বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। একটি সুস্বাদু ফল এবং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।


বেলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

তবে যে কোন কিছুই পরিমাণের চেয়ে অধিক খেলে তার স্বাস্থ্যের জন্য কিছু ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলে বেল এর উপকারিতা অপকারিতা ও বেল খাওয়ার নিয়মসহ বিস্তারিত আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

পেইজ সূচিপত্র : বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

 বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তবে বেলের উপকারিতা অনেক বেশি।বেল একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল গরমের দিনে বেলের শরবত এর জুড়ি মেলা ভার। বেলে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ক্যালসিয়াম ফসফরাস ও পটাশিয়াম। ছাড়াও বেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কাল যখন শেষ হয়ে যায় ও গরমকাল যখন শুরু হয় ঠিক সেই সময় আমরা পাকা বেল পাই। বেল পাকা ও কাঁচা দুটোই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।আমাদের শরীরে নানাবিদ উপকার করে। বেল গাছে সব কয়টি উপাদান কি বলা হয় ভেষজ গুণসম্পন্ন।
বেলের ২১ টি উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
  1. বেল আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  2.  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেলের জুরি নেই কারণ বেলের রস রক্তের শর্করা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  3.  বেলের এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আমাদের শরীরের যে কোন জায়গার ইনফেকশন বা ক্ষত  দূর করতে সাহায্য করে।
  4.  লিভার ও কিডনিতে যে টক্সিন বা জীবাণুগুলো রয়েছে সেগুলো বের করতে বেল সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  5.  পরিমিত পরিমাণ বেল খেলে শরীর ঠান্ডা ও ক্লান্তি দূর করে।
  6.  বেল লুজমোশন এর ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।
  7.  বেল কোষ্ঠকাঠিন্য যেমন দূর করে তেমনি আমাশা রোগেও ভীষণ উপকারী 
  8.  পাকা বেলের শরবত শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও বলবর্ধক বৃদ্ধি করে।
  9. বেল পেটের আলসার সারাতে সাহায্য করে 
  10.  বেল মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  11.  যে সকল রোগীদের পাইলস আছে যারা বেল অথবা বেলের শরবত নিয়মিত কিছুদিন খাবে সে ক্ষেত্রে তাদের পাইলসের ফোলা ও যন্ত্রণা দুটোই কমে যাবে।
  12.  হলে শরীরে  বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় পাকা বেল গোল মরিচের সাথে মিশিয়ে শরবত করে খেলে জন্ডিসের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
  13.  বেল হৃদপিণ্ড ও লিভারের জন্য বেশ উপকারী।
  14.  বেল ঠান্ডা দূর করতে সহায়তা করে 
  15.  বেলের বিটাক্যারোটিন উপাদান টিউমারের কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে
  16.  শুক্রের তারল্য বৃদ্ধি করে। শুক্রাণু যদি খুব তরল হয়ে থাকে তাহলে বেল গাছের শিকড় জিরার সাথে বেটে ঘি সাথে খেলে শুক্রানু ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে পারে 
  17.  বেলের পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি উপশম হয় 
  18.  বেলের পাতা হজম শক্তি বাড়ায় এবং এটি বলবর্ধক।
  19.  বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বেলপাতা দুইবার তিনটি বেলপাতা  মচমচে করে ভেজে মিশ্রিরর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে এক সপ্তাহ খাওয়ালে স্মৃতিশক্তি বাড়তে সহায়তা করে।
  20.  অনেকের পেট ব্যথা বা পেট খারাপ থাকে প্রায় সারা বছরই এক্ষেত্রে বেল তাদের জন্য বেশ উপকারী।
  21.  যে সকল নারীরা শিশুকে বুকের দুধ পান করান বুকের দুধ উৎপাদনে তাদের জন্য বেল পাতার রস খুবই উপকারী।
 বেলের অপকারিতার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো 
  1.  বেল পরিমাণের অধিক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে 
  2.  অতিরিক্ত বেল খেলে রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে 
  3.  প্রয়োজনের অধিক বেল খেলে শরীরে এলার্জির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  4.  এছাড়া বেল পরিমিত না খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই বেল একটানা কিছুদিন খাওয়ার পর বিরতি দিয়ে তারপরে খাওয়া শুরু করুন।
  5.  অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বেল খেলে পেট ফাঁপা ও বমি ভাব হতে পারে।
  6.  আবার অনেকেই আছেন যারা বেলের সাথে চিনি মিশিয়ে খান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর ক্ষতিকর।
  7.  যদি পেটে কোন অসুখ থাকে সে ক্ষেত্রে বেল খাওয়া ক্ষতির কারণ হতে পারে তাই পেটের অসুখ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
  8.  অতিরিক্ত পরিমাণ পাকা বেল খেলে অন্ত্রের ছিদ্র হতে পারে তবে কাঁচা বেল খেলে এই সমস্যা হয় না।

 পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা 

 বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটি রয়েছে তবে বেলের উপকারিতা চেয়ে উপকারিতা বেশি। আমরা যদি পরিমিত নিয়ম অনুযায়ী খাই তাহলে বেল খেলে কোন ক্ষতি নেই। বেলে রয়েছে ভিটামিন এ সি ক্যালসিয়াম ফসফরাস ও পটাশিয়াম পুষ্টিবিদদের মতে, বেল শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে  সহায়তা করে। নিচে পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
  1.  বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যা যেমন পেট ব্যথা পেট ফাঁপা কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় দূর করতে পাকা বেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  2.  পাকা বেল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  3.  এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে 
  4.  আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী যাদের মুখে ব্রনের সমস্যা আছে তাদের ব্রণ কমতে সহায়তা করে।
  5.  পাকা বেলে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রেখে ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে
  6.  পাকা বেল হজম শক্তি বাড়ায় এবং পেটের গ্যাস কমায় 
  7.  পাকা বেলের শরবত শরীর ও শরীর ঠান্ডা রাখে।
  8.  পেটের অসুখ ও আলসার নিরাময়ের কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন।
  9.  ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  10.  আমাদের স্টুল বা মল ক্লিয়ার করে এতে কোন সন্দেহ নেই।
  11.  পাকা বেল খেলে মহিলাদের মাসিক ক্লিয়ার হয়।
  12.  বেল খেলে প্রসাব ক্লিয়ার হয় ও প্রস্রাবের ক্ষয় প্রতিরোধ হয়।
  13.  বেল খেলে শরীরের জ্বালাপোড়া কমে।
  14.  পাকাবেল আমাদের হৃদপিণ্ড ও লিভার ভালো রাখে
  15.  নিয়ন্ত্রণের পাকা বেলের রস খুবই উপকারী।

পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি?

মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল হচ্ছে বেল। এটি সুস্বাদু ও এবং সহজলভ্য। গ্রীষ্মকালের শুরুতে অনেকেই পাকা বেলের শরবত খেতে পছন্দ করে কিন্তু আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে পাকা বেলের কিছু অপকারিতা রয়েছে এটি স্বাস্থ্যের জন্য ততটা ভালো না।পাকা বেল অত্যন্ত গুরুপাক খাবার। এটি খেলে পেটের ভিতর দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু উৎপন্ন করে। নিয়মিত পাতাদের খান তাদের জন্য সতর্ক হওয়া উচিত। এই নিয়ম অনুসারে পরিণত না খেলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।পাকা বেলের কিছু অপকারিতা তুলে ধরা হলো 
 আরো পড়ুন :
  1.  বেল প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে 
  2. অতিরিক্ত খেলে এলার্জি সমস্যা তৈরি হতে পারে 
  3.  অনেক ক্ষেত্রে বেল খেলে হজমের সমস্যা অতিরিক্ত বেল খেলে ওজনের সমস্যা হতে পারে তাই যারা নিয়মিত বেল্ট পান তারা কিছুদিন বিরতি দিয়ে পুনরায় শুরু করবেন।
  4.  এটি পেটের ভেতর দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু উৎপন্ন করে 
  5.  এটি খেলে খিদে কমে যায় 
  6.  পাকা বেল খেলে পেট ফাঁপা ও বমি হতে পারে 
  7.  পাকা বেলের শরবতে চিনি মিশিয়ে খেলে তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর 
  8.  পাকা বেল অতিরিক্ত খেলে রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে 
  9.  যদি আপনার পেটে কোন অসুখ থাকে সেক্ষেত্রে বেল না খাওয়াই ভালো তবে যদি খেতে চান সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা

