকে ফাতরার বন শুরু এই বনে
রয়েছে সুন্দরবনের প্রায় সকল বৈশিষ্ট্য। এখানে বনমরোগ বানর বুনো শুকর ও
নানাধরণের পাখি পাওয়া যায়। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বন যেতে হলে আপনাকে
ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে।
-
কুয়াকাটার কুয়া কুয়াকাটার
নামকরণের পিছনে যে ইতিহাস রয়েছে সেই ইতিহাসের সাক্ষী কুয়াটি এখনো রয়েছে।
দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে রাখাইনদের বাসস্থান কেরানি পারা।
-
সীমা বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটার প্রাচীন একটু সামনে সীমাবদ্ধ মন্দিরের অবস্থান। এক বছর আগে কাঠের
তৈরি এমন দিন ভেঙে দালান করা হয়েছে। মন্দিরের রয়েছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের
অষ্টধাতুর তৈরি একটি একটি বৌদ্ধ মূর্তি।
-
কেরানি পাড়া সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলেই রাখাইনদের
আবাসিক স্থল কেরানি পাড়া রাখাইন নারীরা অনেক দক্ষ ও তাদের তৈরি শীতের চাদর
অনেক আকর্ষণীয়।
-
মিশ্রি পাড়া বুদ্ধ মন্দির কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে রাখাইনদের আরেকটি গ্রাম
মিশ্রি পাড়ার বড় একটি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে।জনশ্রুতি আছে এই মন্দিরের ভিতরে
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটার বাস সার্ভিস কি কি?
ঢাকার সায়দাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, আরামবাগ অথবা গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে
সাকুরা পরিবহন অথবা শ্যামলী পরিবহন, গ্রীন লাইন, ইউরো কোচ, হানিফ টিআর ট্রাভেলসসহ
আরো অনেক পরিবহনে বাস সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা টু কুয়াকাটা বাস ৭৫০ টাকা নন
এসি।১১০০ টাকা এসি বাসের ভাড়া।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায় কি?
নদী ও সড়কপথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা
থেকে কুয়াকাটা অনেক কম সময়ে সহজেপৌঁছানো যায়। ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব
প্রায় ২৮০ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬/৭ ঘন্টা। ঢাকার বাস
স্ট্যান্ড সায়দাবাদ আব্দুল্লাহপুর আরামবাগ গাবতলী থেকে বিভিন্ন পরিবহন যেমন
সাকুরা শ্যামলী গ্রীন লাইন ইউরো কোচ হানিফ টিআর ট্রাভেলস সহ আরো অনেক পরিবহন
সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে চাইলে নন এসি ৭৫০ টাকা আর
এসি বাস ১১০০ টাকা মত ভাড়া খরচ হবে।
ঢাকা থেকে লঞ্চে কুয়াকাটা
নদীপথে সদরঘাট থেকে সরাসরি কুয়াকাটা যেতে না পারলেও বরিশাল অথবা
পটুয়াখালী গিয়ে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে পারবেন। আপনি যদি লঞ্চ ভ্রমণের
অভিজ্ঞতা নিতে চান তাহলে একটু কষ্ট হলেও ভালো একটি লঞ্চে ভ্রমণ আপনার জন্য
আনন্দদায়ক হবে। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যাত্রী সংকটের কারণে ঢাকার সদরঘাট
আগের মতো ভালো সার্ভিসের লঞ্চ চলাচল করে না। লঞ্চে যেতে চাইলে আগেই খোঁজ নিতে হবে
আপনার ভ্রমণ তারিখ এ ভালো কোন লঞ্চ চলাচল করবে কিনা।
সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পটুয়াখালী যাবার লঞ্চ ছেড়ে যায় এবং সকাল ৭টার
দিকে পটুয়াখালী পৌঁছায়। পটুয়াখালী লঞ্চঘাট থেকে অটোতে বাস স্ট্যান্ড গিয়ে
লোকাল বাসে যেতে হবে কুয়াকাটা। যেতে সময় লাগবে দুই ঘন্টার মত।এছাড়াও সদরঘাট
থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে একাধিক লঞ্চ ছেড়ে ভরে বরিশাল পৌঁছায়। বরিশাল লঞ্চঘাট
থেকে রুপাতলী বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে কুয়াকাটায় যাবার বাস বাসে যেতে সময় লাগবে
তিন ঘন্টার মত।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে কি কি আছে?