 বেল খুবই পুষ্টিকর ও উপকারী ফলগুলোর মধ্যে একটি। বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে তবে বেলের উপকারিতায় বেশি। গরমে প্রান শীতল করতে বেলের শরবতের কোন জুড়ি নেই। কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়।এটি আমাদের শরীরে নানা রকম উপকার বয়ে নিয়ে আসে। খালি পেটে বেল খেতে পারলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। যে খালি পেটে বেল খাওয়ার কিছু উপকারিতা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।

  •  বেল কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় দূর করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে 
  •  খালি পেটে বেল খেলে আমাশা ও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে খুব দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়।
  •  বেল নরম এবং সহজপাচ্য তাই এই ফলটির খাবার হজমের দারুণভাবে সাহায্য করে।
  •  বেলে  থাকা ভিটামিন এ চোখ ভালো রাখে ও ত্বক সুন্দর করে 
  •  ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে 
  •  ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ফল।পাকা পেলে রয়েছে মেথানোর নামে মেথানুল নামক একটি উপাদান যেটি ব্লাড সুগার কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেল শরবত করে খেলে হবে না ডায়াবেটিস রোগীরা পাকা বেল এমনিতেই খাবেন তাহলে ভালো ফল পাবেন।
  •  এনার্জি বাড়াতে বেলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।বেল মেটাবোলিক স্পিড বৃদ্ধি করে থাকে।
  •  বেলে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে 
  •  সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে রোগটি বেল সারায় সেটি হচ্ছে আলসারের সমস্যা। পাকা বেলের শাঁসে থাকা ফাইবার আলসারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত প্রতিদিন সকালে আপনারা বেলের শরবত বা এমনিতেই পাকা বেল খেতে পারেন।

বেল পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই যেমন রয়েছে তেমনি বেল পাতার খাওয়ারও কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। ছোট্ট এই পাতা জটিল অনেক রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা আধুনিক মেডিকেল বিজ্ঞানে প্রমাণিত। ডাইবেটিসের রোগী মোটামুটি সব বাড়িতেই পাওয়া যায় যদিও ডায়াবেটিসের অনেক ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু প্রকৃতিতেই এর সমাধান রয়েছে। চলুন জেনে নেই বেল পাতার কিছু উপকারিতা।
 বেলপাতা খাওয়ার উপকারিতা 
  1.  বেল পাতায় থাকা এন্টি ডায়াবেটিক উপাদান রক্তে থাকা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ব্লাড  সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বলা হয় প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বেলপাতা বা বেল পাতার রস খেলে ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে 
  2.  বেল পাতা খাবারকে হজম করতে সাহায্য করে পেটকে রাখে হালকা ও আরামদায়ক।
  3.  সকালে বেলপাতা বা বেল পাতার রস খেলে পেট থাকে ঠান্ডা ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  4.  আমরা সবাই জানি লিভার হল আমাদের শরীরের ফিল্টার। প্রায় প্রতিদিন আমরা জাঙ্ক ফুড ফাস্টফুড তেলে ভাজা খাবার ও ওষুধ খেয়ে আমাদের লিভারের ক্ষতি করছি। বেল পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান লিভারের টক্সিন দূর করে ও এবং কার্যক্ষমতা কে বাড়িয়ে দেয়।
  5.  নিয়মিত বেলপাতা বা  বেল পাতার রস খেলে ফ্যাটি লিভার ও ইনফ্লামেশন এর ঝুঁকি কমে যায়।
  6.  শীতকাল বা বর্ষাকাল এলেই অনেকের ঠান্ডা লেগে যায় বা গলা বন্ধ হয়ে আসে। তাহলে আপনি বেলপাতা হালকা গরম রস খেতে শুরু করুন এতে করে গলার কফ বেরিয়ে যাবে গলা পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক কফ সিরাপ এর মত কাজ করে।
  7.  বেল পাতা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে যার ফলে রক্ত হয় পরিষ্কার এবং এর প্রভাব আমরা দেখতে পাই আমাদের ত্বকে। ব্রণ,রেশ এবং এলার্জির মতো স্কিন ডিজিজ গুলো কমে যায়।
  8.  বেল পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস  যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়।
  9.  বাচ্চা কিংবা বড় পেট খারাপ হলেই আতঙ্কে ভোগে। আয়ুর্বেদের মতে, বেলপাতা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া কমাতে দারুন কার্যকর।
  10.  বেল পাতায় অবস্থিত এন্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্টস পেটের জীবাণু ধ্বংস করে এবং মল পাতলা হওয়া বন্ধ করে 
  11.  বেল বা বেল পাতার রস শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে ভাইরাল ফিবার বা হালকা জ্বর হলে এর রস খেলে শরীর ঠান্ডা হয় এবং ধীরে ধীরে জ্বর কমে যায়।
  12.  পাতা মুখের জীবাণুতে ধ্বংস করে দেয়। এটি চিবালে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় মাড়ি শক্ত হয় এবং দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।
  13.  বেলপাতা বেটে লাগালে ফোঁড়া, একজিমা ও চুলকানির মতো সমস্যাও দূর হয়ে যায়। বেল পাতায় থাকা প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক উপাদান চামড়ার সমস্যা কমিয়ে দেয়।
  14.  যাদের প্রচুর ঘাম হয় এবং ঘামে দুর্গন্ধ হয় বেল পাতা সেই দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে 
 বেল পাতার অপকারিতা
অনেকেই মনে করেন বেলের পাতা যৌন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বা পুরুষত্বহীনতা তৈরি হতে পারে বেলের পাতা খেলে। যদিও এর বৈজ্ঞানিক কোন প্রমাণ নেই বা স্ট্রং কোন এভিডেন্স নেই। বেলের পাতা নিয়মিত ও অধিক পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। বেলের পাতা খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে আপনি যদি সে নিয়ম মেনে খান তাহলে কোন সমস্যা নেই। বেলের পাতা একটি নির্দিষ্ট ডোজে খাওয়া উচিত এক চামচের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে আপনি এক চামচ তুলসীপাতার রস এক চামচ বেলপাতার রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

 বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম

 বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনেছি তবে বেলের অপকারিতা চেয়ে উপকারিতাই বেশি। বেলের অপকারিতার কারণ হচ্ছে বেল সঠিক নিয়মে না খাওয়া। আমরা অনেকেই বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময় জানিনা আর তাই অনেকেই পরিমাণ এর চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণ বেল খেয়ে থাকেন আর এতে করে দেখা দেয় শরীরের নানাবিধ সমস্যা। চলুন এবার জেনে নেই বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময়।
  1.  বেল গুঁড়ো বা পাউডার করে প্রতিদিন এক চামচ পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন এতে করে গ্যাস্ট্রিক বা হজমের সমস্যা দূর হবে।
  2.  ছোট কচি বেল কেটে শূট করে রেখে সেই শূট ৪/৫ টুকরো রাতের বেলা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকাল বেলা লাল রংয়ের পানি বের হবে সেই পানিটা পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে 
  3.  এছাড়া বেল ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে ভিতরে শাঁস বের করেও খেতে পারেন
  4.  অনেক বেশিরভাগ মানুষই বেলের শ্বাস শরবত করে খায় এতে করে বেলের আঁশটা বাদ পড়ে যায়। কিন্তু যে কোন ফল শরবত করে খাওয়ার চাইতে ফলের শ্বাস বা মাংসল অংশ খাওয়া ভালো এতে করে ফাইবারের অংশটা থেকে যায়।
  5.  বেলের শরবত করে খেতে পারেন তবে চিনি ছাড়া এবং বেলের ভিতরে থাকা বিচি ফেলে দিয়ে ভেতরে থাকা শাঁস এর সাথে  অল্প পানি মিশিয়ে এতে করে বেশি উপকার পাবেন।
  6.  পুরুষেরা বেলপাতা রস সরাসরি না খেয়ে এক চা চামচ বেলপাতার রস সাথে এক চা চামচ তুলসী পাতার রস ও সামান্য মধু মিশিয়ে খেতে পারেন
  7.  বেলপাতা ধুয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন এতে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।তাছাড়া বেলপাতা বেটে লাগাতে ফোঁড়া, একজিমা চুলকানি দূর হয়।
  8.  ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময়ে কাঁচা বেল সেদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে 
  9.  দুপুরের খাবারের পর থেকে রাতের খাবারের আগ পর্যন্ত বেল খাওয়ার উপযুক্ত সময় তবে পাকা বেল থেকে কাঁচা বেল বেশি উপকারী এবং এটি সিদ্ধ করে খেতে পারে।

 আমাশায় বেলের উপকারিতা

 কচি বেল টুকরো টুকরো করে কেটে এটি দিয়ে বেল শূট বানানো হয়। এটি একটি মহা ঔষধ। ঔষধি ফল পাকলে সেই ফল পড়ে যায়। এই বেল পুড়ে যায়। বেল কেটে টুকরো টুকরো করে কেটে শুকিয়ে বেল শূট তৈরি করা হয়। আর এই বেল শূট সন্ধ্যায় ভিজিয়ে সকালে সেই  পানি পান করলে তার আমার আমাশয় ভালো হয়ে যায় পেটের সমস্যা দূর হয়। পেটে কৃমি দূর হয়। পেটের ভেতর নাড়ির যে প্রতিবন্ধকতা সেটা চলে যায় অর্থাৎ পেটের ভিতরে সব সমস্যা দূর হয়ে যায় যদি কচি বেলটা খেতে পারেন।

বেল নরম ও সহজ পাঠ্য এতে থাকা ফাইবার ও ল্যাক্টেটিভ উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বেল পেটের জীবাণু নাশক এটি আমাশয় ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া পাতলা পায়খানা দ্রুত কমায় ও অন্ত্র পরিষ্কার রাখে। বেলে থাকা উপকারী এনজাইম ও তিক্ত উপাদান পেটের গ্যাস অম্বল বদ হজম কমাতে সাহায্য করে।বেল ঠান্ডা রাখে হজমের রস বাড়ায় ও দ্রুত হজমে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে বেল পেটের আলসার নিরাময় সহায়ক পেটের ঝিল্লি সুরক্ষিত রাখে।

 আরো পড়ুন :পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম 

 কদবেলের উপকারিতা গুলো কি কি?

 কদবেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার জন্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে। কদবেল এর সব থেকে বড় ব্যবহার হলো কিডনি সমস্যার ওষুধ তৈরিতে। চিকিৎসার পাশাপাশি থাই ও মায়ানমারের নারীরা কদবেলের শক্ত অংশটি কে প্রসাধনী বানানোর কাজে ব্যবহার করে। প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলে ১৩৪ ক্যালোরি  ৭ গ্রাম প্রোটিন ৪ গ্রাম ফ্যাট ২ গ্রাম খনিজ ৫ গ্রাম ফাইবার ১৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ১৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে এছাড়াও আছে অনেক উপকারী উপাদান।
কদবেলের উপকারিতা 
  •  কদবেলের ডায়রিয়া প্রতিরোধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ইকোলাই সিগেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট পাকস্থলীর সংক্রমণ বন্ধ করতে পারে।
  • কদবেল এর অপরিপক্ক ফল অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করা বন্ধ করতে পারে।
  •  আয়ুর্বেদ ও লোকজ ওষুধে বহু শতাব্দি ধরে ডায়রিয়ার জন্য কদবেল ব্যবহার করা হয়।
  •  এতে থাকা রাসায়নিক উপাদান থায়ামিন ও রাইবোফ্লোবিন শরীর পরিষ্কার করতে সাহায্য করে
  •  ফাইবার সামগ্রী ও রেচক গুণের কারণে কদবেল বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর 
  •  কদবেলে এমন যৌগ রয়েছে যা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাসিলাস ও সাবটিলিস স্টেফিলোকোস অরিয়াস ইকোলাই সিউডোমোনাস অ্যারোগিনসার ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর 
  •  হাঁপানের বিরুদ্ধে ও কার্যকর কদবেল আয়ুর্বেদে হাঁপানির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের কদবেল পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয়।
  •  কদবেলের নির্যাস স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বিস্তার বন্ধ করতে পারে।লুপেওর,ইউজেন,সিট্রাল, সিনিউল এবং ডিলিমোনিনের মত ফাইটোকেমিক্যাল গুলো ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ এর মত কাজ করে।
  • কদবেলে আলসার নিরাময়ের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে কদবেলের ট্যানিক ও ফ্যানোলিক উপাদান রয়েছে যা মূলত উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর তাই পাইছ আনসারের চিকিৎসায় এতে সহায়ক।
  •  কদবেল একটি মূত্রবর্ধক যা কিডনি কে সাহায্য করে প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম অপসারণ করতে। ফলে রক্তচাপ কমে রক্তশিরা ও ধমনী থেকে চাপ কমে।
  •  শরীরের কার্বোহাইড্রেট  প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ করে কদবেল ডায়াবেটিসের অগ্রগতি ধীর করে দেয়। এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর চিনির বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক।