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেখার মত বেশ কিছু জায়গা রয়েছে কুয়াকাটা দর্শনীয়
স্থানসমূহ ঝাউবন এবং তিন নদীর মোহনা, কাকড়ার চর, বৌদ্ধ মন্দির, দুর্গম চর, শুটকি
পল্লী দুর্গম ফাতরার বন, কেরানি পাড়া বৌদ্ধমন্দির, লেবুর বন প্রভৃতি। আপনার
প্ল্যান যদি হয় শুধু সমুদ্র দেখার তাহলে ভ্রমণের পুরোটা সময় জিরো পয়েন্টের
আশেপাশে সমুদ্র দেখে এবং বীচ অ্যাক্টিভিটি করে সময় কাটিয়ে দিতে পারেন।
কুয়াকাটা গেলে কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থানসমূহ না দেখলে আপনার ভ্রমণ পরিপূর্ণ হবে
না। সে ক্ষেত্রে অন্তত একটি রাত থাকার প্ল্যান নিয়ে আসলে সব থেকে ভালো হয়।
কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টকে কেন্দ্র করে এর পূর্ব দিকে এবং পশ্চিম দিক মিলিয়ে
সবগুলো স্থানের অবস্থান। সূর্যোদয় দেখার সব থেকে ভালো স্থান কুয়াকাটার পূর্ব
প্রান্তে গঙ্গামতির চরে।তাই সকালটা রাখুন পূর্ব সৈকত ঘুরে আসার জন্য। আর বিকেলটা
এখন পশ্চিম সৈকতের পার্শ্ববর্তী স্থানগুলো দেখতে যাওয়ার জন্য। এখানে ঘুরে দেখার
বাহনগুলো হচ্ছে মোটরসাইকেল ইজিবাইক ও ভ্যান গাড়ি জিরো পয়েন্টে আশেপাশেই পেয়ে
যাবেন।
কক্সবাজার না কুয়াকাটা কোনটি ভালো?
কক্সবাজার না কুয়াকাটা ভালো এটা নির্ভর করছে ব্যক্তির পছন্দের উপর, বাজেট ও
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর উপর। সমুদ্র সৈকতের শান্ত ও নির্জন পরিবেশ ও নৈসর্গিক
ছোঁয়া পেতে তাইলে কক্সবাজারের না গিয়ে আপনি চলে যেতে পারেন কুয়াকাটা। এখন
প্রশ্ন হচ্ছে কুয়াকাটা কি সত্যিই ভালো? অনেকেই মনে করেন কুয়াকাটা যাওয়া
কক্সবাজারের চাইতে কঠিন। কিন্তু আসলে বিষয়টি তা নয় আর যাতায়াত ব্যবস্থা আগে
চাইতে অনেক ভালো এখন খুব সহজেই কুয়াকাটায় যাওয়া যায়।চলুন জেনে নেই কি কি
কারণে কক্সবাজারের চাইতে কুয়াকাটা ভালো।
যাতায়াত ব্যবস্থা
কুয়াকাটা যাওয়া সহজ জার্নি আপনি সমুদ্র দেখার পাশাপাশি বোনাস হিসেবে লঞ্চে করে
নদী দেখতে পারবেন। অন্যদিকে আপনি যদি বিমানে না যান তাহলে কক্সবাজার যেতে ১০ থেকে
১২ ঘন্টার একটি জার্নি করতে হয় যা বেশ ক্লান্তিকর। আসা-যাওয়া করতে বাসেই দুই
দিন চলে যায়।
থাকার খরচ
কুয়াকাটায় পর্যটকদের থাকার জন্য সব ধরনের দামী কম দামি হোটেলের ব্যবস্থা
রয়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজারে পিক সিজনের সময় হোটেল ভাড়া যেমন বেশি থাকে তেমনি
নিম্নমানের হোটেল গুলোতে ও অনেক ভাড়া থাকে। এছাড়া খাবার-দাবারের দাম
তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম কক্সবাজারের চাইতে।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত
কুয়াকাটা দেশের একমাত্র জায়গায় যেখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত
দেখতে পারবেন যা গোটা পৃথিবীতে বিরল। মানুষের ভিড় তুলনামূলকভাবে কুয়াকাটায় কম
ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় ভালোভাবে।
প্রাকৃতিক রূপ
নজর খারাপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে কুয়াকাটায় রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি।
কুয়াকাটা হচ্ছে প্রকৃতির হাতে সাজানো এক ছিমছাম নৈসর্গ।
আশেপাশের টুরিস্ট স্পট
সমুদ্র সৈকত বাদে ও কুয়াকাটা দেখার মত আছে আরো বেশ কিছু স্পট। এখানে
সুন্দরবনের সবগুলো বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ ম্যানগ্রোভ বনের দেখা পাবেন যা
ফাতরার বন নামে পরিচিত।
সীমা বৌদ্ধবিহার
কক্সবাজার এলে একবার হলেও রামুর বৌদ্ধ মন্দির দেখতে চান পর্যটকেরা
কুয়াকাটাতেও সেই সুযোগ রয়েছে। কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার একটু সামনে এক মন্দিরের
অবস্থান যার নাম সীমা বৌদ্ধ বিহার। কয়েক বছর আগে কাঠের তৈরি এই মন্দির ভেঙে
দালান তৈরি করা হয়েছে। এই মন্দিরে রয়েছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি
একটি বৌদ্ধ মূর্তি।
এছাড়াও এখানে রয়েছে কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়া সোনার চর, কেরানি পাড়া রাখাইন
আবাস,শুটকি পল্লী ওর আলিপুর মাছ বাজার এসব জায়গায় ঘুরেও দারুন সময় কাটাতে
পারবেন। তবে কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম অক্ষন্ডিত বালুময় সমুদ্র সৈকত, সমুদ্রের
ঢেউ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আশেপাশের পাহাড় নিঃসন্দেহে পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করে। তবে
আপনি যদি নিরিবিলি কোলাহলমুক্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন আরেকটু কম খরচে
ঘুরে বেড়াতে চান সেক্ষেত্রে কুয়াকাটা ভালো।
কুয়াকাটা ভ্রমণ খরচ ও ভ্রমণ গাইড
আপনার প্ল্যান যদি হয় শুধু সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখার তাহলে জিরো পয়েন্টের
আশেপাশে সমুদ্র সৈকত দেখে ও বিচ এক্টিভিটি করে সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। তবে
কুয়াকাটা এসে কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থানসমূহ না দেখলে আপনার ভ্রমণের আনন্দটা
পরিপূর্ণ হবে না। অন্তত একদিন অথবা দুদিন থাকার প্ল্যান করে আসুন।কুয়াকাটায়
ঘুরে দেখার বাহন হচ্ছে সাইকেল ইজি বাইক ও ভ্যান গাড়ি যা জিরো পয়েন্টের আশেপাশেই
আপনি পাবেন।
আপনি কোন কোন জায়গায় ঘুরে দেখবেন তার ওপর নির্ভর করে প্যাকেজের দরদাম করে
নিতে হবে। মোটামুটি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মত খরচ হবে। একটি বিষয় মনে রাখবেন
এখানে প্যাকেজে অনেকগুলো জায়গার নাম থাকলেও আদৌতে কিছুই নেই। অনেকগুলো শুধু
নামেই রয়েছে তবে কিছুই স্পট কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে থেকে হাঁটা দূরত্বে
রয়েছে। প্রথম দিন সকালে হোটেল চেকিং দুপুরে সমুদ্র স্নান করে খাওয়া দাওয়া।
দুপুরের পর একটা মোটরসাইকেল ভাড়া করবেন।কুয়াকাটাতে দেখার মত জায়গা আছে প্রায়
২০টি। সব জায়গা দেখতে ১০০০ হাজার থেকে ১৫০০ টাকার মতো লাগবে।১২ টি জায়গার জন্য
৬০০ থেকে ৮০০ এবং বাকি ৮টি জায়গার জন্য ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা লাগবে।
আর বাইক ওয়ালারা বেশি টাকা চাইতে পারে তাই দরদাম করে নিবেন। বিকেলের ফিশ মার্কেট
লেবুরবন শুটকি পল্লী ঝাউবন এবং তিন নদীর মোহনা দেখবেন। চেষ্টা করবেন লেবুর বনে
সূর্যাস্ত দেখার। তৃতীয় দিন খুব ভরে ওই মোটরসাইকেল ওয়ালারাই যদি আগে থেকে কথা
বলে রাখেন তাহলে আপনাকে নিয়ে যাবে গঙ্গামতির চর। সূর্যোদয় লাল কাকড়ার চর দেখে
ফেরার পথে রাখাইনপল্লী মার্কেট, কুয়া, বৌদ্ধমন্দির ২০০ বছরের পুরাতন নৌকা দেখে
হোটেলে ফিরবেন। দুপুরে খাবার পর ফাতরার বন দেখে ঘুরে আসতে পারবেন।
লঞ্চে রাতে বাড়িতে ফিরতে চাইলে অবশ্যই বিকেল পাঁচটার আগে পটুয়াখালী