 বেল খেলে কি ওজন বাড়ে?

 বেলে থাকা ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ধরা রাখার ফলে অতিরিক্ত খাবার প্রবণতা কম থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।একটি মাঝারি আকারের বেলে ক্যালরি ৯২, কার্বোহাইড্রেট ২৩.৬ গ্রাম, সুগার ১৩ গ্রাম ফাইবার ৫ গ্রাম। তবে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। অনেকে চিনি ছাড়া বেল খেতে পারেনা কারণ এতে স্বাদ পাওয়া যায় না তাই অনেকে চিনি মিশিয়ে খান।তবে চিনি মিশিয়ে খেলে আপনার ওজন বাড়বে।

 আপনি যদি ফলের শরবতের সাথে চিনি মিশিয়ে খান এতে করে সুগার স্পাইক হবে। বেল নয় যে কোন ফলের জুস তৈরি করার সময় ফলের ফাইবার ফেলে দেওয়া ও চিনি যোগ করা হয় যা ব্লাডে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তবে প্রয়োজনের অধিক আপনি যদি বেলের শরবত খান সেক্ষেত্রে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। বেলে এ রয়েছে ফাইবার যা আমাদের পেট কে দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখে অতিরিক্ত খাবার প্রবণতা কমিয়ে দেয় এতে করে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে। তবে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ চিনে মেশানো বেলের শরবত খান সেক্ষেত্রে ওজন বাড়বে।

 আরো পড়ুন :কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও এর উপকারিতা 

শেষ কথা :বেল উপকারিতা ও অপকারিতা

 বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছি।বেল ও বেল পাতার উপকারের কথা আমরা অনেকেই জানিনা আসলে প্রকৃতির গাছপালার মধ্যেই লুকিয়ে আছে অসংখ্য সমাধান। প্রাচীন সময় থেকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে জায়গা করে নিয়েছে বেল এর ঔষধি গুণের জন্য। বেল কাঁচা পাকা দুই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। এছাড়াও বেলপাতা ও শরীরের জন্য বেশ উপকারী।বেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। কিন্তু প্রয়োজনের অধিক পরিমাণে বেল খেয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে নানাবিদ সমস্যা তৈরি হতে পারে।

আপনি যদি নিয়ম না মেনে একটা না বেল খেয়ে যান সে ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে তাই একটানা না খেয়ে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার বেল খাওয়া শুরু করতে পারেন। অনেকের মতে অতিরিক্ত পরিমাণ বেল খাওয়াতে পুরুষদের ক্ষেত্রে কিছু অপকারিতা রয়েছে সে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বেল খান। প্রিয় পাঠক আপনারা যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন আশা করছি উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিত জন্য নিকট শেয়ার করার জন্য অনুরোধ রইল।

 
















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Soyon
    Soyon ২০ জুলাই, ২০২৫ এ ৮:৫৮ AM

    👌🏽👌🏽

  • profile.me
    profile.me ২১ জুলাই, ২০২৫ এ ৩:৪৫ AM

    বেল খাওয়ার ত অনেক উপকারিতা বুঝলাম। যদি সম্ভব হয় মাথার চুল পড়া রোধে করণীয় কি তা নিয়ে যদি একটা আর্টিকেল প্রকাশ করতেন তাহলে আমার জন্য ভালো হত। চুল যেভাবে পরতেছি তাতে আর কিছুদিনের মধ্যে ইমোজির 😊😊 মত হয়ে যাব। 🙄🙄

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Growwithnazmin এর'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url