লঞ্চঘাটে থাকবেন। এক্ষেত্রে ওই দিন ফাতলার বন ঘোরার প্ল্যান বাদ দিতে হবে। তাইলে
বরিশাল হয়েও লঞ্চে ফিরতে পারবেন। বরিশাল থেকে ঢাকার শেষ লঞ্চ ছাড়ে রাত নয়টায়।
খরচ কেমন হবে সেটা নির্ভর করে আপনি কখন যাবেন, কোন মানের হোটেলে থাকবেন, কেমন
খাবেন এবং কিভাবে খাবেন তার উপর।২ জন, ৪ জন, ৮ জন অথবা গ্রুপ করে বেড়াতে গেলে
হোটেল ভাড়া এখন গাড়ি ভাড়া করার ক্ষেত্রে সুবিধা রয়েছে তুলনামূলক খরচ কম হয়।
আপনি যদি পিক সিজনে বেড়াতে যান সে ক্ষেত্রে হোটেল ভাড়া কিছুটা বেশি হবে।
ছুটির দিন বা পিক সিজন ছাড়া বেড়াতে গেলে হোটেল বুকিং গাড়ি ভাড়া এবং খাবার
সবকিছুতেই ছাড় পাওয়া যায়। নন এসি বাসে গেলে যাতায়াত খরচ কমে। নিচে খরচের একটি
আনুমানিক নমুনা দেওয়া হলো।
ঢাকা টু কুয়াকাটা বাস ভাড়া
এসি :৭৫০ টাকা
নন এসি:১১০০ টাকা
মোটামুটি মানের ডাবল বেড ভাড়া
২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা
মোটরসাইকেল ভাড়া দুই জনের জন্য
১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা
সূর্যাস্ত দেখার জন্য কাউয়ার চর
অটো রিজার্ভ ভাড়া ১৫০০ টাকার মত
বোট টুর খরচ
জিরো পয়েন্টের আশেপাশে বোট ট্যুর খরচ জন প্রতি ৩৫০ টাকা- ৫০০টাকা
ভ্রমণ সতর্কতা
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নামার আগে সেই জায়গাটি নিরাপদ কিনা তা
অবশ্যই জেনে সমুদ্রে নামবেন। নির্ধারিত জায়গায় ছাড়া সমুদ্রে নামবেন না। খাওয়া
দাওয়া, কাটা কেনাকাটা ও বাইক ভাড়া সবকিছুই দরদাম করে ঠিক করে নিন। কোন সমস্যায়
কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশের সহায়তা নিন।
কুয়াকাটা হোটেল ভাড়া কত?
কক্সবাজার এর মত এত আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট না থাকলেও কুয়াকাটা আপনার বাজেট
অনুযায়ী হোটেল ও রিসোর্ট পেয়ে যাবেন। মোটামুটি মানের হোটেলে থাকতে আপনার খরচ
পড়বে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কম বাজেটে থাকার জন্য দুজনের জন্য রুম পেয়ে যাবেন
১৮০০ থেকে ২৩০০ টাকার মধ্যে। বাজেট যদি আপনার সমস্যা না হয় সেক্ষেত্রে চলে যেতে
পারেন সিকদার রিসোর্ট এর মত অভিজাত রিসোর্টে। নির্ভর করে আপনি কখন যাবেন এবং কোন
মানের হোটেলে থাকবেন।
মোটামুটি মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে যেগুলো ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা ডাবল বেড
ভাড়া প্রতি রাত। তবে নন এসি কিছু কিছু হোটেল রয়েছে প্রতি রাত নন এসি ১০০০ থেকে
১৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আপনি যদি পিক সিজন কুয়াকাটা বেড়াতে যান সে
ক্ষেত্রে হোটেল ভাড়া কিছুটা বেশি পড়বে। আপনি পিক সিজন ছুটির দিনগুলো বাদে
বেড়াতে গেলে খরচ কিছুটা কমে আসবে। তবে আপনি যদি কোন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে
যান হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং করেন ক্ষেত্রে কিছু টাকা বেশি লাগবে। তবে পর্যটন
মৌসুমে আগে থেকে হোটেল বুকিং না দিলে মুশকিল হবে।
কুয়াকাটার কিছু হোটেলের নাম
Hotel graver in international
Blue ocean hotel and resort
Sidker resort & villas
Ocean view hotel
Kuyakata grand hotel & sea resort
Hotel the Marwah
Hotel kansai Inn
Hotel grand safa Inn
এছাড়া আপনার বাজেটের মধ্যে দামি এবং কম দামি আরও কিছু হোটেল রয়েছে।
কুয়াকাটায় কোথায় খাবেন?
কুয়াকাটাই বেশিরভাগ হোটেলে নিজস্ব রেস্টুরেন্টে তাদের অতিথিদের খাবার জন্য
ব্যবস্থা করা হয় এছাড়াও এখানকার স্থানীয় রেস্টুরেন্টেও বিভিন্ন রকম দেশি খাবার
পাওয়া যায়। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের আশেপাশে অনেক খাবার হোটেল পেয়ে যাবেন।
কুয়াকাটা এগিয়ে ফিশ বারবিকিউ এর স্বাদ না নিলে ভুল করবেন। জিরো পয়েন্টের পাশে
ফিশ ফ্রাই মার্কেট।আপনি দরদাম করে পছন্দ মতো সাগরের মাছ কিনে দিলে আপনার সামনেই
তারা বারবিকিউ করে দিবে।
একপাশে সাগরের ঢেউ অন্য পাশে খোলা উন্মুক্ত জায়গায় ফিশ বারবিকিউ এর স্বাদ
আপনার সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে কুয়াকাটা গিয়ে ইলিশ মাছ ভাজা খেতে
ভুল করবেন না কুয়াকাটা ইলিশ মাছ ভাজা পর্যটকদের কাছে খুবই পছন্দের। কুয়াকাটা
সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে অনেক সি ফুড,ফিশ ফ্রাই এর দোকান,বাংলা খাবারের দোকান,
হোটেল ও রেস্তোরা রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দ ও বাজেট অনুযায়ী খাবার খেতে
পারবেন।প্রকৃতিপক্ষে খাবারের দাম নির্ভর করে খাবারের মান লোকেশান ও রেস্টুরেন্টের
এর উপর।
কুয়াকাটা কিসের জন্য বিখ্যাত?
বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি যা বরিশাল
বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। এটি কক্সবাজারের পর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান
পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এটি প্রায় 18 কিলোমিটার দীর্ঘ ও খুবই চওড়া। এর
প্রধান আকর্ষণ হল একই স্থান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য একই
সঙ্গে উপভোগ করা যায়। এক পাশে সূর্যোদয় এবং অন্য প্রান্তে সূর্যাস্ত দেখার
সুযোগ পর্যটকদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে।
কুয়াকাটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করে তাই কুয়াকাটা সমুদ্র
সৈকত পর্যটকদের ভীষণ পছন্দের জায়গা যা সাগর কন্যা নামে পরিচিত।সমুদ্রের ঢেউ এবং
ধূসর বালি পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করে। এখানে বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক খাবার নারকেল
স্থানীয় কুটির শিল্পের দোকানও পাওয়া যায়। কুয়াকাটার প্রধান আকর্ষণ গুলোর
মধ্যে যেসব জায়গায় রয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো।
- সমুদ্র সৈকত
-
ফাতরার বন যার দ্বিতীয় সুন্দর বন নামে পরিচিত
-
রাখাইন পল্লীতে অবস্থিত কুয়াকাটার কুয়া
- তিন নদীর মোহনায় লেবুর চর
- গঙ্গা মতির জঙ্গল
- লাল কাকড়ার দ্বীপ
- বৌদ্ধ মন্দির ও
-
দুর্গম চর প্রকৃতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
বিখ্যাত।
শেষ কথা:কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থানসমূহ
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের সামনে তুলে
ধরেছি। কারো পছন্দ পাহাড় আর কেউবা পছন্দ করে সমুদ্র। আপনি যেখানেই যান না কেন
সেই জায়গাটি নিরাপদ কিনা তা ভালো করে যাচাই বাছাই করে দেখবেন। নির্ধারিত জায়গা
ছাড়া অন্য কোথাও নামবেন না। যারা পর্যটক এরিয়াগুলোতে স্থানীয় লোকজন পর্যটকদের
কাছে কেনাকাটা, খাবার দাবার, যাতায়াত ভাড়া তুলনামূলক বেশি চেয়ে থাকে।
ক্ষেত্রে অবশ্যই দরদাম ঠিক করে নিবেন।
ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করে নিন।নির্ধারিত
জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও সমুদ্রের নামবেন না।যেকোনো সমস্যায় টুরিস্ট পুলিশের
সহায়তা নিন। আপনার ভ্রমণটি সুন্দর ও আনন্দময় হোক এ কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ
করছি। পরবর্তী আর্টিকেলে আরো কোন নতুন কোন জায়গার ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য আপনাদের
সামনে তুলে ধরবো। আজকে আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই
কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার পরিচিত জন ও বন্ধু-বান্ধবের নিকট আর্টিকেলটি শেয়ার
করার জন্য অনুরোধ থাকলো।
Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url